পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর চা বাগানে

হবিগঞ্জ জেলার চা বাগানের লেকগুলো এখন পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর। প্রতি শীতেই এসময় লেকগুলোতে ভিড় জমাতে দেখা যায় এসব পরিযায়ীদের।

জেলার চুনারুঘাট, মাধবপুর, নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে লেক রয়েছে। চারদিকে টিলায় চা গাছ, মাঝখানে লেক। দেখতে মনোমুগ্ধকর। শীতে এসব নির্জন লেকে আসছে পরিযায়ী পাখিরা। লেকের ছোট মাছ শিকার করে খেয়ে জীবন ধারণ করছে। আবার শীত শেষে ফিরে যাচ্ছে আপন ঠিকানায়।

এসব পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের কড়াকড়ি রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির লোক এসব পাখি শিকারে তৎপর।

চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ বাগানে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চারদিকে চা-গাছ। মাঝখানে ছোট বড় ৬টি লেক।  এসব জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিচ্ছে প্রচুর ছোট মাছ। এখানে পরিযায়ী পাখিরা পানিতে গা ভাসিয়ে বিভিন্ন পোকামাকড় ও ছোট মাছ খেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে অবস্থান করছে। হাজারো পাখির কলরবে মুখরিত হচ্ছে প্রতিটি দিন। তা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কেউ যাতে পাখিদের বিরক্ত করতে না পারে সেদিক দিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ খুবই সজাগ।

এ বাগানের বাসিন্দা পরিবেশ প্রেমিক ডা. অক্ষয় কুমার বাবুল বলেন, লাল শাপলায় রঙীন এসব লেকে শীত আসলেই অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে। চা-গাছ বেষ্টিত লেকের পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে স্থানীয়দের। সত্যি এ বিষয়টি অতি আনন্দের। নিজ চোখে না দেখলে কারো বিশ্বাস হবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা এসএম সুমন মিয়া জানান, প্রতি বছরই অতিথি পাখিদের আগমন হচ্ছে লেকগুলোতে।  লেকের চারদিকে চা বাগান। আর লেকের পানিতে ফুটেছে লাল শাপলা। এ নান্দনিক দৃশ্য যে কোন ব্যক্তিকে মুগ্ধ করবে।

তিনি বলেন, লেকের পাড়ে নীরবে বসে থাকলে পাখিদের কিচির মিচির শব্দ শোনা যাবে। তবে লোকজনের আভাস পেলেই পাখিরা লেক থেকে আকাশের দিকে ছুটে যায়। এ দৃশ্য অবলোকন সে আরেক মজার অনুভূতি।

বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, লেকগুলোতে এসব পাখি আসে শীত মৌসুমে। পাখি শিকার হচ্ছে না। তবে কেউ যাতে ওই পাখিদের কোন প্রকার বিরক্ত না করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাদা খসরু বলেন, অতিথি পাখি শীত নিবারণের জন্য অসহায় অবস্থায় আমাদের দেশে আসে। তারা সাধারণত লেক (ঝিল) ও বিলের এর মধ্যে নিরব স্থানগুলোতে থাকে।

তিনি বলেন, এ জেলায় লেকের সংখ্যা অর্ধশতাধিক আর সরকারি বিলের সংখ্যা ৬৭৫টি। এগুলোতে প্রচুর মাছ জন্মায়। পাখিরা পোকামাকড়ের সাথে মাছও খাচ্ছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, অতিথি পাখি মারা যাবে না। এটি আইনগত অপরাধ। তাদেরকে কোনো ভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। তারা যাতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে, সেদিকে সবার নজর রাখা প্রয়োজন।

হবিগঞ্জ বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জার রায়হান মাহমুদ জানান, দেশের শ্রেষ্ঠ পাখি দর্শনের স্থান হবিগঞ্জের রেমা ও কালেঙ্গা। এখানে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখিও বসবাস করছে।  আবার শীতে বিদেশ থেকে দলবেঁধে অতিথি পাখিরাও আসছে। এদের কোনোভাবেই বিরক্ত করা যাবে না।