চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ঘোষণার বাইরে ফি নিলে ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন বলেন, কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকারি নির্ধারিত টিউশন ফি ও প্রতি মাসের নির্ধারিত বেতনের চেয়ে অতিরিক্ত কোন ফি আদায় করা যাবে না। যদি চসিকের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি নির্দেশনার বাইরে জোরপূর্বক কোন ফি আদায় করছে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আয় উপার্জন কমে যাওয়ায় কোন অভিভাবকের যদি সন্তানের বেতন দিতে সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে তা কিস্তিতে পরিশোধ এবং মওকুফের বিশেষ ব্যবস্থা নিবে কর্পোরেশেন। নগরবাসীকে এ নিয়ে কোন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রশাসক। তিনি আজ (১.১২.২০২০) মঙ্গলবার বিকেলে ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্্রথম গভর্নিং বডির সভায় একথা বলেন।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন তাঁর ‘ক্যারাভান’ কর্মসূচি স্থগিত করে নগরীর প্রতি ওয়ার্ডে জনসমাবেশ এড়িয়ে সুরক্ষা নিয়ে জনসাধারনের সাথে মতবিনিময়ে যাচ্ছেন।
স্কুল গভর্নিং কমিটি ও ওয়ার্ডের মতবিনিময় সভায় কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, রাজনীতিক আহমদ ইলিয়াছ, পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, স্থানীয় সমাজ সেবক মো.এরশাদ, নাঈম রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রশাসক পূর্ব বাকলিয়া এলাকার আবদুল লতিফ হাট খোলা ব্রিজের পাশের সড়কের আশ-পাশ হেঁটে পরিদর্শনকালে জনসাধারণের মাঝে করোনা সচেতনতায় মাস্ক ও সাবান বিতরণ করেন। এসময় আবদুল লতিফ হাট খোলা ব্রিজের পাশে খালের কচুরিপানা দেখে তা, আগামী শুক্রবার থেকে দ্রুততার সাথে কর্পোরশেনের পরিচ্ছনন্ন কর্মীদের পরিস্কারের নির্দেশ দিয়ে, তিনি ওই দিন এ্ই কার্যক্রম পরিদর্শনে আসবেন বলে জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আরো বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর অধিবাসীরা সামাজিক অনুষ্ঠানাদির নামে বিয়ে-শাদী, মেজবান, আঁকিকা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে জনসমাগম ঘটিয়ে নিজেরা স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি অর্থের অপচয় করেন। আর সন্তানের পড়াশোনার প্রশ্নে স্কুল-কলেজের বেতনের বেলায় ওনাদের অভাব অনটন শুরু হয়ে যায়। একজন সচেতন অভিভাবক হলে, এই মানসিকতা কাম্য হতে পারে না। তিনি বলেন কর্পোরেশনের ১৭ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল এখনো বকেয়া। ঠিকাদাদের পাওনা আছে ৮’শ ৫০ কোটি টাকা। আর এই পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাসে খরচ হয় ২ লাখ ৯’শ ৭৪টাকা। এভাবে কর্পোরেশনের শিক্ষাখাতে বছরে ভর্তুকি দেয়া লাগে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারির বেতন খাতে ব্যয় হয় ১৮ কোটি টাকা। কর্পোরেশনের মাসে আয় হলো ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকা। বাকি টাকা আসে কিভাবে! অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এখনো ৩১৪ জনের তালিকা আমার হাতে আছে। যার মধ্যে কিছু কিছু টাকা পরিশোধ করেছি। এর মধ্যে ৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা প্রাপ্য টাকা হাতে পাননি।
সামগ্রিক এই পরিস্থিতির মধ্যে কর্পোরেশনকে তাঁর সার্বিক সেবাকার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। কর্পোরেশন একটি সেবামূলক ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। দায়িত্বের বাইরে গিয়ে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদকালের পরে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কর্পোরেশন আত্মীকরণ করেছে তা এখন,গলার কাঁটা। কারণ কর্পোরেশনের বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মচারি এমপিওভুক্ত নন। তাদের পেছনে চসিকের বেতন ভাত ও আনুসাঙ্গিক যে খরচ তা ব্যয় বহুল। এখন যদি সরকারি নির্ধারিত টিউশন ফি সাড়ে ৩ হাজার টাকা ও মাসের ৩৫০ টাকা বেতন দিতে অভিভাবকরা অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে কর্পোরেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলবে কেমনে? এই পরিস্থতিতে চসিক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে,পৌরকার বৃদ্ধি করলে,তা নগরবাসীর জন্য বোঝা হয়ে যাবে। তাই অভিভাবকরা সন্তানদের সুন্দর-সুনিশ্চিত ভবিষৎ নির্মাণের স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে শিক্ষার পিছনে প্রয়োজনীয় ব্যয় অব্যাহত রাখবেন এটা আমার প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে আপনাদের যে কোন প্রয়োজন ও সহায়তায় প্রশাসক হিসেবে আমি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আপনাদের সাথে থাকবে। প্রশাসক বেতন প্রদানের বিষয়ে নিয়ে কোন ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সরাসরি তার সাথে ফোনে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান। এ নিয়ে অহেতুক রাস্তা-ঘাটে গোলযোগ বা গসিপের প্রয়োজন নাই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসক হিসেবে আমি সবসময় নগরবাসীর সুখ দুঃখে পাশে থাকবো।