হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিরল প্রজাতির “তক্ষক” জব্দ

‘হাঁস পা’গুলোর দাম খুব চড়া। ইঞ্চির মাপ ধরা হয় চোখ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত। আকাশছোঁয় দাম, কিন্তু সন্ধান পাওয়া খুবই দুষ্কর। বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে প্রাণীটি। ‘হাঁস পা’ তক্ষকের চাহিদা খুব। দেড়শ গ্রাম হলে বিক্রি করা যাবে ‘হাজার কোটি’ টাকা।

মির্জা ইমতিয়াজ:: হাজার কোটি টাকা মূল্যের হাঁসের মতো পা ওয়ালা বিরল প্রজাতির “তক্ষক” চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে জব্দ করেছে পুলিশ। এসময় এক পাচারকারী আটক করা হয়েছে।

সহকারি পুলিশ কমিশনার (কর্ণফুলি জোন) মো. ইয়াসির আরাফাত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোপন খবরের ভিক্তিতে বন্য প্রাণী তক্ষক পাচারকালে আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে কর্ণফুলির চেকপোষ্ট থেকে অভিযান চালিয়ে এক ব্যাক্তিকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রক্ষিত অবস্থায় একটি বিরল প্রজাতির তক্ষক উদ্ধার করা হয়। যার ওজন অনুমান ১৫০ গ্রামের বেশি এবং লম্বা আনুমানিক ১৪ ইঞ্চি বলে জানান।

তক্ষকসহ আটক ব্যাক্তির নাম মো. মনিরুল হককে আটক করা হয়। আটক মনিরুল হক জানিয়েছেন- তিনি বান্দরবানে একজনের কাছ থেকে টাকা পেতেন। ওই ব্যক্তি তাকে টাকার পরিবর্তে তক্ষক দিয়েছেন।

ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, মনিরুল হক বান্দরবান থেকে তক্ষকটি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। প্রাণিটি বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মনিরুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ইন্টোরনেট ঘেটে জানা যায় ‘হাঁস পা’গুলোর দাম খুব চড়া। ইঞ্চির মাপ ধরা হয় চোখ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত। ‘মুরগি পা’গুলো ২৫৫ গ্রাম ওজন ও সাড়ে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। ‘বার্মিজটা’র ওজন সাড়ে তিনশ’ গ্রামের নিচে হলে বিক্রির অনুপযুক্ত। জানা যায়, এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের হাতে তক্ষকসহ অনেকেই ধরা পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাণিটির মূল্য অনেক। চা বাগান ও বনবস্তি এলাকার ছেলেদের তক্ষক ধরার কাজে ব্যবহার করত। গত দু’বছরে ছবিটা পাল্টেছে। শহরের বিভিন্ন পেশার মানুষ বনবস্তির ছেলেদের সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে তক্ষক ধরার কাজে ব্যবহার করছে।

আকাশছোঁয় দাম, কিন্তু সন্ধান পাওয়া খুবই দুষ্কর। বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে প্রাণীটি। সাধারণত পিঠের দিক ধূসর। কখনো ধুসর-সবুজ আবার নীলচে ধূসর রঙেরও হয়ে তাকে। শরীরে লাল, সাদা ও ধূসর রঙয়ের ছিট ছিট দাগ থাকে। কিছু তক্ষক আবার রং পাল্টাতে ওস্তাদ। স্থানীয়রা তাদের বলেন বহুরূপী। তক্ষকের মাথা বড়। দৈর্ঘে ১.৬ সেন্টিমিটার থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। ওজন ১৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রজননের সময় ছাড়া স্ত্রী ও পুরুষ তক্ষক একা ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। স্ত্রীরা খুব বেশি হলে দুটি ডিম দেয়। জন্মের সময় ছানা প্রায় নয় সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে ‘হাঁস পা’ তক্ষকের চাহিদা খুব। দেড়শ গ্রাম হলে বিক্রি করা যাবে ‘হাজার কোটি’ টাকা। দেশের যেখানেই থাকুক না কেন সন্ধানে মরিয়া পাচারকারীরা। প্রয়োজনে হেলিকপ্টার পাঠিয়েও সংগ্রহে আপত্তি নেই।

অনেকে তক্ষকের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তক্ষক কেন এত দামী? মূলত এইচআইভি প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় তক্ষকের দেহাংশ ব্যবহার হয়। প্রাণীটির চামড়া দিয়ে বিভিন্ন বিলাসসামগ্রীও তৈরি করা হয়। চীন-তিব্বতে তক্ষকের দেহাংশ দিয়ে তৈরি তেল যৌন ক্ষমতা বর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে তক্ষকের দেহাংশ দিয়ে মাদকও তৈরি হচ্ছে।

পূর্বাঞ্চলের তক্ষক ভুটান অথবা নেপাল হয়ে চীন, তিব্বত, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, অস্ট্রেলিয়ায় পাচার হচ্ছে। তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালোই। তক্ষকের বাসভূমি ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, জাপান, দক্ষিণ-চিন, উত্তর-অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দেড় হাজার প্রজাতির তক্ষক রয়েছে।

উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পুরনো গাছের কোটর অথবা পুরনো কাঠের বাড়িতে টোকে গেকো প্রজাতির তক্ষক বেশি দেখা যায়। মুখের টকটক শব্দই তক্ষকের জন্য কাল। বনবস্তির ছেলেরা প্রাণীটিকে পাকড়াও করে অল্প মূল্যে তক্ষক তুলে দিচ্ছে পাচারকারীদের হাতে। পর্যটকের ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করা পাচারকারীরা তা চড়া দামে বিক্রি করছে।