গার্মেন্টস মেশিনারিজ ব্যবসায়ীকে ডেকে এনে মুক্তিপণ আদায়, গ্রেফতার ৪

বাকলিয়া থানাধীন রসুলবাগ আবাসিক এলাকায় মো. আল মামুন নামে এক গার্মেন্টস মেশিনারিজ ব্যবসায়ীকে ডেকে এনে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ কর্মীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) বাকলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার চারজন হলো- কক্সবাজার জেলার চকরিয়া সাহারবিল মৌলভীপাড়া এলাকার আবু নঈমের ছেলে মো. মামুন (২৩), চান্দগাঁও থানাধীন রাহাত্তারপুল এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ ওয়াহিদ জিহান (২২), কক্সবাজার সদর থানাধীন ঈদগাঁ দক্ষিণ মাইজপাড়া এলাকার আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মো. রমজান (৩৫) ও পটিয়া থানাধীন মাঝিরঘাটা এলাকার নুরুল আজিমের ছেলে মো. আরিফ (২১)।

এদের মধ্যে মো. মামুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী। মো. মামুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী বলে জানা গেছে। গ্রেফতার মো. মামুন রেজাউল হক রুবেলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গার্মেন্টস মেশিনারিজ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মূলহোতা মো. মামুন। মামুন ইয়াবার ব্যবসা ও সেবনের সঙ্গে জড়িত।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মো. আল মামুন নামে এক গার্মেন্টস মেশিনারিজ ব্যবসায়ীকে মেশিনারিজ বিক্রির কথা বলে বাসায় ডেকে এনে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রোববার রিমান্ড শুনানি হবে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে গার্মেন্টস মেশিনারিজ ব্যবসায়ী মো. আল মামুনকে ফোন করে কিছু গার্মেন্টস মেশিনারিজ বিক্রি করতে চায় বলে জানায় এ চক্রের একজন সদস্য। মেশিনারিজ আগে দেখতে চাইলে আল মামুনকে রসুলবাগ আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১৮৭ বাড়ির একটি বাসায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে গেলে ব্যবসায়ী মো. আল মামুনকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় তারা।

ব্যবসায়ী মো. আল মামুনকে মারধর করে তার কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মারধরের এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী মো. আল মামুনের পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল অপহরণকারীদের দিয়ে দেন তিনি। আরও টাকার জন্য মারধর করলে এক বন্ধুর কাছ থেকে বিকাশে ১০ হাজার টাকা অপহরণকারীদের একজনের কাছে পাঠান। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী মো. আল মামুনের সামনে ইয়াবা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম রেখে ছবি তুলে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ভয় দেখায় তারা।

তাদের জিম্মিদশা থেকে কৌশলে বেরিয়ে এসে পথচারী ও স্থানীয়দের সহায়তা চান ব্যবসায়ী মো. আল মামুন। পরে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশকে বিষয়টি জানান তিনি।

ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে ওই বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরে অভিযুক্ত আসামিদের শনাক্ত করে বাকলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার মো. মামুন ওই বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে নানা অপকর্ম করতেন। গার্মেন্টস মেশিনারিজ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মূলহোতাও মামুন। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাদের সঙ্গে আরও কে কে জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার মো. মামুন দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার ব্যবসা করে আসছে। তিনি নিজেও সেবন করেন। ইয়াবা সেবনের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

মামুনের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।