হংকং নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে চীন তাদের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সম্প্রতি এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডার একটি জোট চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় চীন তার কঠোর ভর্ৎসনা করেছে।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ দেশ মিলে গঠিত ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’–এর পক্ষ থেকে চীনের সমালোচনা করা হয়। হংকংয়ে নির্বাচিত পাঁচ রাজনীতিককে অযোগ্য ঘোষণার জন্য চীন যে নিয়ম করেছে, তার সমালোচনাও করা হয়েছে। তারা বেইজিংকে এ ধরনের আইন প্রত্যাহার করতে বলেছে।
উল্লেখ্য, হংকংয়ে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত রাজনীতিবিদদের বরখাস্ত করার একটি প্রস্তাব সম্প্রতি পাস করেছে চীন। চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি কর্তৃক গৃহীত নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইনপ্রণেতারা যদি হংকংয়ের স্বাধীনতা সমর্থন করেন, চীনের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করেন এবং বিদেশি বাহিনীকে শহরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলেন, তবে তাদের জাতীয় সুরক্ষার হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বেইজিং চারজন রাজনীতিবিদকে অপসারণের জন্য বাধ্য করার পরে গণতন্ত্রপন্থী আইনপ্রণেতারা গণপদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। চারজন সংসদ সদস্যকে বরখাস্ত করার বিষয়টি অনেকে হংকংয়ের স্বাধীনতায় বাধা প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছে। অবশ্য বেইজিং তা অস্বীকার করেছে।
এদিকে, হংকং বিষয়ে ফাইভ আইস অ্যালায়েন্সের সমালোচনা বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন। তিনি তাদের চীনের বিষয় থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘তাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে, তা না হলে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনারা কখনো সমস্যা তৈরি করে না বা কোনো কিছুর ভয় করে না। তাদের ৫টা না ১০টা চোখ, তা কোনো বিষয় নয়।’
ফাইভ আইস গ্রুপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীনের প্রতি ওই চারজন আইনপ্রণেতাকে তাঁদের পদে রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, বেইজিং তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। এ ছাড়া হংকংয়ের মানুষের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে।
ফাইভ আইস মূলত পাঁচটি দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের একটি জোট, যা স্নায়ু যুদ্ধের সময় গঠন করা হয়েছিল।
এর আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হংকং বিষয়ে বলেছিল, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কোনো হুমকি বা চাপের চেষ্টা ব্যর্থ হবে।
সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের এক দেশ দুই নীতির আওতায় হংকং অন্তত ৫০ বছরের জন্য স্বাধীনতা ভোগ করবে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো চীনের ওপর ন্যস্ত থাকলেও হংকং এই স্বাধীনতা ভোগ করবে স্বায়ত্তশাসনের পথ ধরে।
কিন্তু সম্প্রতি গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে—এমন ব্যক্তিদের চীন চাইলে বিচারের জন্য মূল ভূমিতে হস্তান্তর করার বিধান রেখে একটি আইন পাস করে হংকং সরকার। অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন নামে পরিচিত এ আইনকে হংকংয়ের নাগরিকেরা চীনের আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসেবে দেখছে।