১৪ হাজার কি.মির বেশি পথ পাড়ি দিয়ে রূপপুরে পরমাণু চুল্লিপাত্র

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র-আরএনপিপি) প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলের (পরমাণু চুল্লিপাত্র) মূল যন্ত্রাংশ কন্সট্রাকশন সাইটে (প্রকল্পে) পৌঁছেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হার্ট বা মূলযন্ত্র এই রিঅ্যাক্টর।
এ যন্ত্রাংশ রাশিয়া থেকে নির্মাণ করে আনা হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণবিক শক্তি করপোরেশেনের (রোসাটম) প্রকৌশল শাখা জেএসসিএএসই।

গত ১০ নভেম্বর একটি বিশেষ জাহাজে ভিভিইআর ১২০০ রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল ও স্টিম জেনারেটর মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পদ্মা নদীর পার্শ্ববর্তী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্সট্রাকশন সাইটের পাশে নবনির্মিত নদীবন্দরে পোঁছায়। নৌবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় এটি মংলা বন্দর থেকে রূপপুরে আনা হয়।

রাশিয়া থেকে আসতে এই ভারী যন্ত্রাংশগুলোর (রিয়াক্টর ভেসেল ও স্টিম জেনারেটরের ওজন যথাক্রমে ৩৩৩ দশমিক ৬ টন ও ৩৪০ টন) পরিবহনে প্রায় আড়াই মাস লেগেছে। নদী ও সমুদ্রপথ মিলিয়ে এগুলো প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে রূপপুর প্রকল্পে আসে।

রিয়াক্টর ভেসেল ও স্টিম জেনারেটরটি এইএম টেকনোলোজির (রোসাটমের যন্ত্র প্রস্তুতকারী শাখা–এটোমএনারগোম্যাস জেএসসি) ভল্গোদোনস্ক শাখার এটোমম্যাস কারখানায় প্রস্তুত করা হয়েছে। এটোমম্যাস কারখানা থেকে এগুলোকে ট্রাকে করে ভল্গোদোনস্ক শহরের তিসিম্লিয়ানস্কি ওয়াটার রিজার্ভয়ারের বার্থে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে এগুলোকে জলপথে নভরোসিস্কে নেওয়া হয়। নভরোসিস্ক বন্দর থেকে এগুলোকে কৃষ্ণ সাগর ও সুয়েজ খাল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আনা হয়। এই কঠিন পথের শেষে এগুলোকে পদ্মা নদী দিয়ে নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্সট্রাকশন সাইটে নিয়ে যাওয়া হয়।

রিয়াক্টর একটি সিলিন্ডার আকৃতির খাড়াপাত্র, এর তল উপবৃত্তাকার, এর মধ্যে মূল এবং আভ্যন্তরীণ অংশ থাকে। স্টিম জেনারেটর একটি সিলিন্ডার আকৃতির পাত্র এবং এর দুইটি উপবৃত্তাকার তল রয়েছে। এটির মাঝে কুল্যান্ট সাপ্লাই ও রিমুভ করার কালেক্টর থাকে, উপরের অংশে একটি স্টিম স্পেস থাকে এবং নিচের অংশে ১১ হাজার স্টেইনলেস টিউবের (প্রায় ১৪৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার) তৈরি একটি হিট এক্সচেঞ্জ তল থাকে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার নকশা অনুযায়ী নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি ২০১১ সালে রাশিয়া–বাংলাদেশ আন্ত:রাষ্ট্রীয় ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।