হেফাজতের কাউন্সিলকে ঘিরে ব্যারিস্টার আনিস এর ব্যাপক তোড়জোড়

কাউন্সিলকে ঘিরে হেফাজত নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে হাটাহাজারী উপজেলার সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছেন।

হেফাজতের সম্মেলন ঘিরে আয়োজিত বিভিন্ন সভায় সংসদ সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সংগঠনটির মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি।

শনিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা হেফাজত মহাসচিব অল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ, সহযোগী পরিচালক মাওলানা ইয়াহিয়া, জ্যেষ্ঠ মুহাদ্দিস মুফতি জসিম উদ্দীন।

এছাড়াও ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্যাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাটহাজারী সার্কেল আবদুল্লাহ-আল-মাসুম, হাটহাজরী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী সৈয়দ মঞ্জুরুল আলম, হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ মাসুদ আলমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তা।

সম্মেলনের বিষয়ে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, এটা হেফাজতের কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মতবিনিময় সভা ঠিক বলা যাবে না। এটি এমপি স্যারের পূর্বনির্ধারিত একটি দাওয়াত। যেখানে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরাও আমন্ত্রিত ছিলেন।

শনিবার রাত ৯টার দিকে হাটাহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ আলম জানান, হেফাজতের সম্মেলনে যাতে কোনো পক্ষ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা বেশ তৎপর আছি। আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারে বেশ সজাগ রয়েছি।

যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও কাজ করছে।

সম্মেলনের নিরাপত্তার স্বার্থে মাদ্রাসার বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে টহল পুলিশের সঙ্গে তিন স্তরের নিরাপত্তার বলয় থাকবে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, নবী ও রাসূলের অবমাননা, নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে ২০১০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে যাত্রা শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তাদের বিরোধিতায় নেমে আলোচনায় উঠে আসে হেফাজতে ইসলাম। শুরু থেকেই সংগঠনটির আমীর ছিলেন আল্লামা শফী। বেশ কয়েক বছর ধরে আল্লামা শফীর উত্তরসূরি হওয়ার দ্বন্দ্ব চলছিল মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম জুনাইদ ও শফীর ছেলে আনাস মাদানীর মধ্যে।

এর জের ধরে গত ১৭ জুন সহকারী পরিচালকের পদ হারান বাবুনগরী। এর কিছুদিন পর মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হলে ১৫ সেপ্টেম্বরে আকস্মিকভাবে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে মাদ্রাসার মধ্যেই। এ সময় মাদ্রাসার প্রধান ফটক লাগিয়ে দিয়ে মাদ্রাসার মধ্যে ব্যাপক ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার শূরা কমিটি বৈঠকে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।

ওই দিনই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শফীকে চটগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান আহমদ শফী।