২ হাজার ৫৫ টন ‘আলু বীজ’ ছাড়পত্র পেয়েছে

নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ২ হাজার ৫৫ টন ‘বীজ আলু’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। ১-১১ নভেম্বর পর্যন্ত ৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এসব আলু এসেছে।

এর মধ্যে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের তানভীর ট্রেডার্স, ঢাকার মালিক অ্যান্ড কোং, কৃষাণ সিড, সাথি এন্টারপ্রাইজ, বিয়ন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি ইত্যাদি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘বীজ আলু’ আমদানির জন্য ঢাকা থেকে আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১ নভেম্বর থেকে আমরা সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ‘বীজ আলু’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র ইস্যু করছি। মূলত ৪০ ফুট দীর্ঘ রেফার (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) কনটেইনারে এসব আলু এসেছে। পাইপলাইনে আরও বীজ আলুর চালান আছে।

তিনি জানান, যেহেতু এখন বাজারে আলুর সংকট চলছে তাই কৃষকেরা আলু চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবে বাজারে আলু বীজের চাহিদা বাড়ছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে বীজের আলুর ছাড়পত্র দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, বীজের আলু যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনলোড, শুল্কায়ন ও ডেলিভারি দেওয়া যায় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আলু বীজ বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (সিডিপি ক্রপস) মো. ইব্রাহিম হোসেন জানান, সরকারি পর্যায়ে নির্ধারিত দামে মানসম্পন্ন বীজ আলু ডিলারদের মাধ্যমে চাষিদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। এর বাইরে চাষিদের নিজস্ব বীজ আলুও জমিতে লাগানো হচ্ছে। প্রতিবছর বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর বীজ আলু আমদানি করা হয়ে থাকে।

মেহেরপুর থেকে টেলিফোনে তিনি বলেন, সাড়ে ৭ লাখ টন আলু বীজ চাষিরা ব্যবহার করে। সরকারি-বেসকারি মিলে এর ৭-১০ শতাংশ আলু বীজ সরবরাহ করা যায়। বাকি আলু বীজ চাষিরা নিজেরা স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করে, হিমাগারে রাখে। এগুলো নিম্নমানের বীজ। উৎপাদন কম হয়। আমরা সরকারিভাবে মানসম্পন্ন আলু বীজ দিয়ে থাকি।

শীতপ্রধান উত্তরবঙ্গে বীজ আলু ভালো হয়। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, শেরপুর, জামালপুরে বীজ আলু ভালো হয়, মাটি ভালো। মুন্সীগঞ্জেও বীজ আলু হয়। বীজ আলুর মূল সমস্যা রোগবালাই। মেহেরপুরে খাবার আলু উৎপাদন হয় প্রচুর, বীজ করার জন্য উপযোগী নয়। যেখানে খাবার আলু উৎপাদন হয় সেখানকার আশপাশে বীজ আলু হয় না। খাবার আলু থেকে বীজ আলুতে রোগ-জীবাণু চলে আসতে পারে। সেখানে আগাম রোপণ করা যায় না।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশে বছরে ১ কোটি টন আলু উৎপাদন হয়। এর বিপরীতে চাহিদা ৭০ লাখ টন। ৩০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকে। চাষিরা ন্যায্যমূল্য পায় না। আমরা রফতানি করতে পারলে চাষিরা ভালো দাম পাবে। রফতানির জন্য আলু উৎপাদনের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় করতে হবে।

একসময় বিএডিসি জার্মানি, নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ আমদানি করতো। এবার আমরা বিএডিসির মাধ্যমে কিছু বীজ আলু আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছি। এতদিন টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদন করতাম। উন্নত জাতের বীজ এনে আলু বীজ উৎপাদন খামারে ৩ বছর ট্রায়াল দেব। এগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো হবে উৎপাদন সেগুলো চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ১৩০ টনের মতো বীজ আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের মাটি, আবহাওয়া উপযোগী বীজ আলু আমদানি করা হবে।

চলতি নভেম্বরেই বাজারে আসতে পারে ঠাকুরগাঁও দিনাজপুরের নতুন আলু। রোপণের আড়াই মাসের মধ্যে স্থানীয় জাতের এ আলু বাজারে আসে। এরপর আসবে রংপুরের আলু। তারপর জয়পুরহাটের আলু। বৃষ্টির কারণে এবার মুন্সীগঞ্জে আলু দেরিতে লাগাতে হচ্ছে। তবে প্রথম দিকে যে নতুন আলু বাজারে ওঠে সেগুলো হিমাগারে বা গুদামজাত করা যায় না। এগুলো মূলত খাবার আলু।