রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন: নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী

    হিউম্যান ২৪ ডেস্ক:  মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে আগের মত শিক্ষাসহ অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না থাকে, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেশটির রাখাইন প্রদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সোমবার ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর এডুকেশন অব উইমেন অ্যান্ড গার্ল’ শীর্ষক এক আলোচনায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান এ আহ্বান জানান। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদ্যোগে আয়োজিত এই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনটি প্রস্তাব দেন।

    মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মিয়ানমারে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি, যেন এই শিশুরা সেখানে ফিরে যাওয়ার পরে শিক্ষাসহ সব অধিকার পায়।”

    তিনি বলেন, প্রথমত, সংঘাত, জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা শিশুদের মানসিক আঘাত লাঘবে এবং সামাজিক প্রয়োজন মেটাতে নজর দেওয়া। দ্বিতীয়ত, সংঘাত ও জাতিগত নিধন থেকে পালিয়ে যাওয়া শিশুরা সাধারণ স্কুলে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যায় পড়তে পারে। তাই তাদের জন্য অনানুষ্ঠানিক এবং দৈনন্দিন জীবনের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তৃতীয়, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুরা এখন ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে বসবাস করছে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, জাতিসত্তা এবং ভাষা অনুযায়ী এই শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। “এ ধরনের শিক্ষা তাদের আসল পরিচয় রক্ষায় সহায়ক হবে। নিজের দেশে ফেরার জন্য তারা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ”বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার কারণে অনেকেই নিজের দেশ থেকে উৎখাত হচ্ছে। সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষ নিজের ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।”

    এই উদ্বাস্তু এবং বলপূর্বক বিতাড়িত মানুষের বিষয়টি সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর। তারা হতাশ, নিপীড়িত। সহিংসতা ও অত্যাচারের ভয়ানক অভিজ্ঞতা তারা বহন করছে। এদের মধ্যে অনেকেই নিজের দেশে কয়েক দশক ধরে অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে।”

    বাংলাদেশের মানুষকে ‘শান্তিপ্রিয়’ হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবা, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহিংসতা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন আজীবন। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের এখন অন্য দেশের নৃশংসতার ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এগারো লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।
    রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের শাসকদের বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রনীতির শিকার হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও চলাচলের স্বাধীনতা থেকে তারা বঞ্চিত। এমনকি তাদের নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”

    বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়ে আছে, তাদের প্রায় ৫৫ শতাংশই শিশু বলে তথ্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে ১১ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে মানসিক-সামাজিক সহায়তা এবং মৌলিক জীবনভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা নতুন শিক্ষা কেন্দ্র খোলা এবং শিশুদের খেলনা বিতরণের কাজ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের মনে রাখতে হবে সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা ভয়ানক অবস্থায় রয়েছে। তাদের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।”