মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা

বিজয়া দশমী আজ সোমবার। এ দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে। মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।
অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণ এবং সব মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার।
চণ্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত ২২ অক্টোবর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, যাবেন গজে চড়ে।

যদিও করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে এ বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

এর আগে বেশ কিছু বিধি-নিষেধও প্রদান করা হয়। মণ্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় পূজামণ্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পূজার সময় বেশির ভাগ ভক্ত এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।

এদিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী গতকাল ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহা নবমী কল্পারম্ব ও বিহিত পূজা প্রশস্ত সম্পন্ন হয়। অনেকের বিশ্বাস মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। নবমী পূজা হচ্ছে দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়।

অন্যদিকে দশমীর দিন আজ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা- নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হবে। দর্পণ বিসর্জনের পর বিকেলে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরবেন।

শাস্ত্র অনুযায়ী শাপলা, শালুক আর বলিদানের মাধ্যমে দেবীর পূজা হবে। তাই ঢাকের বোলে নিনাদিত হচ্ছে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন’।

হিন্দু ধর্ম মতে বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে দশমীর দিন তিনি ফিরে যাবেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। তাই নগর ও জেলায় সর্বমোট ২ হাজার ১৮৬টি মণ্ডপে বাজছে দেবী বিদায়ের সুর।

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার বলেন, নগরের ১৬টি থানায় ২৭৩টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে সোমবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার শোভাযাত্রা, ধর্মসভা এবং প্রতিমা নিরঞ্জন করা হবে না। ধর্মীয় রীতি মেনে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আগে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে অনেক মানুষ গেলেও এবার একটি ট্রাকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য শুধুমাত্র ১০ জন যেতে পারবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত কেউ প্রতিমা বিসর্জনের জন্য যেতে পারবেন না।

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি মণ্ডপ থেকে সরাসরি স্ব স্ব বিসর্জন ঘাটে গিয়ে বিসর্জন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এসব কিছু তদারকির জন্য একটি মনিটরিং সেল করা হয়েছে। যারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।