কক্সবাজার সৈকতে দখলবাজদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ১০

কক্সবাজার প্রতিনিধি::
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গিয়ে দখলদার সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুলসহ ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে বুলডোজার দিয়ে দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেয়ার মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ সময় অবৈধ দখলবাজরা উচ্ছেদে বাধা দিয়ে সময় চায়। একপর্যায়ে অভিযান পরিচালনাকারী টিম অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনার বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ মিটার খুলে নিয়ে যায়।

পরে মালামাল সরাতে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয় প্রশাসন। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মালামাল না সরিয়ে উল্টো শনিবার বিকালে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে দখলবাজরা কাফনের কাপড় পরে প্রশাসনের অভিযানে বাধা দেয় এবং প্রশাসনের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ে। পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।

এতে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হন। আহতরা হলেন- দৈনিক যুগান্তরের টেকনাফ প্রতিনিধি নুরুল করিম রাসেল, সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ পথচারী ও ব্যবসায়ী।

কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গেলে দখলবাজরা কাফনের কাপড় পরে বাধা দেয়। কিন্তু প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতির কাছে তাদের পিছু হটতে হয়। সর্বশেষ উচ্ছেদ অভিযান সফল করে প্রশাসনের টিম ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টে হরেকরকম অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে দখলবাজ সিন্ডিকেট। পরে কক্সবাজার পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নেয় তারা। এই অবৈধ দখলবাজদের কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল উচ্ছেদের নোটিশ দেয়। পরে জসিম উদ্দিনসহ ৫২ জনের একটি সিন্ডিকেট হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করে।

একই বছরের ১৬ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেন। পরে স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি শেষে হাইকোর্টের রুল ও স্থগিতাদেশ খারিজ করে উচ্ছেদের রায় দেন। এ রায় পাওয়ার পর উচ্ছেদে নামে প্রশাসন।

রিটকারী হাজী জসিম উদ্দিন জানান, প্রশাসন যে রায়ের অনুবলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে ওই রায় এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সরকারি কোনো দফতরে পৌঁছেনি। আদেশ আশার আগেই হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।

সুগন্ধা ডলফিন মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান জানান, সম্প্রতি যে রায়টি হয়েছে ওই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছি। রিভিউ শুনানি শেষ না হওয়ার আগেই আমাদের ওপর এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্পূর্ণ অনৈতিক।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মুনীর উল গিয়াস যুগান্তরকে বলেন, উচ্ছেদে বাধা প্রদান এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল, দখলবাজ সরওয়ারসহ ৬ জন রয়েছেন।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ জানান, উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অবৈধ দখলদাররা উচ্ছেদে বাধা প্রদানসহ প্রশাসনের ওপর যে হামলা করেছে তা খুবই জঘন্যতম।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ বড়ুয়া জানান, হামলায় পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি সরকারি কাজে বাধা দেয়া হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।