১১ মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি

চট্টগ্রাম মহানগর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ সারা দেশে ১১ মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব কমিটি করা হবে। তার আগে প্রতিটি মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এই কমিটি বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি সম্পন্ন করবে। এরপর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, ‘দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানিয়েছেন যে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড-থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলে মহানগর কমিটিতে হাত দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মহানগর কমিটিগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে চট্টগ্রাম মহানগর দিয়ে। তারপর আসবে বরিশাল মহানগর। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগে কমিটি গঠন করা হবে। এর বাইরে কুমিল্লা মহানগরে বিএনপির সাংগঠনিক কোনো কমিটি নেই। সেখানে প্রথমবারের মতো নতুন কমিটি গঠন করা হবে। আর গাজীপুর মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্গঠন করা হবে।

জানা গেছে, মজিবর রহমান সরোয়ার ১৯৯১ সালে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এরই মধ্যে তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এখন আছেন দলের যুগ্ম মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সভাপতি ও মনিরুজ্জামান মনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটির মেয়াদ শেষে এ পর্যন্ত দুই দফা সম্মেলনের তারিখ হয়েছে।

কিন্তু সম্মেলন আর হয়নি। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ড. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাসেম বকরকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সমপ্রতি নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভার্চুয়াল উপায়ে একজন একজন করে চট্টগ্রামের নেতাদের মতামত নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নেতারা সবাই বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরির পক্ষে মত দিয়েছেন। দ্রুতই কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে।’

রাজশাহীতে ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বুলবুল ও মিলনের দ্বন্দ্বে এই কমিটি আংশিক অবস্থায়ই মেয়াদ শেষ করেছে। সিলেটে মহানগরে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সভাপতি পদে নাসিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আংশিক অবস্থায়ই দুই কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে।

রংপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালের ২৬ মে মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি ও শহীদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় রংপুর মহানগর কমিটি। সভাপতি মোজাফফর এরই মধ্যে মারা গেছেন। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিতে সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীসহ ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬০ সদস্যবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মহানগর কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব কমিটির কোনোটারই মেয়াদ নেই।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘কমিটি পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর কমিটিগুলো অবশ্যই পুনর্গঠন করা হবে।’