এই কিছুদিন আগেও জন্মভূমি পোল্যান্ডে তার পরিচয় ছিল ‘টমাস সিওটেকের মেয়ে’। কিংবদন্তি বাবার সন্তান হওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে বৈকি! তবে সদ্যসমাপ্ত ফরাসি ওপেনের ফাইনালে সোফিয়া কেনিনকে সরাসরি সেটে হারিয়ে যে কীর্তি ইগা সিওটেক গড়েছেন, তাতে পুরোনো পরিচয় যে খসে পড়েছে তা একরকম নিশ্চিত।
অথচ ফাইনালের আগে সব হিসাবেই পিছিয়ে ছিলেন ইগা। প্রতিপক্ষ সোফিয়া বছরের শুরুতেই জিতেছেন অজি ওপেন। পোলিশরা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে না, মিথটাও ছিল। সঙ্গে জুড়ে ছিল আগের দিনই নারী দ্বৈত লড়াইয়ের সেমিফাইনালে হার।
তবে ইগা যেন সেরাটা তুলে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্যই। অপ্রথাগত সব সার্ভে যখন সোফিয়াকে ধরাশায়ী করে তুলে নিচ্ছেন ৬-৪, ৬-১ জয়, কে বলবে তখন এই সিওটেক কখনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনালের চৌকাঠই মাড়াননি? এই জয়ে প্রথম পোলিশ হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পাশাপাশি উন্মুক্ত যুগে দ্বিতীয় অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতার কীর্তি গড়েন ১৯ বছর বয়সি ইগা।
বাবা টমাস ছিলেন পোল্যান্ডের কিংবদন্তি রোয়ার। তবে বৈশ্বিক মঞ্চ অলিম্পিকে তার অর্জন কেবল ১৯৮৮ অলিম্পিকে কোয়াড্রুপল স্কালে চতুর্থ হওয়া পর্যন্তই। মেয়ের প্রথম পোলিশ হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের অর্জনটা বাবার অর্জনকেও ছাপিয়ে গেল বৈকি!
এমন কীর্তি গড়ে নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকেছে ইগার। প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘এটা আশাই করিনি আমি! অবশ্যই এটা জীবন বদলে দেওয়া একটা অভিজ্ঞতা। তবে এখন মনে হচ্ছে ইতিহাসই লিখে ফেলেছি।’
মাঠের বাইরে ইগা বেশ আকর্ষণীয় এক চরিত্র। ‘গানস অ্যান্ড রোজেস’ শুনে কোর্টে আসা নিত্যদিনের অভ্যাস। ফ্রান্সে আসা তার স্টাফদের মধ্যে আছেন এক মনোবিদও, টুর্নামেন্ট চলাকালে এমন কিছু টেনিস দুনিয়ায় খুবই বিরল। আগের দিনই দ্বৈতের সেমিফাইনালে হারের স্মৃতিটা মাটিচাপা দিতেও হয়তো অবদান রেখেছে কাজটা।
এদিকে গণিত আর জ্যামিতির বড় ভক্ত সিওটেক মাঠেও এর প্রতিফলন দেখান। খানিকটা অপ্রথাগত সব সার্ভ সাক্ষ্য দেয় তারই। এই সবকিছুরই সম্মিলিত ফল সপ্তম চেষ্টাতেই ইগার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়।