বাণিজ্য মেলায় ২০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে।

মাসব্যাপী এই মেলার সমাপনীতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এবার বিক্রি ও ক্রেতা সমাগমও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।

ঢাকার শেরেবাংলা নগরে মেলা মাঠে শনিবার হয় ২৪তম বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “এবারের মেলায় রপ্তানি আদেশ বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে বিক্রিও অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রপ্তানি বাড়াতে হবে। বর্তমানে রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশেই পোশাক খাত থেকে। কিন্তু রপ্তানি বাড়াতে হলে শুধু পোশাকের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে হবে না, পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে।”

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আপাতত পূর্বাচলে যাচ্ছে না বলেও জানান টিপু মুনশি।

“পূর্বাচলে স্থানীয় পণ্য প্রদর্শনের জন্য যে কাজ চলছে, সেখানে বাণিজ্য মেলা হবে না। এই জায়গাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আগামী ৫/১০ বছর পরে এখানে মেলা করা সম্ভব হবে না। সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে।”

পূর্বাচলে শুধু রপ্তানি পণ্য প্রদর্শনী হবে। চলতি বছরের শেষদিকে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হবে। ওই প্রদর্শনীতে টেক্সটাইলসহ রপ্তানিমুখী সব পণ্য প্রদর্শনের সম্ভাবনা আছে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “পূর্বাচলে ৩০ একর জায়গার উপর যে প্রদর্শনী সেন্টার নির্মিত হচ্ছে, তা শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে।

ওই প্রদর্শনী সেন্টার চালু হলে রপ্তানি আরও বাড়বে।”

অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যন বিজয় ভট্টাচার্য়্য বলেন, “আমরা এবার ব্র্যান্ডিংকে গুরুত্ব দিয়েছি। বিক্রি করা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।

এবারই মেলায় প্রথম ই টিকেট প্রচলনের কথা বলেন তিনি। মেলা স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোর সাজ-সজ্জা

বিদেশিদের প্রশংসা পেয়েছে বলেও তিনি জানান।

এবারের মেলায় অংশ নেওয়া ৬০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে ইপিবি। অনুষ্ঠানেই বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরাদের গোল্ড কালার্ড ট্রফি এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মাঝে সিলভার ট্রফি ও ব্রাস ট্রফি দেওয়া হয়।

এবার মেলায় সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে হাতিল কমপ্লেক্স; এক্ষেত্রে ওয়াল্টন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ দ্বিতীয় এবং এসকোয়ার ইলেকট্রনিক্স তৃতীয় পুরস্কার জিতেছে।

মেলায় অনন্য সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড। সেরা প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ও সেরা সাধারণ প্যাভিলিয়নে প্রথম হয়েছে ওয়াল্টন হাই-টেক ইন্ড্রাসট্রিজ লিমিটেড। সেরা সংরক্ষিত প্যাভিলিয়নে প্রথম হয়েছে জুট ডাভার্সিফিকেশন প্রোমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)।

এবার বিদেশি প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে জাপানের হালাল কোম্পানি লিমিটেড এবং তুরস্কের হাডেক্স হালি ডেরি টেক্সটাইল ডাইস টিআইসি এ এস।

সেরা প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়নে বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সেরা সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়নে বঙ্গ মিলার্স লিমিটেড, সেরা সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস, সেরা প্রিমিয়ার স্টলে এম/এস হেলাল ও ব্রাদ্রার্স এবং সেরা সাধারণ স্টলে প্রথম হয়েছে ফরচুন টেক লিমিটেড।

আর নারী উদ্যোক্তা বিভাগে সিলভার ট্রফি পেয়েছে গৃহিণী ফুড প্রোডাক্টস ও মা এন্টারপ্রাইজ।

এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন ছিল ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ছিল ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ছিল ৪১২টি।

বাংলাদেশ বাদে ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেয়। দেশগুলো হলো- জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।