নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে মারামারিতে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এ সময় অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মারামারিতে দুজন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল থেকে কলেজের প্যারেড মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ উপলক্ষে ছাত্রদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত পক্ষের নেতা-কর্মীদের জন্য ৫০ প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে ২০০ প্যাকেট খাবারের দাবিতে এই পক্ষের নেতা-কর্মীরা অধ্যক্ষের কক্ষে যান।
পরে খাবারের প্যাকেট কম দেওয়া নিয়ে তাঁরা শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিকের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর দুই পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
আজ বেলা ২টায় কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ ক্যাম্পাসে ৩০ থেকে ৪০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছাত্রলীগের একটি পক্ষ প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং আরেকটি পক্ষ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান করছিল। অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের বাইরে মারামারিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঠের অংশ পড়ে আছে। কার্যালয়ের ভেতরে অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকেরা অবস্থান করছিলেন।
সেখানে কথা হয় চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূল ভেন্যুতে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য পুলিশ সেখানে মোতায়েন ছিল।
কিন্তু পরে শুনি অধ্যক্ষের কার্যালয়ে খাবারের প্যাকেট নিয়ে মারামারিতে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। এরপর পুলিশ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে দুজন আহত হয়েছে। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হাসান বলেন, ‘মেয়র গ্রুপ দাবি করা ছাত্রলীগের অংশটি আমার কক্ষে এসেছিল খাবারের প্যাকেটের বিষয়ে কথা-কাটাকাটি করতে। একপর্যায়ে দেখি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও তাদের দলবল নিয়ে আমার কক্ষে আসে। পরে দেখি দুই পক্ষই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত মারামারি করে।’
মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ‘শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে আমরা অধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে যাই। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব মনে করে স্যারদের বাঁচাতে ছুটে গিয়েছি। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
অন্য পক্ষের নেতা ওবাইদুল হক বলেন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে তাঁরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যান। এ সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলায় ইমরান আহমেদ ও মো. নুরতজা নামের দুই কর্মী আহত হয়েছেন।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে প্রয়াত নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের অনুসারী সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে নগর ছাত্রলীগ।
কিন্তু কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ার অভিযোগ এনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পক্ষের ৯ নেতা-কর্মী পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে কমিটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পদত্যাগ করা নেতা-কর্মীদের অনুসারীদের মধ্যে অন্তত ১০ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।