নতুন মন্ত্রিসভা: চট্টগ্রাম থেকে এগিয়ে হাছান মাহমুদ, বাদল, নওফেল, আফসারুল, লতিফ ও জাবেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী সোমবার গঠন হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন মন্ত্রীসভা। মন্ত্রীসভা গঠনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। এখন চট্টগ্রামের সর্বত্র একটাই আলোচনা চট্টগ্রাম থেকে কে হচ্ছেন মন্ত্রী। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস পাড়াতে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

এদিকে সর্বশেষ তথ্যে পাওয়া খবরমতে চট্টগ্রাম থেকে দুজন মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পেতে পারেন। যাদের সম্ভাব্য নামও ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে চলে এসেছে।

সূত্র জানায়, এবারের মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যারা ইতিবাচক আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জাসদের মাঈন উদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের, ডা. আফসারুল আমিন , বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ এম এ লতিফ ও চট্টগ্রাম -১৩ আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সাংসদ ভুমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এছাড়াও আলোচনায় আছেন চট্টগ্রামের আরো ৫ থেকে ৮ জন সাংসদের নাম।

তবে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় পুনরায় ঠাঁই পেতে পারেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা নুরুল ইসলাম বিএসসি

অন্যদিকে , নতুন মন্ত্রিসভায় পুরনো মুখ হিসেবে আবারও আসতে পারেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, দশম সংসদের মন্ত্রীসভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৬ সালেও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে পালন করেছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। দেশের ভূমি অফিসগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে প্রশংসিত জাবেদ আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।

আলোচনায় আছেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর তার ওপর বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পিত হয়। এবারও তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বলে আলোচনা আছে।

রাউজান সংসদীয় আসন থেকে ধারাবাহিকভাবে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। ২০০১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রীসভায় এবার তিনিও পেতে পারেন মন্ত্রীর দায়িত্ব।

চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রাজনীতিতে এসেই চমক দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে তাকে। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে সদ্য সম্পন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি আবারও আলোচনায় এসেছেন। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে স্থান পেতে পারেন তিনি।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে টানা ছয়বার জয়ের মালা উঠেছে বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের গলায়। মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এবারও তিনি মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন।

এছাড়াও আলোচনায় আছেন সাংসদ দীপংকর তালুকদার, যিনি পার্বত্য রাঙামাটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পঞ্চম, সপ্তম ও নবম জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।

কক্সবাজার-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারও তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কমল মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে স্থান পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিপরিষদে এবার নতুন যুক্ত হচ্ছেন তারা; যারা সৎ, সাহসী, দক্ষ ও পরীক্ষিত। একই সঙ্গে শিক্ষিত তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, কোথাও কোনও বদনাম নাই। সংসদ সদস্য হিসেবেও যাদের কোনও দুর্নাম নাই। এমন কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রথমবার নতুন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

আবার একইসঙ্গে যারা দলের জন্য বিভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অথচ তারা সংসদ সদস্য নন, এমন নেতাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে সভায় স্থান দিতে পারেন শেখ হাসিনা। মেধা ও দক্ষতার সংমিশ্রণে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে চান তিনি। মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নতুন সংসদ সদস্যও এবারের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন, যারা দলের ও সরকারের আগামী দিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

মোট কথা সরকারের দক্ষ মন্ত্রী ও দক্ষ নেতা হিসেবে এদের গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী। তবে দলের ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন, যা চূড়ান্ত।