শেষমুহূর্তে প্রচারনায় মহাজোট, ঘরছাড়া বিএনপি

সাঈফী আনোয়ারুল আজিম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেনর প্রচার প্রচারণা শেষ হচ্ছে বৃহসপতিবার মধ্যরাত থেকে। প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হলেও এবারের প্রচারনায় তীক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছে দেশের বিরোধী জোটের রাজৈনতিক দলগুলো।

দলীয় সরকােরর অধীনে প্রথমবারেরর মতো নির্বাচন করতে গিয়ে চট্টগ্রামের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা মাঠেও নামতে পারেনি সমানতালে। এমনকি চট্টগ্রামের একটি আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রাথী নিজের পোস্টারটিও লাগাতে পারেনি। এই প্রার্থী ২৪ ঘন্টা নিজের মোবাইলটিও বন্ধ রেখেছেন নির্বাচনের পুরো মাসজুড়ে।

এই চিত্র সরওয়ার জামাল নিজামের । যিনি আনোয়ারা আসনের সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য। বিএনপির এই প্রার্থী নিজের পোস্টারটাও লাগাতে পারেনি। যাননি এলাকাতেও। এই আচারণে হতাশ

প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার আতঙ্কে বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা ব্যানার পোস্টার তেমন করেনি বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। ফলে নৌকার পোস্টারে অলিগলি ছেয়ে গেলেও ধানের শীষের পোস্টার খুব একটা চোখে পড়েনি নির্বাচনে।

এবারের নির্বাচনে সরকারি দলের সর্মথকরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ব্যাপক হিংসাত্মক এবং প্রতিরোধমূলক বেস্টনী গড়ে তোলায় তাদের বাধার কাছে হার মেনেছে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা।

জানা যায়, নগরের ৬টি সংসদীয় এলাকার বাইরেও জেলার অন্যান্য দশটি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার তেমন চোখে পড়েনি। কয়েকটি জায়গায় থাকলেও তা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারের তুলনামূলক নগন্য।

বোয়ালখালী-চান্দঁগাও আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ানের পোস্টার-ব্যানারে বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট প্রার্থী জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদলের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচার প্রচারণা ও পোস্টার-ব্যানারে এগিয়ে থাকলে ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের। বাকলিয়া, চকবাজার ও কোতোয়ালী এলাকার অলিগলিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের পোস্টারে ছেয়ে গেলেও তেমন চোখে পড়েনি ডা. শাহাদাত হোসেনের পোস্টার। পোস্টার-ব্যানারের পাশাপাশি মাইকিংয়েও নেই শাহাদাত হোসেন।

জানতে চাইলে ডা. শাহাদাতের একান্ত সচিব এডভোকেট মারুফুল হক বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা পোস্টার-ব্যানার সাঁটাতে গেলে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা তা ছিঁড়ে ফেলছে। এমনকি অনেক স্থানে পোস্টার সাঁটানোর সময় তা কেড়ে নিয়ে পুড়িয়েও ফেলেছে । যার কারণে পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়ছে না।

চট্টগ্রাম-১০ পাহাড়তলী-খুলশী ও হালিশহর এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আফছারুল আমিনের পোস্টার-ব্যানার ও নির্বাচনী অফিস দেখা গেলেও দেখা নেই বিএনপির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের ব্যানার-পোস্টার। যদিও খুলশী, ঝাউতলা, হালিশহরসহ বিভিন্ন স্থানে কিছু ব্যানার-পোস্টার দেখা গেলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণার তুলনায় খুবই কম।

এছাড়াও চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার ও প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও মাঠে নেই বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম। মাত্র একদিন প্রচারণায় নামলেও সংসদীয় এলাকা আনোয়ারা-কর্ণফুলীর কোথাও দেখা নেই ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার। অপর দিকে জাবেদ নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার, লিপলেট নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন দুই উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।

চট্টগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম আয়ুব বলেন, গত বিশ বছর ধরে পারিবারিক প্রেসের ব্যবসা নিজের হাতে করে আসছি। তবে এবারের মত কখনো হয়নি। আওয়ামী লীগ, মহাজোট, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের হরেক রকম ডিজাইনের পোস্টার ব্যানার ছাপাতে ব্যস্ত প্রেসপাড়া। তবে বিএনপি প্রার্থীরা এবার পোস্টার লিপলেট ছাপছে কম। এক কথায় নেই বললেই চলে। তবে কয়েকটি প্রেসে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পোস্টার করছে যা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় মাত্র ৩ শতাংশের মতো।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমার কর্মীরা পোস্টার ব্যানার লাগাতে পারছে না। পোস্টার-ব্যানার লাগানোর জন্য গেলে তাদের মারধর করে তা নিয়ে যাচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের মাইকিংয়ে বাধা দিচ্ছে

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাসায় এসে দেখুন হাজার হাজার পোস্টার-লিপলেট পড়ে আছে। লাগাতে পারছে না কর্মীরা, তারা পোস্টার-ব্যানার লাগাতে গেলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে । এভাবে তো আর পোস্টার-ব্যানার লাগানো যাবে না।

আর দুইদিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কে জিতবে কে হারবে তা এখনো বলতে পারছেননা ভোটাররা। এত প্রচার প্রচারনার পরও সরকারি দলও বুঝতে পারছেনা , তারা কি পুনরায় জিততে যাচ্ছেন না কি হারতে যাচ্ছেন। এটা জানার জন্য অন্তত ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে সবাইকে।