একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সরকারি প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে একশ্রেনির বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও ভর্তি বানিজ্যে জড়িত হয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট মেরিজ স্কুলের বিরুদ্ধে ভুঁয়া লটারীর মাধ্যমে কেজি শ্রেণীতে ভর্তিতে অভিভাবক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতি ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামতো শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে কেজি ও নার্সারী ক্লাসে শিক্ষার্থী ভর্তিতে লটারীতে অনিয়মের অভিযোগ এনে জনৈক তোহিদুল আলমসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ তদন্তের জন্য বিগত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ইং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে শুণাণীতে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিলেও অভিযোগকারী অভিভাবকগন উপস্থিত থাকলেও অভিযুক্ত সেন্ট মেরিজ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরী সঙ্গীতা প্রথমে ঢাকায় অবস্থান, পরে অসুস্থ এবং সর্বশেষ বড় দিনের অযুহাতে তদন্তকারী দলের সাথে শুণানীতে উপস্থিত হতে গড়িমসি করছেন। (অভিযোগকারীদের অভিযোগ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর চিটির কপি সংযুক্ত)।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে সেন্ট মেরিজ স্কুলের ভর্তি বানিজ্যের বিষয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের অনিয়মের খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে সাহস না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। নির্ভর যোগ্য সুত্রে জানা যায় সেন্ট মেরিজ স্কুলের সাথে জড়িত জনৈক মিঃ লরেন্স (০১৮১৯৮৮৯৭৬৫) নগরীর হেমসেন লেনে প্রাইভেট কোচিং খুলে চুক্তি ভিত্তিতে সেন্ট মেরিজ স্কুলে ভর্তিতে শতভাগ নিশ্চিয়তা প্রদান করে বিপুল পরিমান কোচিং বানিজ্য করে যাচ্ছেন। এই সেন্টারে যারা ভর্তি হবে তারাই স্কুলে নিশ্চিত ভাবে ভর্তি হতে পারবে। ভুক্তভোগী বিভিন্ন অভিভাবকদের কাছে তথ্য মোতাবেক জানা যায় ভর্তিতে লটারীর কথা বলে এ স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি ও ভর্তি বানিজ্য চলমান রয়েছে। এখানে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতা, এক শ্রেণীর সাংবাদিকসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের জন্য নির্ধারিত কোটা রেখে তারা দীর্ঘদিন যাবত এ ধরনের বানিজ্যে জড়িত রয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিভাবক তৌহিদুল ইসলাম(০১৯১১২৬৭২২০) বলেন নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে লটারী অনুষ্ঠানের নিয়ম থাকলেও সেন্ট মেরিজ স্কুল তা না করে তাদের ইচ্ছামতো যারা মিঃ লরেন্স এর কোচিং সেন্টারে পড়ছে, তাদেরকে লটারীতে নির্বাচিত বলে ঘোষনা করে দেন। এটা পুরোপুরি অবৈধ ও সরকারি নিয়মের বরখেলাপ। সেকারনে আমি জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি লিখিত আকারে দাখিল করেছি। আমার জানা মতে নগরীতে আর ও বেশ কিছু স্কুলে লটারীতে এ ধরনের অনিয়ম ঘটলেও প্রশাসন বিষয়টি কোন ভাবেই আমলে নিচ্ছে না। যার কারনে ভর্তি বানিজ্য ও কোচিং বানিজ্য চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলে শিক্ষা প্রশাসনের ব্যস্ততার অযুহাতে ভর্তি বানিজ্যের কুশীলবরা তাদের ব্যবসা পুনঃরায় চালু করেছেন। শিক্ষা প্রশাসন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে কোন ধরনের খোঁজ খবর রাখছে না। অধিকন্তু ক্যাব থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিদর্শন, শিক্ষার মান নিশ্চিত কল্পে নিয়মিত অভিভাবক সভা আয়োজন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অভিভাবকদের অংশগ্রহন নিশ্চিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন, বই-উপকরণ, শ্রেণী ও র্বোড পরীক্ষার অনুমোদনে বিষয়গুলো নিশ্চিত করার দাবি করা হলেও অজ্ঞাত কারনে কোনটাই করা হচ্ছে না। ফলে নতুন বছরে ভর্তিতে ঘুরে ফিরে আবারও সেই ভর্তি ও কোচিং বানিজ্য, অতিরিক্ত ফিস আদায়ের মহড়া, লটারীতে ভর্তির নামে গোপনে লটারী দেখিয়ে পছন্দসই শির্ক্ষার্থী ভর্তি করানো, এসএসসি ও এইসএসসিতে শ্রেণী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে টেস্ট (নির্বাচনী) পরীক্ষায় অকৃতকার্য করাসহ নানা ভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মহোৎসব শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অরিত্রিকে আত্মহণণে বাধ্য করার পেছনে মূল কারন ছিলো ভর্তি বানিজ্য ও অভিভাবকদের সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে অনিয়মিত সংলাপ। তাই প্রশাসন বিষয়গুলো কঠিন ভাবে নজরদারি না করলে এ বিষয়ে পরিত্রান পাওয়া কঠিন হবে।