চট্টগ্রাম নিয়ে আমার চিন্তা

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম

আজ দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক এবং চট্টগ্রামের সুসন্তান স্নেহভাজন শ্যামল দত্তের লিখা “চট্টগ্রাম নিয়ে চিন্তা করার কি কেউ নেই?” উপসম্পদকীয়টি পড়ে ভালো লেগেছে । কথাগুলোর সাথে একমত না হয়ে পারিনা কারণ অবহেলিত চট্টগ্রামের কথা বলাটাই আমার দীর্ঘদিনের বিশেষত্ব এবং এটি শ্যামলও জানেন ।তবে, এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের চট্টগ্রামের এবং জাতীয় সংবাদ মাধ্যমও কিছুটা দায়ী । যেমন, আমরা দেখেছি চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে কোন দাবিনামাব বা সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ এখানের প্রধান একটি দৈনিক ছাপায়তো আরেকটিতে ছাপায় না। আবার একটির সম্পাদক প্রধান অতিথি হয়ে কোন অনুষ্ঠানে এলে অন্যটিতে তার সংবাদ দেখিনা, একই প্রাকটিস দীর্ঘদিনের | অন্যদিকে ঢাকার জাতীয় প্রত্রিকাগুলো এবং টিভিগুলি চট্টগ্রাম বাসীদের সমস্যাবলী এবং তাদের দাবি গুলোকে গুরুত্ব দিয়েপ্রচার করেনি, ফলে এসব সরকারের কানে ঠিক এভাবে পৈাছাতে পারে নি | এভাবে জাতীয় বাণিজ্যিক রাজধানীর প্রতি অবহেলা করা হয়েছে | একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি যে ক্ষমতায় থাকা মন্ত্রী, মেয়রর, সিডিএ চেয়ারম্যানরাও কিছু কিছু প্রচার মাধ্যমকে ও সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন, আর্থিক – বৈষয়িক সুবিধা, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মানুষের দাবী ও ক্ষোভকে দানা বাঁধতে দেয়নি। যখনই মানুষের কোন ক্ষোভ দানাবেঁধে উঠেছে তখনই সংবাদ প্রচার করা হয়েছে এই বলে যে, মেয়র মহোদয় বা সরকার সবকিছু শীঘ্রই করে ফেলছেন, হয়ে যাচ্ছে, কাজেই আন্দোলনের কোন দরকার বা চিন্তার কোন কারণ নেই, ইত্যাদি । অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম থেকে ১৩ দফা প্রস্তাব করলাম প্রথম থেকেই সরকারের কাছে করোনাভাইরাস এর ব্যাপারে । এতে গুরুত্বপূর্ণ দাবিটি ছিল চট্টগ্রামে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিল্ড হসপিটাল করা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এবং সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটরস থাকতো ।কিন্তু কোন পত্রিকায় এই দাবিগুলো ছাপানো হয়নি একাধিকবার পাঠানো সত্ত্বেও | চট্টগ্রামে নাগরিকদের একান্ত দাবি তুলে ধরার জন্য কোন বিশাল সংগঠন নেই, নাগরিক ফোরামের মতো যেগুলি আছে তাদের বক্তব্ যও প্রস্তাব প্রচার করা হয় না ঠিক ভাবে । আমরা এতে হতাশ হই । একটি ভালো ক্যাম্পেইন সৃষ্টি করতে চাইলাম সেটা পারলাম না, জনপ্রতিনিধি , বড় ব্যবসায়ী নেতা বা মিডিয়ার কোন সহযোগিতা পেলাম না । মনে হচ্ছে নগরীর জলাবদ্ধতা ও চট্টগ্রাম নিয়ে কথা বলার কারণে আমাদেরকেই বরং অবহেলা করা হয়েছে এবং অনুত্সাহিত করা হয়েছে । চট্টগ্রাম উন্নয়নের আন্দোলন করতে করতে আর এসবের কিছু সফলতায় আমরা অনেক জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছি এবং হয়তো এগুলো করে এমপি, মেয়র বা মন্ত্রী হয়ে যেতে পারি, এসব দুশ্চিন্তা করে অনেকেই ঈর্ষা করতে শুরু করলেন, নানান রকম গুজব ছড়িয়ে দিতে থাকলেন। এই হচ্ছে আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামের রাজনীতি, নিজে করবেনা কিছু, অন্য কাউকে করতে দেবে না বা উঠতেও দেবে না, কোন ভালো লোককে ! দেশে থেকেও নিজে করবেনা, কিন্তু প্রবাস থেকে এসে কেউ উদ্যোগ নিলে অন্যভাবে দেখে | এই সবকিছুর কারণেই আজ চট্টগ্রামের এই দৈন্যদশা সৃষ্টি হয়েছে । চিকিৎসাসহ এর সার্বিক উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাবান কেউ কোনদিন চিন্তাভাবনাই করেননি । আর নেতা সৃষ্টি হবে কি করে? যারা বড় বড় নেতা হয়ে গেছেন তারা নিচের কাউকে উঠতে দেননি । অথচ একজন সফল নেতার বৈশিষ্ট্য হলো তার পরবর্তী সময়ের জন্য আরো যোগ্য নেতা সৃষ্টি করে যাওয়া । না বলে পারছিনা আর একটা কথা। চট্টগ্রামের হতাশ দৈন্য দশা দেখে আমি কিন্তু এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম মেয়র পদের জন্য, দীর্ঘদিনের দেশ-বিদেশে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে চেয়েছিলাম পাল্টে দিতে চট্টগ্রামকে এবং সেটা পারতাম | এর আগে কখনো দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি তেমন চিন্তা করিনি, চট্টগ্রামের এই অবস্থা দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না, না হয় বিবেকের কাছে দায়ী থাকব ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকাছে দায়ী থাকব ভেবেছিলাম| এছাড়া উত্সাহিত করেছেন অনেকেই এগিয়ে আসার জন্য । দুঃখ পাইনি মূল্যায়ন হয়নি বলে, তবে দেরিতে হলেও কোনো না কোনো সময়ে কেউ না কেউ বেরিয়ে আসবেন যোগ্য নেতৃত্ব দিতে | মনে পড়ে এরশাদ আমলে এবং বিএনপি’র ৯১ উত্তর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আমাদের উন্নয়ন আন্দোলনের সাথে জাতীয় ও চট্টগ্রামের মিঁডিয়া একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন এবং অনেক সফলতাও এসেছিল চট্টগ্রামের জন্য | আমার জানামতে চট্টগ্রামে দুই শতাধিক সক্রিয় সংবাদপত্র কর্মী আছেন এবং তারা সবাই যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করেন, সোচ্চার হন, তাহলে অবশ্যই শক্তিশালী নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠবে এবং চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন হবেই এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য সুন্দর চট্টগ্রাম নিশ্চিত করা যাবে । জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভূমিকাও এএক্ষেত্রে আরো ইতিবাচক হবে বলে আশা রাখি |