সরকারি কর্মচারীরা এখনো সর্বোচ্চ ১৩% সুদ পাচ্ছেন

প্রথম আলো:: বাজারে প্রচলিত যত ধরনের সুদ রয়েছে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ হারে পেয়ে থাকেন সরকারি কর্মচারীরা। যেমন কোনো ব্যক্তি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রাখলে বর্তমানে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ পান। আর সঞ্চয়পত্র কিনলে সরকার ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদ দেয়।

কিন্তু সরকারি কর্মচারীরা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা রাখার জন্য সুদ পান ১৩ শতাংশ। ছয় বছর ধরেই তহবিল দুটিতে তাঁরা এই হারে সুদ পাচ্ছেন। এর আগে জিপিএফ ও সিপিএফে টাকা রাখলে আরও ১ শতাংশ বেশি মিলত, অর্থাৎ ১৪ শতাংশ সুদ পেতেন তাঁরা।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়ে অবসরে যাওয়া বয়োজ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মচারীদের কষ্টের মধ্যে ফেলা হয়েছে। অথচ এখন যাঁরা সরকারি কর্মচারী, তাঁদের ঠিকই জিপিএফ ও সিপিএফের বিপরীতে ১৩% সুদ দেওয়া হচ্ছে।
আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব
দুই বছর আগে ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। দুই সপ্তাহ আগে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কিছুটা কমিয়েছে। এর আগে ২০১৫ ও ২০১১ সালে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়েছিল।

তবে জিপিএফ ও সিপিএফের সুদের হার বহাল আছে একই জায়গায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রতিবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এক বছরের জন্য জিপিএফ ও সিপিএফের সুদহার নির্ধারণ করে থাকে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর পরপরই জিপিএফ ও সিপিএফের সুদের হারও ১৩ শতাংশ থেকে কিছুটা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ বিভাগই শেষ পর্যন্ত এতে বাগড়া দেওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জিপিএফ-সিপিএফের সুদের হার ১৩ শতাংশ থেকে কিছুটা কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে। যেহেতু ব্যাংক খাত এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন কম সেহেতু এই সুদের হারও যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সংগত হবে।

একসময় সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা জিপিএফে রাখতে পারতেন। সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের বেশি বেতন পাওয়া কর্মচারীদের স্বার্থে অর্থ বিভাগ এমন সুযোগ করে রেখেছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

তবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ সুদের হার না কমিয়ে জিপিএফে টাকা রাখার সীমা বেঁধে দেয় মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, জমা রাখার সীমা কমানো হয়েছে বলেই সুদের হারে হাত দেওয়া হয়নি। তবে গোষ্ঠীস্বার্থের পরিবর্তে যেসব সরকারি কর্মচারী জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবেন, তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, শিগগির ১৩ শতাংশ থেকে তা অন্তত ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্প্রতি সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না।’

অর্থ বিভাগের হিসাবে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার ১ লাখ ৭ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যয় ও জিপিএফ-সিপিএফের সুদ ব্যয়কেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

সরকারি কর্মচারীরা জিপিএফে টাকা রাখলেও কিছু সরকারি ব্যাংক ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীরা টাকা জমা রাখেন সিপিএফে। জিপিএফের তুলনায় সিপিএফে অবশ্য কম সুবিধা দেওয়া হয়।

যেসব কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তাঁরা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যাঁরা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তাঁরা টাকা রাখেন সিপিএফে। জিপিএফে টাকা রাখলে ভালো একটি অঙ্ক নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন সরকারি কর্মচারীরা। অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব উদাহরণ দিয়ে জানান, ২৫ বছর চাকরি করলে একজন জিপিএফধারী কর্মচারী ৮০ মাসের মূল বেতনের সমান টাকা পাবেন। কিন্তু একই সময়ে একজন সিপিএফধারী কর্মচারী পাবেন ৫০ মাসের মূল বেতনের সমান টাকা।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়ে অবসরে যাওয়া বয়োজ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মচারীদের কষ্টের মধ্যে ফেলা হয়েছে। আমি মনে করি যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্যগুলোতে হাত দেওয়াই উচিত হয়নি। আর সরকারি কর্মচারীদের জিপিএফ ও সিপিএফের বিপরীতে ১৩ শতাংশ করে সুদ দেওয়া গেলে সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেও তা দেওয়া যায়।’