এ অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএন‌পির কর্মী সমা‌বেশে প্রধান অ‌তি‌থির বক্তব‌্য বিএন‌পি মহাস‌চিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন আমরা আর আ’লীগের অধীনে কোন নির্বাচনের ফাঁদে পা দিচ্ছি না। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এমনকি ইউনিয়নের কর্মীদের পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মামলার আসামী করা হয়েছে। ৩৫ লক্ষ আসামী করা হয়েছে এক লাখ মামলায়। ৫০০ জনকে খুন, গুম করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফ্যাসীবাদ সরকারকে আমরা সরাতে পারিনি। আমরা গভীর সংকট পার করছি। বিগত কয়েববছর দেশে গণতন্ত্র নেই। কথা বলার অধিকার, সভাসমাবেশের অধিকার নেই। গ্রেপ্তার করে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলে রাখছে। এই সরকার মুখে গণতন্ত্র বলে কিন্তু গণতন্ত ্রতারা মানে না। পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় শাসন কয়েম করছে। জনগনের সাথে প্রতারণা করছে। তিনি আজ শনিবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে কাজীর দেউরীস্থ এপোলো শপিং সেন্টারের টাইম স্কয়ার কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় কর্মীসভায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। মির্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রামে এসে দেখলাম এখানে অনেক ফ্লাইওভার করেছে। পাকা ড্রেন করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কি করেছে? সাধারণ মানুষের জন্য তারা কিছু দেখে না। দেড় বছরে লকডাউন লকডাউন খেলা করে সরকার মানুষের জীবিকা অর্জনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। যারা হকারি করতেন, স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেন, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। গরীব মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতারা লুট করে খেয়ে ফেলেছে। আমার কথা নয়, পত্রপত্রিকা খুললে দেখবেন আওয়ামী লীগ কিভাবে সারাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ড্রাইভার, তার একাউন্টে ৪০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে তারা ? আজ গরীব শুধু গরীব হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মোটা থেকে আরও মোটা, তাজা থেকে আরও তাজা আর বড়লোক থেকে আরও বড়লোক হচ্ছে। তিনি বলেন, হিন্দু ভাইদের দুর্গাপূজা, আমরা সবসময় এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যারা আছেন তাদের পাশে আমরা ভাইয়ের মতো দাঁড়াই সবসময়। বাবরি মসজিদের ঘটনার সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি তখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। যখন বাবরি মসজিদের ঘটনা ঘটল, ডিসি আমাকে ফোন করলেন, আপনারা দ্রুত একটু আসুন, আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। ডিসি সাহেব বললেন, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলায় জেলায় ফোন করে বলেছেন, বাংলাদেশে কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক সমস্যার সৃষ্টি না হয়। কোথাও যেন পূজামণ্ডপ অথবা মন্দির যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম,আমাদের সফল অর্জন সেদিন বাংলাদেশের কোথাও আমরা সেদিন কোনো ঘটনা ঘটতে দিইনি। আর এরা কি করেছে ? এদের ভেতরে এজেন্ট আছে। তাদের এজেন্ট দিয়েই ঘটনা ঘটাবার জন্য কুমিল্লার কাজটি করেছে। ওইটার সূত্র ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী আর চট্টগ্রামে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, এই চট্টগ্রামের লোক হাছান মাহমুদ সাহেব বারবার করে বলছেন, এর পেছনে নাকি বিএনপি আছে। এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন আপনারা। এসব ঘটনা যদি না ঘটান তাহলে জনগণ তার অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করবে। জনগণের আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য আপনারা এটা করছেন। এটা করতে না পারলে আপনাদের সমস্যা। পরিস্কার করে বলতে চাই, এখানে বিরোধী রাজনীতির কোনো সুযোগ রাখা হচ্ছে না। আমাদের মিটিং করতে দেয় না। মিটিং করতে গেলে পুলিশ মারে, মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এবারও পুলিশ মিথ্যা মামলা দেওয়া শুরু করেছে। চৌমুহনীর ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ-র‌্যাবের সামনে সন্ত্রাসীরা ভাংচুর করল আর আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা কোথাও নেই। এরা মিথ্যা কথা বলে। একটাও সত্য কথা কোথাও বলে না। জনগণের সঙ্গে সবসময় এরা প্রতারণা করে এসেছে। গত নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না এখন। নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলে না। বলে সার্চ কমিটি। ২০০৮ সালে অবৈধ মইনউদ্দিন ফখরুদ্দিনের সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় গেল। তারপর আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করল। তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুত কাজ করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাত কাজ করছেন। নেতা যারা আছেন, তারা কাজ করছেন। দলকে দ্রুত সংগঠিত করে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই দানবীয় সরকার, আওয়ামী লীগের সরকার, শেখ হাসিনার সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রধান বক্তা মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী সরকারের অধীনে হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অতীতে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। কারণ জনগণ এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। কারণ ভোট ডাকাত এই অবৈধ সরকারের উপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। জনগণ সরকারের পতন চাই, এই ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি পেতে চাই। বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়া মুক্ত হলে গনতন্ত্র মুক্তি পাবে। তাই এই ফ্যাসিবাদ ভোট ডাকাত সরকারের পতন ঘটিয়ে, দেশে গনতন্ত্র ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁর জন্য বীর চট্টলার মানুষ প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে অতীতের মতো আগামীতে চট্টগ্রামের মানুষ অগ্রভাগে থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই সরকারের অধীনে সার্চ কমিটি হতে পারেনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। সার্চ কমিটি যাকে পছন্দ তাকে দিয়ে করবেন। নির্বাচনের আগের দিন ভোট হয়ে যাবে। সেটা হবে না। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই মামলা দিচ্ছে সরকার। সরকারের এই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার জনগণ বুঝে গেছে। নির্বাচন নির্বাচন খেলার হতে দেওয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে। সে নির্বাচনগুলো নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠেনি। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একবার আওয়ামীলীগও নির্বাচিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে। তাদের হাতে দেশ ও স্বাধীনতা নিরাপদ নয়। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে মানুষের সাংবিধানিক সকল অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। এর থেকে উত্তোরণের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। এই সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। আইন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়ার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সচিব সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মাহবুব আলম, এড. মুফিজুল হক ভূইয়া, ইকবাল চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, নাজিম উদ্দীন আহমেদ, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাসেম, মন্জুর আলম মন্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মনজুর আলম চৌধুরী মনজু, কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।