স্বাস্থ্যের ‘বিতর্কিত’ নিয়োগ বাতিলই যথেষ্ট নয়: টিআইবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আড়াই হাজারের বেশি পদে নিয়োগের বিতর্কিত প্রক্রিয়া বাতিলের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ দাবি করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলেছে, অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফারের আড়াই হাজারের বেশি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রার্থীদের একটি অংশের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন মন্ত্রণালয় গঠিত নিয়োগ কমিটিরই দুই সদস্য। অবশেষে বিতর্কিত সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান।

নিয়োগ প্রার্থীদের ‘লিখিত পরীক্ষার খাতায় অস্পষ্টতা’ থাকায় নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে গত সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। একই সঙ্গে স্বল্প সময়ের মধ্যে ওই সব পদে নিয়োগের জন্য নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১ অধিশাখা) আনজুমান আরা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিলসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে শুধু ‘খাতায় অস্পষ্টতা পাওয়া গেছে’ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনায় আদৌ দুর্নীতি হয়েছে কি না কিংবা হয়ে থাকলে তাঁদের পরিচয় এবং কীভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে, তা অমীমাংসিত থেকে গেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করা হলো, সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা ঘুষ প্রস্তাব করার অভিযোগ ছিল। এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে কি না বা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নগুলো অবান্তর নয়। বরং আমরা মনে করি, দুর্নীতির যে ভয়াবহ বিস্তারের ইঙ্গিত সেই প্রতিবেদনে ছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য তদন্তের ভিত্তিতে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপই প্রত্যাশিত ছিল। আমাদের আশঙ্কা, অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ায় নিয়োগ বাতিল করে আপাতত বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং কার্যত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকেই টিকিয়ে রাখা হলো। পাশাপাশি এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কথিত ‘ওপর মহলে’র যোগসাজশের সন্দেহটাও ঘনীভূত হলো।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পক্ষ-বিপক্ষ বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।