শূন্য থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার করবে বিবিএস

    সবার তথ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো একটি জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাই প্রথমবারের মতো দেশের শূন্য থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার করতে যাচ্ছে বিবিএস। বিবিএস জানায়, এই জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টারে (এনপিআর) সব বাসিন্দার জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে এবং প্রত্যেকের জন্য একটি ১৬ ডিজিটের শনাক্তকরণ নম্বর দেয়া হবে বিধায় প্রত্যেককেই সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় জানানো হয়, এই রেজিস্টারের মাধ্যমে কেউ মারা গেলেও তার তথ্য মুছে যাবে না। প্রজন্ম থেকে এ জন্মান্তরের তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি এনপিআরের মাধ্যমে পারিবারিক ধারা প্রস্তুত করা হবে ও এতে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে। এতে প্রত্যেককে জন্মের পরপরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং মৃত্যুর পরও তার তথ্য মুছে ফেলা হবে না।

    কর্মশালায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মানুষের প্রাইভেসির বিষয়টা যেন সতর্কতার সঙ্গে ডিল করা হয়। এই ধরনের রেজিস্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে তোলাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশি সংস্থাগুলো আমাদের তথ্য নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। রেজিস্টার খাতে অভারলেপিং না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় ঘটে। অর্থের অপচয় আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, কত দিনে কাজটি শেষ করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন ঠিক করে সময়মত কাজটি শেষ করতে হবে। তবে এটা একটি মাইলফলক হবে। এখানে নাগরিকদের সব তথ্যেই থাকবে। এটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে ডুপ্লিকেশন, ওভারলেপিং বা এ ধরনের বিষয়গুলো যাতে না হয়। সময়, খরচ ও জটিলতা এড়াতে ধীর স্থিরভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই রেজিস্টার যাতে শক্তিশালী হয়। তথ্য সঠিক না হলে পরিকল্পনা সঠিক হবে না। বেইজ ইয়ার ডাটা দ্রুত ঠিক করা দরকার। তিনি বলেন, জনশুমারির করছি এটা এক ধরনের শুমারি। আমাদের হাউজ হোল্ড ডাটা বেজ করেছি। সেখানেও কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে। হাউজ হোল্ড ডাটা বেজ এনআইডি ডাটা বেজ, জনশুমারি এবং এনপিআর সবগুলোই কিন্তু কাছাকাছি। প্রত্যেকের আইডেন্টটিফিকেশন প্রত্যেকাতেই আছে। জটিলতা বাচানোর জন্য একটা উপদেষ্টা পরিষদ যদি থাকে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারি, আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবতী, বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিএসের পরিচালক ড. মো. শাহাদত হোসেন। প্রবন্ধে বলা হয়, নতুন এনপিআরে শূন্য থেকে শুরু করে সব বয়সী বাসিন্দার জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য একটি স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেককে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে সব ধরনের জনমিতিক পরিসংখ্যান, আগমন-বহির্গমন, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-তালাক প্রভৃতি তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুত করা সম্ভব।