যুদ্ধ, জাতিগঠনমূলক বিভিন্ন প্রকল্পসহ অন্য কর্মকা-ে গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে প্রতিদিন ২৯ কোটি ডলার করে খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হিসেবে দেশটিতে তারা যুদ্ধ করেছে মোট ৭৩০০ দিন। ফলে মোট খরচ প্রায় ২,১১,৭০০ (দুই লাখ এগার হাজার সাতশত) কোটি ডলার। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সংকলিত এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে বলে এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন ডন। এর মধ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে, কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছরের যুদ্ধে কমপক্ষে দুই লাখ কোটি ডলার খরচের খাত থেকে বেরিয়ে এসেছে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্ট থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থ যুবক, অতি ধনী কিছু মানুষের ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়েছে।
এসব আফগান যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। আর বিনিময়ে হয়ে গেছেন মিলিয়নিয়ার। এই কন্ট্রাক্টে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে দুর্নীতি জেগে উঠেছিল। আর তা পুরো আফগানিস্তানকে গ্রাস করে। ভেঙ্গে পড়ে এর ভঙ্গুর গণতন্ত্র। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এই রিপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসি এভাবেই মন্তব্য করে। তারা রিপোর্টে জানায়, আফগানিস্তান পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে এসব প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এত বেশি অর্থ খরচ করা হলেও, পুনর্গঠন করা হলেও, প্রতিটি প্রাদেশিক রাজধানী তালেবানদের দখল করতে সময় লেগেছে মাত্র নয়দিন। তারা সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। উৎখাত করেছে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারকে। পেন্টাগন ওয়াচডগ হিসেবে পরিচিত সিগার-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে দু’বারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী রায়ান ক্রুকার ৯/১১ পরবর্তী দুর্নীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আপনি জানেন যে, ব্যর্থতা ছিল আমাদের প্রচেষ্টায়। বিদ্রোহীদের জন্য আমাদের ব্যর্থতা নয়। এটা ছিল সীমাহীন এক দুর্নীতি।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বিশ্বাস করেন, আফগানিস্তানে যে ভয়াবহ দুর্নীতি তার অনেকটার জন্য দায় যুক্তরাষ্ট্রকেও বহন করতে হবে। কারণ, আফগানিস্তানের অর্থনীতি ধারণ করতে পারবে যা, তার চেয়ে বেশি শত শত কোটি ডলার দিয়ে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশটিকে। একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থায় আপনি এত বেশি অর্থ ঢালতে পারেন না।