জনবসতির শেষ ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করে সেতু

পলিকা খালের মতো বান্দরবানের শহরতলির বিক্রিছড়ার ওপর নির্মিত আরেকটি সেতুও কোনো কাজে আসছে না। এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

দুই সেতু মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। সেতু দুটির নির্মাণকাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এলজিইডির বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল সাদাত মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পলিকা খালের ওপর যে সেতু তৈরি হয়েছে, সেই বরাবর পাথুরে পাহাড় ঘেঁষে সড়ক নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মাণ হলে বিশাল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে।

বান্দরবান শহরতলির বিক্রিছড়ার ওপর নির্মিত সেতুর বিষয়ে এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, সেতুটি হওয়ায় শহর সম্প্রসারণ হয়ে পূর্ব পাশে জনবসতি হবে। মানুষের বসবাস গড়ে উঠলে সড়কও করতে হবে। এ জন্য জনপ্রতিনিধির অনুরোধে ও স্থানীয় ব্যক্তিদের আবেদনে সেতুটি করা হয়েছে।

অবশ্য এই দুই প্রকৌশলীর বক্তব্যের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, পলিকা খালের ওপারে পাথুরে পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি করা খুবই কঠিন। কিছু দূরেই আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেটা দিয়েই কাজ চালানো যেত। অভিযোগ উঠেছে, শহরতলির বিক্রিছড়ার ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে প্রভাবশালীদের সুবিধার জন্য।

সড়ক ছাড়া সেতু

বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে পলিকা খাল। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, খালের উত্তর পাশে পলিকাপাড়া এবং দক্ষিণ পাশে বনাঞ্চলে আচ্ছাদিত বিশাল পাথুরে পাহাড়। দুই পাশে কোনো সড়ক নেই। এই খালের ওপর ৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। গত জুনে এর কাজ শেষ হয়।

এ সেতুর প্রায় ১০০ গজ দূরে পাড়ার ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। নির্মাণাধীন এ সড়কের জন্য ২০১৭ সালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এই সেতুর পরে আলাদা সড়ক নির্মাণ করে দিলেই হতো। নতুন সেতুর দরকার ছিল না।

রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা প্রথম আলোকে বলেন, এলজিইডি যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করত, তাহলে ভালো হতো।

বসতির আশায় সেতু

বান্দরবান জেলা শহরতলির বিক্রিছড়ার ওপর নির্মাণ করা সেতুটি ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের। প্রকল্পে বিক্রিছড়া-মুসলিমপাড়া সড়কের ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণের কথা বলা হলেও সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব পাশে কুহালং ইউনিয়নে দুটি পরিবার বসবাস করে। পশ্চিম পাশে জেলা শহরের বালাঘাটার আমবাগানপাড়া। সেখানে বিক্রিছড়া-মুসলিমপাড়া নামের কোনো সড়ক নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিক্রিছড়ার পূর্ব পাশে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজনের জমি ছাড়া কোনো জনবসতি ও সড়ক নেই।

সম্প্রতি জনবসতিহীন এলাকাকে সংযুক্ত করে, অপ্রয়োজনে ও প্রভাবশালীদের বাড়ির কাছে সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ছিল ঢাকার খিলগাঁওয়ের মান্ডার ‘শেষ মাথা’ এলাকায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতু, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নে চেলা খালের ওপর ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার সেতু, পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদের ওপর ৭৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত সেতুসহ আরও কিছু সেতুর কথা ছিল।

বান্দরবানের সেতু দুটি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, কৌশলগত কারণে অনেক সময় আগে সেতু নির্মাণ করা হয়ে থাকে। তবে সেতু ও সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা একসঙ্গে নেওয়া উচিত ছিল। এখন সেতু হয়ে গেছে। সড়ক কখন হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকা যদি অপচয় হয়, সেটা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।