ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে চাই সচেতনতা

জাহেদ কায়সার

সারাবিশ্ব আজ কোভিড ১৯ এর মতো অদৃশ্য মহামারি ভাইরাসসের সংক্রমণে জর্জরিত। যার আক্রমনে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এখনো পর্যাপ্ত তেমন কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে একমাত্র সচেতনতাই পারে এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে। সারা পৃথিবী মত আমাদের দেশে ও গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এই ভাইরাস। দফায় দফায় লকডাউন – শাটডাউন দিয়ে ও টেকানো যাছে না এ-ই ভাইরাস কে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বাড়ায় চাপ বাড়ছে হাসপাতাল গুলো তে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও চিকিৎসার অভাব বেড়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল। করোনা ভাইরাস এর পাশাপাশি চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ । জেলা সিভিল সার্জন কার্যলয় সুত্রে জানা যায় গত জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২ জন মারা গেছেন। মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়য় চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশন মাসব্যাপী মশক নিধনেে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। ৩ দফায় ১০ দিন করে ৪১ টি ওয়ার্ডে এই কর্মসুচি চলবে। এদিকে দেশব্যাপী ডেঙ্গু ওচিকনগুনিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল গুলোতে দিনদিন বেড়ে চলেছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যেখানে করোনা রোগী সামাল দিতে ডাক্তার – নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু যেন মরার উপর খঁাডার খা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কোন শেষ নেই। সময় মত চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হতে পার। খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে দেশে। তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে সচেতনাা জরুরী। ডেঙ্গু হলো একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস নামের এক ধরনের মশার কামড়ে এ রোগ হয়। এই মশা গুলো দিনের বেলায় কামড়ায়। ডেঙ্গুজর কোনো৷ ভয়াবহ আতঙ্কজনক রোগ নয় তবে অসেচতনার কোন উপায় নেই। যেহেতু এটা ভাইরাসজনিত রোগ তাই সচেতন না হলে তা মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গুজ্বর ও এডিসমশা প্রতিরোধে করণীয় : ডেঙ্গুজ্বরের বাহক হলো এডিশ মশা।তাই এডিশ মশা প্রতিরোধ করতে পারলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। গ্রাম কিংবা শহর যেখানে যে পরিবেশ হকনা কেনো বড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড় অবশ্যয় পরিষ্কার রাখতে হবে।বিশেষকরে শহরাঞ্চলে যেহেতু এই রোগের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই শহরের প্রতিটি নর্দমা,ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মশা বাচ্চাফুটিয়ে বংশ বিস্তার না করতে পারে।নর্দমা, ড্রেনগুলোতে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে কোনভাবেই যাতে পানি জমতে না পারে। গ্রামে বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবেনা,ছোট পুকুর, নালারপাড়গুলো যথাসম্ভব পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।বাসাবাড়ি কিংবা রাস্তাঘাট কোন স্থানে ফলের ছোগলা, বোতল,অব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে রাখা যাবেনা। বাড়িতে ফুলের টব,ফুলদানী, হাড়িপাতিল,সরঞ্জামে যথাসময়ে পরিষ্কার রাখতে হবে পানি জমতে দেওয়া যাবেনা।কারণ এডিসমশা এগুলোতে লুকিয়ে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। মশা নিধনের জন্য মাঝেমাঝে বিষক্রিয়া স্পে করতে হবে। এতে লুকিয়ে থাকা মশাগুলো সহজেই বেরিয়ে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় দিন বা রাত ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যয় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। সাধ্যমতো এডিসমশা ধ্বংসের প্রতিষেধক ব্যবহার করা। পরিশেষে বলতে হয়, ডেঙ্গুজ্বর যেহেতু একটি ভাইরাসজনিত রোগ,আর এর বাহক এডিস মশা।মশা ক্ষুদ্র হলেও মানবজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। সর্বোপরি জনসচেতনতা সৃষ্টি ও পরামর্শ দিয়ে গ্রাম কিংবা শহরের সাধারণ মানুষকে এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। যতটা সম্ভব মশা নিধনসহ সচেতন ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথাযথভাবে চিকিৎসা পরামর্শ নিলে সহজে ডেঙ্গুজ্বর ও এডিসমশা প্রতিরোধ করে সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই আতঙ্ক নয় বরং সচেতনতায় পারে ডেঙ্গুরোগ থেকে বাঁচাতে।

লেখক:

সংবাদকর্মী, সংগঠক।