পদ্মার পানি শোধনে ওয়াসার মেগা প্রকল্প

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজশাহীর জনসংখ্যা। আর মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানির চাহিদাও।

ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে রাজশাহী মহানগরে পানির চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ সরবরাহ করে ওয়াসা।
কিন্তু বর্তমানে পানির স্তর ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রনসহ কিছু ক্ষতিকারক পদার্থও মিলছে। ফলে গ্রাহকদের নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ করাও ওয়াসার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পানির সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওয়াসা। এ প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে মহানগরীসহ গোদাগাড়ী, কাটাখালী এবং নওহাটা পৌরসভায় সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মহানগরীর পাশাপাশি আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দূর হবে।

রাজশাহী ওয়াসার একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের খসড়া সম্পন্ন করা হয়। পরের বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। ২০২১ সালের মার্চে রাজশাহী ওয়াসা চীনের ‘হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’- এর সাথে ‘রাজশাহী মহানগরীতে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ’ শীর্ষক ৪ বছর মেয়াদী একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রকল্প বাবদ চীন সরকারের থেকে প্রাপ্ত ঋণ রাজশাহী ওয়াসাকে পানি সরবরাহ বাবদ প্রাপ্ত আয় থেকেই পরিশোধ করা হবে।

প্রকল্পটি স্থাপন করা হবে রাজশাহী মহানগরী থেকে প্রায় ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুরে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ১০০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থিত পানি (পদ্মা নদী) ব্যবহার করে মহানগরবাসী ও পার্শ্ববর্তী পৌরসভাগুলির জন্য আয়রণ ও ম্যাঙ্গানিজমুক্ত নিরাপদ ও সুপেয় পানির কাভারেজ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২০১১ সালের ১০ মার্চ থেকে ওয়াসার কার্যক্রম চালু করে। তখন মহানগরীর ৩০ ওয়ার্ডের ১০৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৫৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করেছিল ওয়াসা। বর্তমানে ওয়াসা জনসংখ্যা ভিত্তিক পানির প্রাপ্যতা (কাভারেজ) ৫২ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশে উন্নীত করেছে। পানির কাভারেজ বাড়াতে পানি উৎপাদক নলকূপের সংখ্যা ৫৬টি থেকে ১১০টি করা হয়েছে। সঙ্গে পানির পাইপ লাইন ৫৫০ কিলোমিটার থেকে ৭১২ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক ১৩ দশমিক ৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ৯ দশমিক ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। উৎপাদিত পানির ৯০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ পানি।

জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকীর হোসেন বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়েছে। পরে একনেকেও প্রকল্পটি পাস হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহানগরীর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পৌরসভায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের টাকা দিয়ে শোধনাগার স্থাপন ছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণ এবং নতুন পাইপলাইন বসানো হবে। পুরনো পাইপলাইনগুলোও নতুন করে স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলের লাখো মানুষের পানির সমস্যা সমাধান হবে। পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন করে পানযোগ্য করে তোলার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরেও চাপ কমবে। এছাড়া রাজশাহী ওয়াসা সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য ‘রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ’ র্শীষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

একই প্রশ্নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ওয়াসার এই প্রকল্প মহানগরবাসীর শতভাগ পানির চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মহানগরবাসী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার নাগরিকদের পানির যে চাহিদা, সেটি শতভাগ মিটে যাবে। এতে মহানগরবাসী অনেক উপকৃত হবেন বলেও মন্তব্য করেন সিটি মেয়র।