বন্দর থেকে সব কনটেইনার নেওয়া যাবে অফডকে, শর্ত স্ক্যানিং

চলমান কঠোর লকডাউনে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে কনটেইনারে আমদানি করা সব চালান নেওয়া যাবে বেসরকারি আইসিডি বা অফডকে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ সুযোগ থাকবে।

এর আগে ৩৮ ধরনের পণ্যের চালান ১৯টি অফডকে নেওয়ার সুযোগ ছিল।
রোববার (২৫ জুলাই) এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মোহাম্মদ মেহরাজ-উল-আলম সম্রাটের সই করা অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জটের শঙ্কা সাময়িকভাবে দূর হলো।

চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউ’স (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) কনটেইনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে রোববার সকালে কনটেইনার ছিল ৪৩ হাজার ৫৭৪ টিইইউ’স। ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছে ১ হাজার ৯০১ টিইইউ’স। এ সময় আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার বন্দরে নেমেছে ৪ হাজার ২৪৩ টিইইউ’স। বন্দর জেটিতে কনটেইনারবাহী জাহাজ ছিল ৮টি, বহির্নোঙরে ১৫টি।

অফডক মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, ১৯টি অফডকে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউ’স। বর্তমানে অফডকে ৫৪ হাজার টিইইউ’স কনটেইনার আছে। এর মধ্যে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ১০ হাজার ৭০০ এবং রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ১৩ হাজার টিইইউ’স। বাকিগুলো খালি কনটেইনার। এনবিআরের নতুন আদেশ অনুযায়ী সব ধরনের আমদানি পণ্যের কনটেইনার অফডকে নেওয়া যাবে প্রায় ১৫ হাজার টিইইউ’স। যদি খালি কনটেইনার ফোর্স শিপমেন্ট করা যায় এবং আমদানিকারকেরা পণ্য খালাসের পরিমাণ বাড়ান তবে সংকট কেটে যাবে।

বন্দর ও কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার ঊর্ধ্বগতি রোধে দেশে শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এবার ওষুধসহ কয়েকটি খাত বাদে তৈরি পোশাক কারখানাসহ প্রায় সব ধরনের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের চালান খালাস কমে গেছে। প্রতিদিনিই বাড়ছে কনটেইনারের সংখ্যা। কনটেইনার জট নিরসনে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের আসা সব ধরনের পণ্যচালান সংশ্লিষ্ট কনটেইনার চট্টগ্রামের ১৯টি অফডকে সংরক্ষণ, আনস্টাফিং ও খালাসের অনুমতি দিয়েছে এনবিআর। এক্ষেত্রে অফডকে স্থানান্তরের সময় শতভাগ কনটেইনার আবশ্যিকভাবে স্ক্যানিং করার এবং স্ক্যানিংয়ের রিপোর্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণের শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি শর্ত হচ্ছে- অফডকে স্থানান্তরিত সব বাণিজ্যিক পণ্যচালান আবশ্যিকভাবে কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যৌথভাবে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে পাওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এম ফখরুল আলম বলেন, ২০২০ সালে লকডাউনের সময় যখন বন্দরে কনটেইনার জট হয়েছিল তখন এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী অফডকে প্রায় সব ধরনের পণ্যচালানের কনটেইনার নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবারও অনুরূপ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কাস্টমসের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে। আমার আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। আমদানিকারকেরা খালাসের হার বাড়ালে আশাকরি কনটেইনার জট হবে না। কোরবানির ছুটির পর আজ থেকে কনটেইনার খালাস ও শুল্কায়ন কার্যক্রম বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, অফডকে সব ধরনের আমদানি পণ্যের কনটেইনার নেওয়ার বিষয়ে এনবিআরের অফিস আদেশ পেয়েছি আমরা। যত দ্রুত সম্ভব এ আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বন্দরের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন ও স্টেক হোল্ডারদের শুক্র, শনি ও রোববারসহ সরকারি ছুটির দিনেও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও ফ্রোজেন ফুডের এফসিএল কনটেইনার/কার্গো দ্রুত ডেলিভারি নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে বন্দরের পক্ষ থেকে।