পেগাসাস স্পাইওয়্যারের জন্য রাতে ভালো ঘুমাতে পারে: নির্মাতা

পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে দেশে দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য দিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। ইসরায়েলি এই সাইবারনিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান বলেছে, বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে এ ধরনের প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার কারণেই বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে এবং রাস্তায় নিশ্চিতে চলাচল করতে পারে।

আজ শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইসরায়েলের সাবেক সাইবার গোয়েন্দাদের হাত ধরে ২০১০ সালে গড়ে ওঠে তেল আবিবভিত্তিক এনএসও গ্রুপ। তাদের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন পোস্ট, ভারতের দ্য ওয়্যারসহ ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি একযোগে এই খবর প্রকাশ করেছে। এনএসও গ্রুপের গ্রাহক বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী দেশের সেনাবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা। বিভিন্ন ব্যক্তির ফোনে আড়ি পেতে তাঁদের সংগৃহীত তথ্য ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ‘ব্যাকডোর’ দিয়ে দেখতে পান বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর আগেও একবার ভারতে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের অপব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে এনএসও গ্রুপ বলেছিল, গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের বাইরে কাজে লাগানোকে এর অপব্যবহার হিসেবে বিবেচনা করে তারা, চুক্তিতেও তার উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, ‘কোনো ধরনের অপব্যবহার ধরতে পারলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য মানবাধিকার রক্ষা, তার মধ্যে রয়েছে জীবনযাপনের অধিকার, নিরাপত্তা, ব্যক্তির চলাচলের স্বাধীনতা। সে কারণে আমরা ব্যবসা ও মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের নির্দেশনার মূলনীতিগুলো মেনে চলার চেষ্টা করেছি, যাতে সব মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের পণ্যগুলো পরিচালিত হয়, সে জন্য এই প্রচেষ্টা।’

কণ্ঠরোধের নতুন বৈশ্বিক অস্ত্র পেগাসাস
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, নজরদারির এই প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করে না। এ ছাড়া গ্রাহকদের সংগৃহীত তথ্য তাদের দেখার সুযোগ নেই।

এনএসও গ্রুপের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ রাতে ভালোভাবে ঘুমাচ্ছে এবং রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করছে। এ জন্য পেগাসাস ও এ ধরনের প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ। কারণ, সেগুলো বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ ও শিশু যৌন নিপীড়ক চক্রকে প্রতিরোধ ও তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে সাহায্য করছে। এসব চক্র এনক্রিপটেড অ্যাপগুলোর ছায়ায় থেকে গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, বিশ্বের আরও অনেক সাইবার ইন্টেলিজেন্স কোম্পানির সঙ্গে মিলে এনএসও বিভিন্ন দেশের সরকারকে সাইবার জগতে গোয়েন্দাগিরির টুল সরবরাহ করেছে। কারণ, সারা বিশ্বের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অন্ধকারে ছিল। তাদের কাছে এমন কোনো সমাধান ছিল না, যাতে তারা ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নজরদারি করতে পারে।

‘একটি নিরাপদ বিশ্ব’ গড়তে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্ট করছেন বলে দাবি করেন এনএসও গ্রুপের ওই মুখপাত্র।

ভারতের কাছে এই স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়েছে কি না, সে বিষয় নিশ্চিত বা নাকচ কোনোটিই সে সময় করেনি এনএসও গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, ‘সন্ত্রাস ও গুরুতর অপরাধ বিষয়ে অনুসন্ধান এবং তা প্রতিরোধের লক্ষ্যেই সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেই তাদের পণ্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।’

সাম্প্রতিক বিতর্কের মধ্যে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে ইসরায়েল সরকার। তা ছাড়া এই স্পাইওয়্যার ব্যবহারের লাইসেন্স দেওয়ার পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে এনএসও গ্রুপের প্রধান নির্বাহী শালেভ হুলিও বলেছেন, ‘তদন্ত হলে খুবই খুশি হব। কারণ, আমরা নিজেদের বিষয় স্পষ্ট করার সুযোগ পাব।’