জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল দলের কাছে হার

টি-টোয়েন্টিতে ১৬৭ রানের লক্ষ্য আহামরি কিছু নয়। প্রতিপক্ষ যদি হয় জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল, তাহলে তো কথাই নেই।

কিন্তু এমন লক্ষ্যও ব্যাটিং ব্যর্থতায় তাড়া করতে পারলো না বাংলাদেশ। একমাত্র অভিষিক্ত শামীম হাসান যা একটু চেষ্টা করলেন। বাকিরা ব্যস্ত থাকলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের এই জয়ের পর সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছে। এর আগে প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ দুই দলের পূর্ণাঙ্গ সিরিজে প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে। সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আশা সিরিজ বাঁচিয়ে রাখল জিম্বাবুয়ে।

শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৬৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে। জবাবে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে বাংলাদেশ।

১৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় খুব বাজে। দলীয় ১৭ রানের মাথায় দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ নাইম শেখ ৮ বলে ৫ রান (বোল্ড) ও সৌম্য সরকার (ক্যাচ) ৭ বলে ৮ রান করে আউট হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। এছাড়াও দলীয় ৪৫ রানে ১০ বলে ১২ রানে সিকান্দার রাজার হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব এবং অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৬ বলে ৪ রান করে। ১৯ বলে ১৫ রান করে আউট হন মেহেদি।

দলীয় ৪৫ রানে সাকিব, ৫২ রানে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ এবং ৫৩ রানের মাথায় আউট হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন মেহেদি। অর্থাৎ ৮ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট। সবমিলিয়ে দলীয় ৫৩ রানের মাথায় ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপর আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা নুরুল হাসান মাত্র ৯ রান করে বিদায় নিলে বিপদে পড়ে যায় টাইগাররা।

বাংলাদেশ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন অভিষিক্ত শামীম হোসেন। যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন চোখ ধাঁধানো কিছু শট খেলেছেন লিটন দাসের পরিবর্তে দলে আসা এই তরুণ। আফিফের সঙ্গে ২৩ বলে ৪১ রানের জুটিও গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু লুক জঙওয়ের বলে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দিলে শেষ হয় তার ১৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ২৯ রানের ইনিংস। এর মধ্যে ১৫তম ওভারে তিনি ছক্কা মারার পর টানা দুই বলে হাঁকান বাউন্ডারি।

মূলত শামিমের বিদায়ের পর ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ওই ওভারের চতুর্থ বলেই অবশ্য ছক্কা হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু এক ওভার পরেই ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করা আফিফ (২৪) ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দিলে বড় ধাক্কা খায় সফরকারীরা।

হলে শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশ প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। সেখান থেকে শেষ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১ রান। ওভারের প্রথম বল ওয়াইড হওয়ার পর বাউন্ডারি হাঁকান সাইফউদ্দিন। কিন্তু পরের বলেই এক্সট্রা কভারে ক্যাচ তুলে দেন এই বাঁহাতি (১৯)। আর পঞ্চম বলে তাসকিনের বিদায়ে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় জিম্বাবুয়ে। এরপর মাধেভেরের ৭৩ ও বার্লের ঝড়ো ৩৪ রানের ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা।

জিম্বাবুয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ব্রেক থ্রু দেন মেহেদি হাসান। তার বলে বোল্ড হয়ে যান মারুমানি (৩)। এরপরই শূন্য রানে জীবন পান রেগিস চাকাভা। তাসকিনের বলে ক্যাচ উঠেছিল। শরীফুল আর মিরাজ দুজনেই দৌঁড় দেন ক্যাচ ধরতে। শেষ পর্যন্ত কেউই ধরতে পারেননি। ৯ বলে ১৪ রান করা সেই চাকাভাকে পরে শরীফুলের তালুবন্দি করেন সাকিব।

পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। এরপর ডিয়ন মায়ার্সকে নিয়ে এগিয়ে যান মাধেভেরে। মায়ার্সের সঙ্গে ৪৯ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়ার পথে ৪৫ বলে তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। অবশ্য এরপরই মায়ার্সকে (২৬) বিদায় করে জুটি ভাঙেন শরীফুল। পাঁচে নামা জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে (৪) রান আউট করে ফেরান সৌম্য সরকার।

একপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতন অব্যাহত থাকলেও মাধেভেরেকে টলানো যায়নি। দুর্দান্ত সব শট খেলে তিনি দলের ইনিংস প্রায় একাই টেনে নিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১৮তম ওভারে শরীফুলের বলে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিলে শেষ হয় তার ৫৭ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস। দুর্দান্ত এই ইনিংসটি তিনি ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজিয়েছেন।

শেষদিকে মাত্র ১৯ বলে ৩৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন রায়ান বার্ল। এরমধ্যে সাইফউদ্দিনের করা ১৯তম ওভারে আসে ১৬ রান, এর মধ্যে একটি বিশাল ছক্কাসহ ১২ রানই বার্লের। শরীফুলের করা শেষ ওভারেও ডিপ মিডউইকেটে ছক্কা হাঁকান তিনি। অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার আগে ২ ছক্কা ও ২ চার হাঁকিয়েছেন তিনি।

বল হাতে বাংলাদেশের শরীফুল নিয়েছেন ৩ উইকেট। সাকিব ও মেহেদী ১টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন।

ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওয়েসলি মাধেভেরে।