হাটহাজারী প্রতিনিধিঃ
কয়েক বছর না যেতেই

হাটহাজারী প্রতিনিধিঃ
কয়েক বছর না যেতেই হাটহাজারীতে সরকারের পক্ষ থেকে ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে দেওয়া উপহার ”বীর নিবাস” এর লাল-সবুজ রঙে রাঙানো দেয়ালের নানা স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় চরম আতংকে দিন পার করছেন ভবনে বসবাসকারীরা। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় সরকারের দেওয়া এ উপহারটি অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । ঠিকাদার আর প্রকৌশলীদের গাফিলতিতে এ অবস্থা হয়েছে বলে দাবী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

জানা যায়, সারা দেশে ২ হাজার ৭২০ জন ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারকে পাকা বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বীর নিবাস নামের একতলা এই বাড়িগুলোয় দুটি শয়নকক্ষ, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও শৌচাগার আছে। শুধু আবাসিক ভবনই নয়, প্রতিটি বাড়িতে গরু, হাঁস, মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে একটি করে নলকূপ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এ রকম ২ হাজার ৯৭১টি বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা।মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ৮৫৫টি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ৭৪টি ইউনিটের কাজ চলছে। যদিও ২০১৬ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করার কথা ছিল। তার মধ্যে চট্টগ্রামে জেলায় ৯৪টি পাকা বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। ্মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, এই বাড়ি তাঁদের আবাসনের কষ্ট দূর করেছিল সত্য, কিন্তু ভবনে ফাটল ধরায়, নিম্নমানের ভবন হওয়ায় এখন তাঁদের মনের ভেতরেও ফাটল ধরেছে। তাঁদের মন ভেঙে গেছে। ভবনের রং উঠে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ভবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। চার বছরের মধ্যেই অধিকাংশ বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সরকার আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা চির কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি আমাদের জন্য একতলা ভবন ও ভাতা বৃদ্ধি করে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন অর্জনকে যারা নষ্ট করতে চাই তাদের মধ্যে কিছু আমলা ও ঠিকাদার রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বীর নিবাসে ঠিকাদারেরা ঠিকমতো কাজ করেননি। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার প্রকৌশলীদের কাছে গিয়েছেন তিনি। তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর মিয়ার বড় ছেলে মো: হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘দেয়ালে এমনভাবে ফাটল ধরেছে যে ঘরের মধ্যে থাকতে ভয় পাচ্ছি।’ কারণ এ বীর নিবাসে বেস আর ছাদ ঢালাই লোহার ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো ভবন ইটের পিলারের উপর ভর করে দাড়িয়ে আছে। তার মধ্যে ফাটল যা আরও বেশি আতংকিত মনে করছি। যদি কোন ভুমিকম্প হয় তা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। উপজেলার ধলই ইউনিয়নে এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা বাদশা আলমের স্ত্রী হাজেরা বেগম অভিযোগ করেন, ‘ঠিকাদার কোনোমতে কাজ করেছে। এখানে থাকতে ভয় পাচ্ছি।’নির্মাণের তিন বছরের মধ্যেই খসে পড়ছে পলেস্তার। তারপরও শেষ বয়সে স্বস্তি। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি জীবনের শেষ বয়সে এমন একটা বাড়ি পাব। বীর নিবাস পেয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে সরকারের এই উপহার সমাজে তাঁদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।

হাটহাজারী উপেেজলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো নুরুল আলম বলেন, আমরা ৮টি বীর নিবাস পেয়েছি এবং সেগুলো মাননীয় এমপি মহোদয় বিগত ৯ এপ্রিল ২০১৬ সালে উদ্বোধন করেন। তবে যারা মাননীয় প্রধ্নামন্ত্রীর উপহার এ বীর নিবাস পেয়েছেন। তাদেরকে কাজগুলো তদারকি করতে বলা হয়েছে এবং কোন সমস্যা হলে আমাদেরকে জানাতে বলেছি। এরপরও বীর নিবাসগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে তাই এমন সমস্যা হয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী চৌধুরী মো: আসিফ রেজা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বীর নিবাসের ফাটল সেটা আমি দেখছি। তবে এসব কাজগুলো ঠিকাদারের মেয়াদ থাকে এক বছর পর্যন্ত। কারণ এসময়ের মধ্যে তাদের জামানত জমা থাকে। তাই বীর নিবাসের ছোটখাট সমস্যাগুলো তাদেরকেই সমাধান করতে হবে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)মোহাম্মাদ রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ”হাটহাজারীতে ”বীর নিবাস” নামে কোন প্রকল্প কিংবা বরাদ্দ আসছে বলে আমার জানা নেই। এ ধরনের নাম কিংবা প্রকল্পের কথা প্রথম জানলাম। এমন কোন তথ্য কিংবা কাগজপত্র আপনার (অপর এক প্রতিবেদক) কাছে থাকলে অফিসে এসে দিয়ে গেলে ভাল হবে”।

চট্টগ্রাম জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আমিরুজ্জামান বলেন, আমি নতুন আসছি তাই কতটি বীর নিবাস আছে তা আমার জানা নেই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বীর নিবাস নির্মাণের বিষয়ে ফাটল এবং ঝুঁকিপূর্ণ তা তদন্ত করে দেখছি।