নিখোঁজ- মোহাম্মদ হোসেন

নিখোঁজ
মোহাম্মদ হোসেন
বাসর রাতে নববধূর মুখে গরল কথা শুনে সরলমনা আবদুল লতিফ একেবারে থ। মাথায় যেনো বাজ পড়েছে এমন অবস্থা হয়েছে তার। কিছুক্ষণ হা করে চেয়ে থাকে সুন্দর মুখটির দিকে। তারপর কোনো কথা না বলে ভগ্ন হৃদয়ে নেমে আসে ফুলশয্যার খাট থেকে। মাথার মুকুটটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ঝুলবারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় অশ্রুসজল চোখে। দূর আকাশের দিকে চেয়ে দেখে, কোথাও কোনো তারা নেই। রুপালী আলো দেয়া চাঁদ মামাকেও দেখা যাচ্ছে না কোথাও। কিছুটা মেঘলা মেঘলা ভাব। তবে কি বৃষ্টি নেমে আসবে আকাশ থেকে? ভালোই হবে। বৃষ্টির জলের সাথে চোখের জল মিশে একাকার হয়ে যাবে।
“খবরদার আমাকে ছোঁবেন না। এই দেহ আমি বন্ধক রেখেছি আমার বন্ধুর কাছে। আমরা কয়েকবার মিলিত হয়েছি। আবারও হবো। বাবা-মা জোর করে আমাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিয়ে আমি মানি না। কখনো মানতে পারবো না।” বিয়ের পোশাক পরে থাকা নতুন বউয়ের মুখ থেকে এমন বিষমাখা বর্শার ফলার মতো কথা শোনার পর কী করা উচিত আবদুল লতিফ ঠিক জানে না। শুধু জানে, মনে ঠাঁই না পেয়েও জোর করে বাঁকা নদীর পিছল ঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়তে চাওয়ার মতো বিড়ম্বনা আর হয় না।
টাকাও দিলাম আশি, বিয়েও করলাম বাসি- এ কথাই বারবার মনে আসছে আবদুল লতিফের। এছাড়াও মন পবনের নাওয়ে চড়ে আরও কিছু আকাশপাতাল ভেবে ভেবে সারারাত কাটিয়ে দেয় ঝুলবারান্দায়। তারপর ভোরের আলো একটুখানি ফুটতেই দীর্ঘ প্রবাসজীবনে থাকা বাপ-মাহারা আবদুল লতিফ রাস্তায় নেমে যায়। হাঁটতে হাঁটতে বিয়ের পোশাক গায়ে রেখেই কোথায় যে চলে যায় কেউ জানে না। কেউ তাকে আর দেখেনি কোনোদিন।