কাপ্তাইয়ে আরো ৭৩ পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই।

কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালি পাড়ার মারমা পাড়া গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে বড়ইছড়ি-ঘাগড়া সড়কে প্রায় ৮ কিমি সড়ক পথ পেরিয়ে ওই পাড়ায় পৌঁছতে হয়। সেখানে পৌঁছালেই রাস্তার ধারে দেখা যাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য কাপ্তাই উপজেলার ‘ক’ শ্রেণীর ২য় পর্যায়ের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গত সোমবার (৭ জুন) বিকেলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান ওই এলাকায় যান। এখানে মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসাবে ভূমিহীনদের ২ শতক খাসজমি বরাদ্দসহ ৩ টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরন্জিত তনচংগ্যা ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এব্যাপারে মুরালির মারমা পাড়ার স্বামী পরিত্যক্ত প্যারালাইসিসে আক্রান্ত মিসাংপ্রু মারমার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, অনেক কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে পাওয়া এই ঘর আমাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে।
পাহাড়ী উঁচু নীচুঁ প্রায় ৩শ’ সিঁড়ি বেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেখতে যান আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মানাধীন উচাংচিং মারমার ঘর। তিনিও জানান, তার স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, থাকার ঘর নেই, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে পাওয়া এই ঘর আমাকে সন্তানদের নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৩ জুন পাহাড় ধ্বসে মুরালি পাড়ায় স্বামী-স্ত্রী মারা যান, তাদের অসহায় সন্তানদেরকেও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান বলেন, কাপ্তাই উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে দেওয়া দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৮ টি ‘ক’ শ্রেণীর ঘরের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ঘর গুলো অতি দ্রুত উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। তিনি জানান, কাপ্তাই উপজেলার অনেক দূর্গম এলাকায় যেখানে পরিবহন করে মালামাল নেওয়া সম্ভব নয়, সে সমস্ত এলাকাতেও মাথায় করে সরঞ্জামাদী নিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইউএনও আরো জানান, পার্বত্যাঞ্চলে একেকটা ঘর নির্মাণের দুরত্ব অনেক, তাই সমতল এলাকা থেকে এ অঞ্চলে ঘর নির্মাণ করা একটু কষ্টসাধ্য।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, সরকারের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে নির্মানাধীন প্রতিটি ঘরের জন্য ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান,তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘরগুলো নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে ১১টি, রাইখালী ইউনিয়নে
২০ টি, চিৎমরম ইউনিয়নে ২২টি, কাপ্তাই ইউনিয়নে ৩টি এবং ওয়াগ্গা ইউনিয়নে
১৭টি ঘর পাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। ইতিমধ্যে ৩০টি ঘর ভূমিহীনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করেছেন। বাকি ঘর গুলো দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া কাপ্তাইয়ের চিৎমরমের উজানছড়ি পাড়ার দরিদ্র প্রসিংমা মারমা আবেগ-আপ্লুতভাবে জানান, তার স্বামী নেই, থাকার ঘরটা ছিলো জরাজীর্ণ অবস্থায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘর পেয়ে তিনি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
ওয়াগ্গা রামছড়া এলাকার দরিদ্র মুন্নি তুরিও জানান, তার ঘরে বৃষ্টি হলে পানি পড়তো, কোন রকমে তারা রাত পার করতেন, এখন প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার তাদেরকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এছাড়া, কাপ্তাই উপজেলায় ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ শ্রেণীর ৭টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।