শত্রুবাহিনীর নজর এড়িয়ে যে গুহায় প্রিয়নবী ৩ দিন অবস্থান করেন

যখন মক্কার লোকেরা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে চরমভাবে বিরোধীতা শুরু করে। নবুয়তের অষ্টম বছর পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ ছিল যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের অধিকাংশ সাহাবী, অনুসারীকে মদিনাসহ অনেক অঞ্চলে হিজরতের নির্দেশ দেন। আর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় মক্কায় অবস্থান করেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মক্কা থেকে রাতের বেলা হিজরতের পর প্রথম মনজিল ছিল জাবালে সাওর এর গুহা। যেখানে প্রকাশ পেয়েছিল ৩টি অলৌকিক ঘটনা। যে কারণে মক্কার শত্রুবাহিনী এ গুহাকে সন্দেহ পোষণ করেনি।
সওর পাহাড়। ইসলাম ধর্মে এই পাহাড়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মক্কা শরিফ থেকে তিন মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। মক্কায় কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হয়ে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ(স.) এই পর্বতের একটি গুহায় তিনদিন লুকিয়ে ছিলেন। এই পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭৪৮ মিটার আর পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রায় ৪৫৮ মিটার ওপরে। গুহাটি পাহাড়ের ওপরে এক পাশে অবস্থিত, যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ১.২৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩.৫ ও ৩.৫ মিটার। কয়েক একর জায়গাজুড়ে চূড়াটার অবস্থান। মাঝ বরাবর মাথা উঁচু করে আছে কয়েকটা পাথরে চাই। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। তার ওপর চেপে বসে আছে কয়েকটা বিরাট বিরাট পাথর। এরই নিচে গুহাটা। তাতে দাঁড়ানো যায় না। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে বসে থাকতে হয়।
হিজরতের আগে মক্কার ইসলাম বিদ্বেষীরা ‘দারুন নাদওয়া’ বৈঠকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিরতরে হত্যার পরিকল্পনা করে। তিনি যখন রাতে নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, আল্লাহ তখন তাকে হিজরতের নির্দেশ দেন। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার বিছানায় রেখে প্রিয় সঙ্গী হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। আল্লাহ তাআলা সশস্ত্র কুরাইশ বাহিনীর সামনে দিয়ে সঙ্গী আবু বকরকে নিয়ে নিরাপদে মক্কার ৪ মাইল উত্তরে সাওর পাহাড়েরর একটি গুহায় আশ্রয় নেন।যেখানে সে রাতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিরতরে হত্যার জন্য তাঁর ঘরের চারদিকে শত্রুবাহির টগবগে যুবকরা অপেক্ষা করছিল। অথচ তাদের চোখের সামনে দিয়ে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন, তারা টেরই পায়নি। সুবহানাল্লাহ! সকাল হয়ে গেলে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে ঢুকে বিছানায় গিয়ে দেখতে পান যে, হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু শুয়ে আছেন। তাঁর হিজরতের বিষয়টি শুনতে পেয়ে কুরাইশ বাহিনীর টগবগে যুবকরা তাদের পিছু নেয়। কুরাইশ বাহিনী পিছু নেবে এটি বুঝতে পেরেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গী আবু বকরসহ সাওর পর্বতের গুহায় তিনদিন অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে মক্কার শত্রুবাহিনী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খুঁজতে খুঁজতে সাওর পাহাড়ের গুহার সন্নিকটে এসে উপস্থিত। যেখানে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু গুহায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। আর এ গুহায় অবস্থান গ্রহণ করেন। আল্লাহ তাআলা এ সময় শত্রুবাহিনী থেকে তাদের রক্ষা করেন।আল্লাহর হুকুমে ওই গুহার মুখে মাকড়সা এমনভাবে বাসা বেঁধে রাখে। আর কবুতর এমনভাবে বাসা বেঁধে তাতে ডিমে তা দিতে থাকে। যাতে কোনো মানুষ প্রবেশের চিহ্ন অবশিষ্ট থাকে না।কুরাইশ শত্রুরা গুহার কাছে এসে মাকড়সার বাসা এবং কবুতরের ডিমে তা দেয়ার বিষয়টি দেখে তার মনে করেন যে এ গুহায় কোনো মানুষের প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তাই তারা গুহায় প্রবেশ না করে চলে যায়। এটি ছিল সাওর পর্বতের গুহার ৩য় অলৌকিক ঘটনা। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে হেফাজত করেছিলেন। সাওর পর্বতের গুহায় নিরাপদে ৩ দিন ও ৩ রাত অবস্থানের পর প্রিয় নবী (সা.) পবিত্র নগরী মদিনায় হিজরত করেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের এ অনন্য নিদর্শনটি দেখার সৌভাগ্য দিন আমিন
ছবি- বা বুল কাবা হজ কাফেলা টিম

Babul Kaba Hajj Kafela