হালদা নদীর পাড়ের জেলেদের করুণ অবস্থা, দুঃখ দুর্দশা দেখার কেউ নেই

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে এক সময়ে জাল বসিয়ে মাছ শিকার করতো জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা । হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদী থেকে মাছ শিকার নিষ্দ্বি করার পর থেকে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন বাপদাদার পেশা মাছ শিকার ছেড়ে দিয়ে দিনমজুর, মাছ ব্যবসা, কৃষি কাজ, তরিতরকারীর ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো নেই, তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ করেছে তারা।

হালদা নদীর উপকারভোগি জেলেদের পুনঃবাসনের জন্য হালদা প্রকল্পের জন্য বরাদ্ব দেওয়া অর্থ থেকে স্বল্প সুদে প্রতিজন জেলে পরিবারকে দশ হাজার টাকা ঋন দেওয়া হয় গত ৭ বৎসর পুর্বে । জেলেরা ঋন নিয়ে অন্য পেশা চলে যাওয়ার পর ঋনের টাকা পরিশোধ করে দেয় । মৎস বিভাগ জেলেদের তালিকা তৈয়ারী করে জেলেদের পরিচয় পত্র প্রদান করে। হালদা নদীর মাছ শিকার করে জিবিকা নির্বাহী কারী জেলেরা হালদা নদী থেকে মাছ শিকার না করে অন্য পেশায় চলে গেলেও জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন দশ হাজার টাকা ঋনের টাকা ব্যতিত অন্য কোন সহায়তা পায়নি বলে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেন। হালদা নদীর মাছ শিকার বন্দ্ব হয়ে যাওয়ায় রাউজানে জেলে সম্প্রদায়ের বাসিন্দ্বারা অধিকাংশ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন । অনেক জেলে পরিবারের বসত ঘর জরার্জীন অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন । রাউজান উপজেলার কচু খাইন, মইশকরম, ডোমখালী, আজিমের ঘাট,সোনাইর মুখ, গহিরা মেবারক খীল, পশ্চিম গহিরা, উত্তর গুজরা, কাগতিয়া, মগদাই, আবুর খীল, ইন্দ্বিরা ঘাট, নোয়াপাড়া চৌধুরী হাট, ঝিকুটি পাড়া এলাকায় রয়েছে কয়েটি জেলে পল্লী। একসময়ে হালদা নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো অর্ধসহস্রাধিক জেলে পরিবার । হালদা নদীর মা মাছ শিকার বন্দ্ব করে দেওয়ার পর জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন বাপদাদার পেশা মাছ শিকার ছেড়ে দিয়ে দিনমজুর, নির্মান শ্রমিক, গরুর ব্যবসা, মাছ ব্যবসা, মৎস প্রকল্পের পুকুর জলাশয়ে ভাড়ায় জাল দিয়ে মাছ ধরে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে ।

সরেজমিনে পরিদর্শন কালে দেখা যায় রাউজানের নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ইন্দ্বিরা ঘাট জলদাশ পাড়ায় রয়েছে ৩০টি জলদাশ পরিবার । ইন্দিরা ঘাট জলদাশ পাড়ার জেলে সম্প্রদায়ের বসতঘর গুলো জরার্জিন অবস্থায় । ইন্দ্বিরা ঘাট জলদাশ পাড়ার বাসিন্দ্বা চিত্র জলদাশ বলেন, এক সময়ে হালদা নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা র্নির্বাহ করতাম। হালদা নদী থেকে মাছ শিকার বন্দ্ব করে দেওয়ার পর থেকে গরুর ব্যবসা করছি । চিত্র জলদাশ আরো বলেন, বাপদাদার পেশা মাছ শিকার ছেড়ে দেওয়ার পর সরকারের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ঋন পেয়েছি। ঋনের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি । জেলে সম্প্রদায়ের বাসিন্দ্বাদের আর কোন সহায়তা দেয়নি কেউ। ইন্দ্বিরা ঘাট এলাকার জেলে পরিবারের বাসিন্দ্বা হরিলাল জলদাশ বলেন, আমার বসতঘর জরাজীর্ন টাকার আভাবে ঘর নির্মান করতে পারেনি। জরার্জীন ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছি । সরকার গৃহহীনদের ঘর নির্মান করে দিলে ও আমারা জেলে হওয়ায় আমাদের ভাগ্যে একটি সরকারী ঘর জুটেনি । ইন্দ্বিার ঘাট এলাকার জেলে পল্লীতে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস কারী ধীমান জলদাশ বলেন আমার বসতঘর নেই, পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করছি । সরকারের গৃহহীন পরিবারকে নতুন ঘর নির্মান করে দিয়ে পুনঃবাসন করছেন আমি সরকারের কাছে একটি নতুন গৃহ ও জমি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি । ইন্দ্বিরা ঘাট জলদাশ পাড়ার ৭০ বৎসরের বৃদ্বা মহিলা সাইবার জলদাশ বলেন, হালদা নদীর মাছ শিকার বন্দ্ব করে দেওয়ার পর থেকে আমার ছেলে সাধন জলদাশ অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে । অনেক কষ্ট করে নাতি রনি জলদাশকে লেখাপড়া করালে ও নাতি রনি জলদাশ অনেক চেষ্টা করে ও চাকুরী নামক সোনার হরিণের সন্দ্বান পায়নি । রাউজানের পুর্ব গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার বাসিন্দ্বা নেপাল জলদ্শা বলেন, হালদা নদীতে মাছ শিকার বন্দ্ব করে দেওয়ার পর উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার ৪০টি পরিবারের জেলেরা বাপ দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে দিনমজুর, নির্মান শ্রমিক, মৎস প্রকল্পের পুকুর জলাশয়ে ভাড়ায় জাল দিয়ে মাছ ধরা ও বিবাহ কোন অনুষ্টানে বাদক হিসাবে বাদ্য বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি । উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার বাসিন্দ্বারা হালদা নদীর মাছ শিকার করা ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন পেশার কাজ করে তাদের ছেলে মেয়েদের অনেক কষ্টে লেখপড়া করাচ্ছেন । উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার নেপাল জলদাশের পুত্র হারাধন জলদাশ লেখাপড়া শেষ করে কোন চাকুরী না পেয়ে প্রতিদিন টিউশনী ও নোয়াপাড়া কসমিক হাসপাতালে খন্ডকালীন চাকুরী করছেন । উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার বাসিন্দ্বারা আরো বলেন, হালদা নদীর মাছ শিকার বন্দ্ব করার পর থেকে একবার স্বল্প সুদে ১০ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছি । ঋনের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে । ১০ হাজার টাকা ঋন ব্যতিত জেলে পরিবারের সদস্যরা আর কোন সাহায্য পায়নি । উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার ৪গটি পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য কয়েকটি টিউবওয়েল থাকলে ও টিউবওয়েল গুলো অকেজো হয়ে পড়েছে । এছাড়া ও উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়া এলাকার বাসিন্দ্বাদের বসতবাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কাগতিয়া খাল । একসময়ে কাগতিয়া খালের পানি এনে ফিটকারী দিয়ে পান করতো এছাড়া কাগতিয়া খালের পানিতে জলদাশ পাড়ার বাসিন্দ্বারা গোসল করতো বলে জানান এলাকার বাসিন্দ্বা মিলন জলদাশ । উত্তর গুজরা জলদাশ পাড়ার পাশে কাগতিয়া খালের ঐ পাড়ে ৭নং রাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম রাউজান কমলার পিতার বাড়ীর তসলিমের পোল্টি ফার্ম, ডেইরী ফার্ম । তসলিমের ডেইরী ফার্ম ও পোল্টি ফার্মের বজ্য কাগতিয়া খালের মধ্যে ফেলানোর কারনে কাগতিয়া খালের পানি দুষন হয়ে পাড়ায় খালের পানি জলদাশ পাড়ার বাসিন্দ্বারা ব্যবহার করতে পারেনা বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী । এ ব্যপারে পুর্ব গুজরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার চনদ্র সেন বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে মেম্বার চন্দ্রসেন বড়ুয়া বলেন, পোল্টি ফার্ম, ডেইরী ফার্মের বজ্য কাগতিয়া খালে ফেলানোর ব্যাপারে আমি রাউজান উপজেলা স্যানিটারী অফিসারকে অভিযোগ করার পর উপজেলা স্যনিটারী অফিসার এসে সরেজমিনে দেখে তসলিম উদ্দিনকে নেটিশ দিয়ে কাগতিয়া খালে বজ্য না ফেলানোর নির্দেশ দিলে ও তসলিম উদ্দিন তা অমান্য করে তার পোল্টি ফার্ম, ডেইরী ফার্ম এর বজ্য কাগতিয়া খালে ফেলছে । হালদা পাড়ের জেলেদের ব্যাপারে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগের কাছে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, হালদা নদীর মাছ শিকার করে একসময়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের পুনঃবাসন করার জন্য উপজেলা মৎস অফিসারকে তালিকা তৈয়ারী করে জেলেদের তালিকা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । জেলেদের তালিকা পেলে জেলেদের পুনঃবাসন করার ব্যবস্থা নেবে সরকার।