চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন

চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ক্রুজ শিপ এম ভি বে ওয়ান। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম টু সেন্টমার্টিন রুটের যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল।

আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে এই রুটে সপ্তাহে তিনদিন যাতায়াত করবে বিলাসবহুল প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান ক্রুজ’। এটি পর্যটন সেবায় নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে বলে অভিমত ভ্রমণবিলাসীদের। দুই হাজার যাত্রী বহনে সক্ষম এ জাহাজটিই বর্তমানে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ ক্রুজ শিপ। পতেঙ্গায় অবস্থিত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে (১৫ নং ঘাট সংলগ্ন) ওয়াটার বাস ঘাট থেকে থেকে যাত্রীরা উঠে সেন্টমার্টিনে গিয়ে সরাসরি নামবেন।

সমুদ্রের মাঝখানে শিপ পরিবর্তন করার কোন ঝামেলাও থাকছে না। চট্টগ্রাম ওয়াটার বাস জেটি এবং সেন্টমার্টিনে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের খ্যাতনামা জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের অর্থায়নে জাহাজটি আমদানি করা হয়। ১২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজটি নির্মাণ করে জাপানের কোবেই শহরের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাহাজটি ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে পারে। জাহাজটিতে যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন ১৫০ জন ক্রু। এছাড়া জাহাজ পরিচালনায় থাকবে আরো ১৭ জন ক্রু। উত্তালসমুদ্র মোকাবিলায় ফিন স্ট্যাবিলাইজার সুবিধাও রাখা হয়েছে জাহাজটিতে।

এছাড়া বে ওয়ান ক্রুজ জাহাজটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক রুটেও চলাচলের সুযোগ রয়েছে। জাহাজ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘বে ওয়ান ক্রুজ’ জাহাজটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্রুজ শিপ। অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে এই জাহাজটিতে। এর মাধ্যমে পর্যটকদের আর সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে হবে না। সরাসরি সমুদ্রযাত্রায় সেন্টমার্টিন নামতে পারবে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হতে চলেছে।

তিনি আরো বলেন, এই জাহাজটি কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন রুটে চালু করা হয়েছিল। তবে কক্সবাজারে এই জাহাজ ভেড়ানোর মত কোন জেটি না থাকায় জাহাজটি কক্সবাজার সাগরপাড়ে পৌঁছাতে পারতো না। সেই কারণে এই জাহাজের রুট পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ওয়াটার বাস টর্মিনালে এই জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারবে। যার কারণে এই জাহাজ চলাচলও সহজ হলো। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি কমবে।

যাত্রার সময়সূচি : সময়সূচি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাত ১১ টায় চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা করবে বে ওয়ান ক্রুজ। জাহাজটি সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৮টায়। এছাড়া ফিরতি পথে প্রতি সপ্তাহের শুক্র, শনি ও রবিবার দুপুর ১ টায় সেন্টমার্টিন থেকে যাত্রা করে জাহাজটি চট্টগ্রাম পৌঁছাবে একই দিন সন্ধ্যা ৭ টায়। চট্টগ্রাম থেকে রাতের যাত্রায় সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৯ ঘণ্টা। তবে ফিরতি পথে সেন্টমার্টিন থেকে দিনের যাত্রা হওয়া সময় কিছুটা কম লাগবে। ফিরতি পথে সময় লাগবে প্রায় ৭ ঘণ্টা।

যাওয়া-আসার খরচ : বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সমুদ্র যাত্রায় বে ওয়ান ক্রুজে যাওয়া আসার টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। এরমধ্যে বিজনেস ক্লাস চেয়ারের জনপ্রতি টিকিট মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। লাক্সারি বিজনেস ক্লাস চেয়ারের জনপ্রতি টিকিট মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। এই দুই ক্লাসের টিকেটে পাওয়া যাবে সকালের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট।

এছাড়া অন্যান্য টিকিটের মধ্যে বাংকার স্লিপার বেড জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা, ভিআইপি কেবিনে ২ জনের জন্য ৫০ হাজার টাকা, ফ্যামিলি বাঙ্কার কেবিনে ৪ জনের জন্য ৫০ হাজার টাকা, প্রেসিডেনশিয়াল কেবিনে ২ জনের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং  রয়েল কেবিনে ২ জনের জন্য ৪৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব ক্লাসের টিকেটে যাত্রীরা পাবেন সকালের ব্রেকফাস্টসহ দুপুর বা রাতের খাবার। এছাড়া পরিবারের সাথে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়েছে।

টিকেট বুকিং : টিকেট বুকিং করতে বর্তমানে মোবাইলে যোগাযোগের ডেডিকেটেড নম্বর রাখা হলেও পরবর্তীতে যাত্রীরা চাইলে অনলাইনেও বুকিং করতে পারবেন। অনলাইনে টিকেট বুকিংয়ের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। মোবাইলে টিকেট বুকিং করতে যোগাযোগ করতে হবে ০১৯৬৮-৮১৩৫৯৭, ০১৯৬৮-৮১৩৫৯৮ নম্বরে।

পূর্বকোণ/এএ