লামা ও আলীকদমে দু’টি খাল পুনঃখনন হচ্ছে

লামা ও আলীকদমে ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শীঘ্রই শুরু হচ্ছে দু’টি খাল পুনঃখনন প্রকল্প। প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হলে উপজেলা দু’টির সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে শুস্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পানি ধরে রাখা ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পাহাড় থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে পাথর আহরণ, জুম চাষ, অব্যাহত বৃক্ষ নিধন এবং অপরিকল্পিতভাবে তামাক চাষের বিরূপ প্রভাবে মাটি ক্ষয় হয়ে লামা ও আলীকদমের পাহাড়ি ছড়া, ঝিরি (খাল) দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অসংখ্য ঝিরি বা খাল ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে নাব্যতা হারিয়েছে মাতামুহুরী। পাহাড়ি ঝিরি বা খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণের সময় বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে না পেরে ফেঁপে উঠে লোকালয়ে জলবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এতে করে স্থানীয়দের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। অপরদিকে, শুস্ক মৌসুমে এ খালগুলো শুকিয়ে এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। এর ফলে স্থানীয়দের দৈনন্দিন কার্যক্রমসহ চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা, সর্বোপরি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রচেষ্টায় সরকারের বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০, শত বর্ষের ডেল্টা প্ল্যানের অংশ হিসেবে ৬৪ জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় লামা ও আলীকদমে দু’টি খাল পুনঃখনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প দু’টি হচ্ছে লামা পৌরসভার মধুঝিরি খাল এবং আলীকদমের মোস্তাক পাড়া ঝিরি (খাল) পুনঃখনন। অতিসম্প্রতি লামা পৌরসভার নুনারঝিরি মুখে এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সভাপতিত্বে ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আমান উল্লাহ্‌ , পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর। অন্যান্যের মধ্যে লামা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মধুঝিরি খালের ৩.৮ কিলোমিটার খনন করা হবে এবং ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আলীকদমের মোস্তাক পাড়া ঝিরির ১.৩৪৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় ৮৮ টি ছোট নদী, ৩৫২ টি খাল এবং ৮টি জলাশয় খনন করা হবে। এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জলাশয়, খাল ও নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হবে, জলাভূমি ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষিত হবে, শুস্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে, নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং বর্ষা মৌসুমে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক হবে। লামা পৌরসভা মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকার ঝিরি (খাল) এবং নদী খনন করা সম্ভব হলে বর্ষা মৌসুমে ঘন ঘন পাহাড়ি ঢলের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং শুস্ক মৌসুমে ব্যবহার ও চাষাবাদের পানির সংকট লাঘব হবে।
শুস্ক মৌসুমে ব্যবহার ও চাষাবাদের পানির সংকট লাঘব এবং বর্ষার জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা দু’টিতে সকল পাহাড়ি ঝিরি বা খাল এবং মাতামুহুরী নদী খনন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।