পর্যটকে মুখরিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। চারিদিকে নীল জলরাশি আর মাঝখানে ছোট্ট দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। টেকনাফ থেকে নাফ নদী ধরে জাহাজ যখনই সমুদ্রে প্রবেশ করে, তখনই নীল আবরণের আবেশে প্রবেশ পর্যটরা। অপূর্ব সেই রঙ, একবার দেখলে পর্যটকরা সহজে ভুলে যেতে পারেনা। বরং তার ডাকে বার বার ছুটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই পর্যটকের।

পর্যটকরা সকল ব্যাস্ততাকে পিছনে ফেলে শহরের ইট পাথরের ঝঞ্জাল থেকে দূরে থাকতে ছুটে চলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। এত দুরের পথ কখনো পর্যটককে হতাশ করেনা। সাগরের ঢেউ আর নীল জলরাশি একজন পর্যটককে সর্বদা মুগ্ধ করে রাখে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটককে।

প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে এখন সাগর স্থিতিশীল। উত্তাল সাগরের ঢেউ এখন নিস্তব্দ।দখিনা বাতাসের প্রচন্ড গতিও প্রায় শিথিল। তাইতো পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণের এ্টাই মোক্ষম সময়।
এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের ঢল নেমেছ। বেড়েছে পর্যটকদের ভিড়।

সেন্টমার্টিনে যাত্রাকালে একজন পর্যটককে আনন্দিত করে তোলে, নাফ নদীর অপরূপ সৌন্দর্য্যে। নদীর একদিকে পাহাড়, যা কিনা আমাদের টেকনাফ। অন্যদিকে দূরপ্রান্তে মায়ানমার। অপূর্ব এক সবুজ প্রকৃতি। সাদা রঙের গাঙচিলের ডানা মেলে উড়ন্ত দৃশ্য। সেন্টমার্টিনের একটা অংশ যেন শহরের মতোই কোলাহলপূর্ণ। বাজার, ভ্যান, খাবার হোটেল, ডিসপেনসারি, লণ্ড্রীর ব্যবস্থা আছে সেখানে!

সেন্ট মার্টিনে আসা অধিকাংশ পর্যটক জাহাজে এসে আবার সেই জাহাজেই ফিরে যায়। ১২টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত তাই সরগরম থাকে জেটির কাছের বীচটি। জাহাজ ছেড়ে গেলেই কাঙ্ক্ষিত সেই নিরবতা। বিকেলে সমুদ্রের নীল হয় আরো গাঢ়। সেই নীলের দিকে তাকিয়ে বোধ হয় পার করে দেয়া যায় এক জীবন।

ছেঁড়াদ্বীপটিও বেশ বড়। একদিয়ে ঘন জঙ্গল আর একদিকে কোরাল বিছানো বীচ। জঙ্গলে নারিকেল গাছের মত গাছগুলো আসলে কিন্তু নারিকেল গাছ নয়। স্থানীয়রা এদের কিয়া গাছ বলে। ছেঁড়া দ্বীপের একটি বড় অংশ এই গাছ। বর্ষায় দ্বীপ ডুবে গেলে দূর থেকে শুধু এই জঙ্গলই দেখা যায়।

সেন্টমার্টিনে সামূদ্রিক তাজা মাছের উৎসব বসে । নানান জাতের মাছের মেলা বসে হোটেলগুলোর সামনে। কোনটা খাবেন, কিভাবে খাবেন বললেই হল। মাছের লোভনীয় বারবিকিউ এর আয়োজন আছে সব হোটেলেই। এমনি সবজি, মাংস, ডাল ও পাওয়া যায়। কিন্তু সমুদ্রে গিয়ে মাছ না খাওয়া বোকামী। সময় গড়িয়ে আবার বিকেল। নীল জলের সাথে আরেকটি অপূর্ব সূর্যাস্ত। সন্ধ্যায়

কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন যেতে হলে তাহলে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ, ইউনিক পরিবহন এবং সেন্ট মার্টিন পরিবহণ সহ বেশ কিছু বাস সরাসরি টেকনাফ ঘাটের উদ্দেশ্যে রাত ৬:৩০-৮:৩০ এর মধ্যে ছেড়ে যায়। তারপর ঘাট থেকে কয়েকটি জাহাজ ছাড়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে সকাল ৯টায়। যা দ্বীপে পৌছায় ১২ টার মধ্যে। এটি আবার ফিরে আসে ৩ টার দিকে সেন্ট মার্টিন থেকে। তবে অফ সিজনে (এপ্রিল এর মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) জাহাজ চলে না। তবে ট্রলার ছাড়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে সারা বছরই।

আর কেউ যদি কক্সবাজার থেকে যান, তাহলে সকালে টেকনাফের উদ্দেশ্যে বাস, মাইক্রো, চান্দের গাড়ি ছাড়ে। অনেক প্যাকেজ অফার ও থাকে । যেই হোটেলে থাকবেন কক্সবাজারে, তাদের কাছে বললেও তারা ব্যবস্থা করে দিবে। তবে তাদের কাছে শুধু ট্রান্সপোর্ট এর সুবিধা ও আলাদা করে নেয়া যায়। যেমন শিপ এর টিকেট আর সকালে টেকনাফ যাবার সহায়তাটুকু নিতে পারবেন।

রিসোর্ট- রিসোর্ট এর ভাড়া সিজন এর সময় কোন নির্দিষ্ট নেই তেমন, ট্যুরিস্ট এর উপর নির্ভর করে রিসোর্ট মালিক রা ভাড়া বাড়ায় কমায়। তবে সিজনে ১৫০০-২০০০ টাকার কমে রুম পাওয়া কষ্ট সাধ্য, যদি না সেখানে পরিচিত কেও থাকে। আর অফ সিজনে ৭০০-১২০০ টাকায় পাওয়া যাবে সি রিসোর্ট গুলো। আর রিসোর্টের প্রতি রুমে ৪ জন করে আরামে থাকা যায়। চেক আউট সময় ১১ টা।

ছেঁড়া দ্বীপ- ছেঁড়া দ্বীপ যাবার জন্য ট্রলার ভাড়া ১৬০-২০০ টাকা করে, আর রিজার্ভ নিলে ১৫০০-৪৫০০ টাকা নেয় নৌকার আকার আর যাত্রীর উপর ভিত্তি করে।
খরচ:
বাস নন এ সি- ৯০০ টাকা, এসি ১৫৫০ টাকা । তবে আসার টিকেট সেন্ট মারটিন থেকে কাটলে প্রতি টিকেটে ৩০-৫০ টাকা তারা চার্জ হিসেবে বেশি রাখবে।

জাহাজ- নিচ তলা ৫৫০ টাকা, দো-তলা ওপেন ডেক ৭০০/৭৫০ টাকা, ভি আই পি ৮৫০/৯০০ টাকা।আর শিপের টিকেট এর মুল্য আসা এবং যাওয়া সহ এটা ধরা হয়। কেু যাবার টিকেট নেয়ার সময় বলে নিতে হয় কবে ব্যাক করবেন, সেইভাবেই ফেরার টিকেট শিপ দেয়া হয়। গ্রীনলাইনের টিকেট ওয়ান ওয়ে-ও দেয়, ৫০০/৬০০ দুই ধরনের ক্যাটাগরি আছে। আসা যাওয়া ১০০০/১২০০ টাকা।