চট্টগ্রাম-১৩ আসনে নেই বিএনপি, নির্বাচনী মাঠে আ.লীগ

জে.জাহেদ :
চট্টগ্রাম-১৩ সংসদীয় আসন যার সীমানা আনোয়ারা-কর্ণফুলী দুটি উপজেলায় এক আসন। মোট ভোটার রয়েছে ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৩৯৯ জন। আসনটি’র আনোয়ারা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন এবং কর্ণফুলী উপজেলায় রয়েছে ৫টি ইউনিয়ন।

এর মধ্যে কর্ণফুলীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৭৫৭ জন ও আনোয়ারায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪২ ভোটার। কর্ণফুলী উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৩৯ টি আর ভোটকক্ষ ২৫৫টি। এছাড়াও আনোয়ারায় ভোটকেন্দ্র ৬৭টি আর ভোটকক্ষ বেড়ে ৪০১টি। মোট ভোটারের ৪৭.৫৯ অংশ মহিলা ভোটার ও পুরুষ ৫২.৪০ শতাংশ।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কর্ণফুলীতে জামায়াত বিএনপির চিহ্নিত নেতাদের পুলিশ আটক করছে। নাশকতার অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে ১০টিরও বেশি। এছাড়াও অভিযোগ নানা সন্দেহে যুবলীগ ও সাধারণ ব্যক্তিদের আটক করলেও পরে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে কর্ণফুলীতে।

প্রতিদিন বিএনপি নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখনো গড়ে ৪ থেকে ৬ জনকে আটক করেছে সাদা পোশাকে কিংবা কর্ণফুলী থানা পুলিশ। অপরদিকে রাজনৈতিক মামলায় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা হাইর্কোট হতে জামিন নিলেও এখনো স্থানীয় থানায় জমে দিতে পারিনি জামিনামার কপি। ফলে গভীর রাতে পুলিশ এখনো তাদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের একমাত্র মনোনিত প্রার্থী ভূমি প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বিএনপি মনোনিত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে তিনবারের সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন (মোমবাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রিজভী (চেয়ার), ইসলামিক আন্দোলন ইরফানুল হক (পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মাওলানা রশিদুল হক সহ মোট ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

তবে আনোয়ারা কর্ণফুলীতে মাঠে পোস্টার, ব্যানার, গণসংযোগ,উঠান বৈঠক ও প্রচার প্রচারণায় আওয়ামী লীগ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে মাঠে। বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকে এলাকা ছাড়া ভয়ে, ঘর থেকে বের হলে গ্রেফতার হবে এমন আশংকায় অনেকে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে অংশ নিতে পারছে না বলেও অভিযোগ তাদের।

যদিও দুই উপজেলায় আংশিক ভাবে দেখা যাচ্ছে এমএ মতিন ও অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রিজভীর প্রচার প্রচারণা।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল অভ্যন্তরীণ নানা কোন্দল ও জটিলতা থাকলেও ভোটের মাঠে এদের একত্রিত হয়ে এক মঞ্চে প্রচারণা করতে দেখা যায়। অনেক প্রবীণ নেতাও কর্ণফুলীতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়ার পক্ষে মাঠে নেমেছে।

এরমধ্যে ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্ধারণ করে নজরে রেখেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছে। যেকোন অনাকাংখিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরা তৎপর বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী থানার অপারেশন অফিসার মোহাম্মদ হোসাইন। তবে ভোটের মাঠে এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রাথীর মধ্যে। যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে নামে।

অনেকের ধারণা এরা ২৪ তারিখের পরে মাঠে সক্রিয় হতে চেষ্টা করবেন। মাঠে সেনা মোতায়েন হচ্ছে কিনা, হলেও বা কতটুকু পর্যায়ে তাদের নজর এখনো সেদিকে। এদের সক্রিয়তা অনেকটা নির্ভর করছে এসব বিষয়ের উপর এমনটি জানালেন রাজনীতিক বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামে ১৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চেীধুরী জাবেদের পোস্টার, বিল বোর্ট, ব্যানার, লিপলেট আর প্রচার-প্রচারণায় জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে আওয়ামী লীগ। বিএনপি মনোনিত প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম কাগজে কলমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দুই উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে নেই কোন পোস্টার, বিল বোর্ট, ব্যানার কিংবা গণসংযোগ। সুতরাং মাঠের অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে মাঠে নেই বিএনপি।

অন্যান্য প্রার্থীর প্রচারণাও তেমন নেই বলেই চলে। চট্টগ্রাম ১৩ আসনে মাঠ দখলে রয়েছে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর। এই মুর্হুতে তাদের মধ্যে নেই কোন কোন্দল। তবে দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জারিত।
মাঠে বিএনপি নেই নির্বাচনী মাঠে একক আধিপত্য কেমন মনে হচ্ছে বিষয়টি এমন প্রশ্নে কর্ণফুলী উপজেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী বলেন,‘১০বছরে যারা এলাকায় ছিলেন না। গ্রামের উন্নয়ন কিংবা মানুষের আপদে বিপদে হাত বাড়ায়নি। ভোটের মাঠে তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখান করেছে। ফলে জনসম্পৃক্ততা না থাকায় মাঠে নেই বিএনপি।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, ‘আমরা কৌশলগত কারণে এখনো মাঠে নামতে পারিনি। তবে অতি শীঘ্রই মাঠে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার প্রচারণা ও নানা কর্মসূচি দেখতে পাবেন।’

এসব প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্রই হতে পারে দুদলের নেতাদের রাজনৈতিক বক্তব্য কিংবা নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার প্রয়াস। তবে জনগণ তাকিয়ে রয়েছে ৩০শে ডিসেম্বরের দিকে। কেনোনা এ আসনের ৪৭.৫৯ শতাংশ মহিলা ভোটারদের নিয়ে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে এখনো সংশয় রয়েছে।