কক্সবাজারের সীমান্ত জনপদ টেকনাফের নাফ নদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর হাইকোর্টের আদেশে জেলেরা মাছ ধরার অনুমতি পেয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে পাঁচটি শর্ত।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো এক স্মারকপত্র সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শর্তগুলো মেনে চলা হচ্ছে কিনা এবং সীমান্ত পরিস্থিতি আগামী তিন মাস পর্যন্ত পর্যালোচনা করে অনুমতির নবায়ন বা স্থগিত করা হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে। তারপরও এ নিয়ে টেকনাফের জেলেপল্লীতে চলছে খুশির জোয়ার।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সিভিল স্যুট শাখার সহকারী কমিশনার মো. কামরুল ইসলামের সই করা স্মারকে বলা হয়েছে, মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশনের রুলনিশির আলোকে নাফ নদীতে জেলে কর্তৃক বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালু করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পিটিশনার কর্তৃক এই কার্যালয়ে গত ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট দাখিলকৃত আবেদন যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি প্রদান করা হলো।
শর্তগুলো হলো:
১. সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানায় অভ্যন্তরে নাফ নদীতে শাহপরীর দ্বীপ হতে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরতে পারবে।
২. জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবি’র পাঁচটি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাবে এবং মাছ-ধরা-শেষে-ফেরত আসার পর বিজিবির পোস্টে তল্লাশি করার ব্যাপারে বিজিবি সদস্যকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। কোনো জেলে চেকপোস্টে না জানিয়ে মাছ ধরতে পারবে না।
৩. কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
৪. মৎস্য অধিদফতরের হালনাগাদকৃত নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করা যেতে পারে। যাতে কোনোক্রমে নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত কেউ নাফ নদীতে মাছ ধরতে না পারে
৫. এই অনুমোদন সম্পূর্ণ সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
প্রায় ৮ বছর পর নাফনদীতে মাছ আহরণের সুযোগ পেয়ে মহাখুশি জেলে সম্প্রদায়। এনিয়ে জেলেদের ঘরে ঘরে চলছে আনন্দ উৎসব।
জেলে শফিক আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন পর উম্মুক্তভাবে মাছ শিকার করতে পারবো বলে অসাধারণ ভাল লাগছে। আমার মতো আরও শতশত জেলেদের ঘরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। দীর্ঘদিন পর আমাদের মাছ ধরার সুযোগ তৈরি করে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন। তিনি বলেন, নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পত্রটি হাতে পেয়েছি৷ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে নাফ নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ৯ মাস পরে জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারবেন।