গাজায় স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১০

উত্তর গাজার একটি স্কুলে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। ওই স্কুলে বাস্তুচ্যুত একটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। তারাই মারা গেছেন এ হামলায়। স্কুল ছাড়াও অবরুদ্ধ উপত্যকাটির এক শিশু হাসপাতালেও হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে বুধবারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে।

চিকিৎসা সেবাকর্মীরা জানান, গাজা সিটির তুফা এলাকার ইয়ালা স্কুলে হামলায় তাঁবু ও শ্রেণিকক্ষে আগুন ধরে যায়। স্কুলে হামলার বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েল এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। হামলার কয়েক ঘণ্টা পরও বেশ কিছু আসবাবপত্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। প্রাণ বাঁচাতে কিছু মানুষ নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে দেয়াল কালো হয়ে যাওয়া শ্রেণিকক্ষে ও স্কুল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেন।

উম মোহাম্মেদ আল-হোয়াইতি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ কিছু একটা বিস্ফোরিত হয়। আমরা তাকাতেই দেখি যে পুরো স্কুলে আগুন জ্বলছে। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁবুও জ্বলছে। সবকিছুই জ্বলছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ চিৎকার করছিল এবং পুরুষরা অন্যদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল, শিশুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এবং আমরা- আল্লাহ আপনি ছাড়া আমাদের কেউ নেই বলতে বলতে হাঁটতে শুরু করি।’ চিকিৎসাকর্মীরা জানান, এ হামলা ছাড়াও উপত্যকাজুড়ে পৃথক হামলায় অন্তত ১০ জন মারা গেছেন।

জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি হয়। পরে তা ১৮ মার্চ ইসরায়েলি হামলায় ভেঙে পড়ে। শুধু ওইদিনই ইসরায়েলি হামলায় চার শর বেশি গাজাবাসী প্রাণ হারান। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ছয়শরও বেশি প্রাণ হারিয়েছে গাজায়। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার যুদ্ধে মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ হাজার ২৬৬ জন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১ জন।

এদিকে, বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় দুরা শিশু হাসপাতালের ভবনের ওপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই প্যানেল থেকেই বিদ্যুৎ পেত হাসপাতালটি। তবে এ হামলায় কেউ মারা যায়নি।

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কোনো রসদ বা ওষুধ কিছুই সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না। মার্চের শুরু থেকেই এ পরিস্থিতি চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, হামাসের যোদ্ধাদের চাপে ফেলতেই গাজার জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই তারা ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। হামাস অবশ্য ওই জিম্মিদের ফেরত দিতে চাইছে। তবে তাদের শর্ত হলো, এটি যুদ্ধ অবসানের অংশ হতে হবে। ইসরায়েলি বাহিনীকে নিজেদের সেনা সম্পূর্ণরূপে গাজা থেকে সরিয়ে নিতে হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, গাজার অনেক স্থানেই ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে গাজাবাসী। ইসরায়েলের বাধার কারণে তাদের উদ্ধারে যেতে পারছেন না কর্মীরা। এ ছাড়া সড়ক ও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের বেশ কিছু বাহনও ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এরকম যান ধ্বংসের কথা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার তারা ৪০টি প্রকৌশল যান নষ্ট করেছে যা ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে’ ব্যবহৃত হতো। সূত্র: রয়টার্স