‘খেলাধুলা-শিল্প-সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত প্রাণোচ্ছল তরুণরা দেশ-জাতির অমূল্য সম্পদ’

খেলাধুলা ও শিল্প-সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত প্রাণোচ্ছল তরুণরা দেশ ও জাতির অমূল্য সম্পদ। মুক্তচিন্তার বিজ্ঞানমনষ্ক তরুণরাই পারবে একবিংশ শতাব্দীর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে উন্নত, ন্যায়ানুগ ও বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দু’দিন ব্যাপি (৫-৬ ফেব্রুয়ারি) চবি কেন্দ্রীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চবি শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জনাব আনিসুল আলম।

উপাচার্য তার বক্তব্যে চবি কেন্দ্রীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রিত অতিথি, ক্রীড়াবিদসহ উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, মানুষের কর্মশক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন। সবল স্বাস্থ্য জোগায় কর্মশক্তি এবং সুস্থ মন জোগায় কর্ম প্রেরণা ও উদ্দীপনা। শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানো নাও হতে পারে। পরিপূরক হিসেবে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। উপাচার্য বলেন, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণরাই আমাদের বড় শক্তি। তারাই দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।

উপাচার্য আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বাৎসরিক ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাসমূহ শেষ করে সকলের সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় হলসমূহের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অত্যন্ত সফল ও সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এরই ধারাবহিকতায় আজকের বার্ষিক ক্রীড় প্রতিযোগিতা বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে। উপাচার্য দু’দিন ব্যাপি কেন্দ্রীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সার্বিক সাফল্য কামনা করেন এবং ক্রীড়াবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে স্ব স্ব দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকার আহবান জানান।

উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, মহান রব্বুল আলামিনের হাজারো শুকরিয়া আদায় করছি যে, শত সমস্যার মাঝেও দ্রুতই চবির কেন্দ্রীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। তিনি বলেন, শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। খেলাধুলা শুধু দেহকে সুস্থ রাখেনা, মনকে পরিশীলিত করে। শরীর ও মনের যৌথ শৃংখলা মানব চরিত্রের ভিত রচনা করে। একমাত্র সুস্থ শরীরই মানুষকে দান করতে পারে দুর্দম তেজস্বিতা ও অদম্য উদ্দীপনা। সুস্থ, সবল ও নীরোগ শরীর গঠনের অন্যতম উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণ। উপ-উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রেখে চলেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। উপ-উপাচার্য ভবিষ্যতেও খেলাধুলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখতে ক্রীড়বিদদের নিয়মিত ক্রীড়াচর্চা অব্যহত রাখার আহবান জানান।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খেলাধূলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আধুনিক সমাজে সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তি মানুষের মনকে বিনষ্ট করে সমাজকে কলুষিত করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনতে খেলাধূলার বিকল্প নেই। খেলাধূলা মানুষের মনকে উদার করে, অলসতা ও কুৎসিত চিন্তাকে দূর করে। তিনি বলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে রয়েছে শৃংখলাচর্চার একটি বড় সুযোগ। একজন ক্রীড়াবিদকে নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলতে হয়, যাতে এ চর্চা ব্যক্তির মনন গঠনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় জীবনেও রয়েছে খেলাধুলার অত্যাবশ্যকতা। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য ও মৈত্রীভাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খেলাধুলা অপরিহার্য। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও জাতি নির্বিশেষে পৃথিবীর সব দেশের মানুষ এসে পরমবন্ধনে মিলিত হয় খেলারমাঠে। উপ-উপাচার্য সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সকল ক্রীড়বিদ, কমিটির সদস্য ও এর সাথে সম্পৃক্ত সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সার্বিক সফলতা কামনা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের সুর ও মুর্ছনায় মাননীয় উপাচার্য জাতীয় পতাকা, মাননীয় উপ-উপাচার্যদ্বয় বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট নিজ নিজ হল পতাকা ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক অলিম্পিক পতাকা উত্তোলন করেন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মার্চ পাস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন কৃতী ক্রীড়াবিদ মো. আলী রিমন এবং পতাকা বহন করেন মনোয়ারুল ইসলাম। প্রতিযোগিতায় মশাল হাতে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন দুই কৃতী ক্রীড়াবিদ নুসরাত জাহান তৃণা ও মোহাম্মদ সজীব। মাননীয় উপাচার্য বিচারকবৃন্দের পক্ষে প্রধান বিচারক চবি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মনির উদ্দিনকে এবং ক্রীড়াবিদদের পক্ষে কৃতী ক্রীড়াবিদ তামান্না মাহবুবকে শপথ বাক্য পাঠ করান। ব্যান্ডের তালে তালে অনুষ্ঠিত ক্রীড়াবিদদের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ মাননীয় উপাচার্য ও অতিথিবৃন্দ উপভোগ করেন এবং তাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, অনুষদসমূহের ডিন, হলের প্রভোস্ট, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নিদের্শনা কেন্দ্র পরিচালক, হলের আবাসিক শিক্ষক, অফিস প্রধান, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বিপুল সংখ্যক ক্রীড়ামোদী শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এবারের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হলসমূহ হতে ৩৫টি ইভেন্টে ২৭৪ জন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি রেজিস্ট্রার দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হোসেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা পিংকি দারিং।