ধর্মচর্চা মানুষকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে: চবি উপাচার্য

ধর্মচর্চা মানুষকে নৈতিকতাবোধসম্পন্ন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। সনাতন ধর্ম পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে উত্তর ক্যাম্পাসস্থ কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাণী অর্চনা ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার এ কথা বলেন।

চবি উপাচার্য বলেন, উৎসব বলুন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলুন, সকল আয়োজনের জন্য একটা সুন্দর ও চমৎকার পরিবেশ প্রয়োজন। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন ক্যাম্পাসে এ সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাজ করছে। আজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চমৎকার পরিবেশে বাণী অর্চনার অনুষ্ঠান তারই প্রমাণ বহন করছে। উপাচার্য আরও বলেন, জ্ঞান চর্চা একটি অত্যন্ত পবিত্র কাজ। পৃথিবীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই জ্ঞানচর্চার উর্বর ক্ষেত্র। জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি ধর্মচর্চা আদর্শ মানুষ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, একজন প্রকৃত ধর্মচর্চাকারী মানুষ কখনো কোনো ধরনের অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, হানাহানি ইত্যাদির সাথে যুক্ত হতে পারেন না। আমাদের সকলকে পবিত্রতা, সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে থেকে জ্ঞানের আলোয় আলেকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাসের যে আবহ চলমান রয়েছে, তা কোনো অবস্থাতেই যাতে বিনষ্ট না হয়, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য উপাচার্য আহবান জানান।

চবিতে দিনব্যাপি কর্মসূচির মধ্যে ছিল বাণী অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, ভজনকীর্তন, ঢাকবাদ্য ও ধুনুচি নৃত্য, সন্ধ্যারতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। সনাতন ধর্ম পরিষদ, চবির সভাপতি প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়ের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী এবং প্রধান ধর্মীয় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম, চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ স্বামী শক্তিনাথানন্দ মহারাজ। এতে সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি কেন্দ্রীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাণী অর্চনা ২০২৫ এর আহবায়ক প্রফেসর ড. উদিতি দাশ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব অসীম কুমার দাস ও শিক্ষার্থী সমন্বয়ক প্রবীন সেন। অনুষ্ঠানে পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন শ্রী বাদল কৃষ্ণ চৌধুরী।

উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক সরস্বতী পূজামন্ডবের মাধ্যমে পুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২৪ এর গণআন্দোলনের পর বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ধর্মের নামে কোন প্রকার বৈষম্য যাতে অন্তত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠিত না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসন চেষ্টা করছে। উপ-উপাচার্য বলেন, মানব ইতিহাসে যখনই মানুষ অন্যায়, অসত্য, অধর্মে লিপ্ত হয়েছে, তখনই ধর্মের অনুভূতি মানুষ বুঝতে পেরেছে। সেজন্য মানুষকে শৃংখলিত করার জন্য, সভ্য করার জন্য, ন্যায়-নীতির পক্ষে আনার জন্য ধর্মের কোনো বিকল্প হতে পারে না।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, বাণী অর্চনা অনুষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সরস্বতী পুজা উদযাপন করা হয়। তিনি বলেন, মানব জাতিকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে, তা প্রত্যেক ধর্মেই উল্লেখ রয়েছে। জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, আজ দেশের সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। কিন্তু বাণী অর্চনা অনুষ্ঠান করার জন্য দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগ সকলকে কাজে লাগাতে হবে।