হালদা নদীতে জাল ও বড়শী দিয়ে চলছে মাছ শিকার

শফিউল আলম, রাউজানঃ দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর জীব-বৈচিত্র ও মা মাছ রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরাও। তৎপর রয়েছে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনসহ দুই উপজেলার মৎস্য বিভাগ, নৌপুলিশ, চট্টগ্রাম জেলা মৎস অধিদপ্তর। এরপরও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ জাল বসিয়ে ও বড়শী দিয়ে মাছ শিকার করছে হালদা নদী থেকে ।

রাউজান উপজেলা প্রশাসন, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে নদীতে পাতা অবৈধ ঘের জাল জব্দ করলেও মা মাছ শিকারি চক্রের সদস্য কাউকে আটক করতে পারেনি নৌ-পুলিশ কিংবা উপজেলা প্রশাসন।আগামী চৈত্র মাস থেকে শ্রাবন মাস পর্যন্ত সময়ে এপ্রিল মাস থেকে হালদা নদীতে মা মাছের প্রজনন মৌসুম। হালদা নদীতে মা মাছের প্রজনন রক্ষায় চট্টগ্রামের নাজির হাট থেকে হালদা নদীর মোহনা কালুর ঘাট পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ হালদা নদীতে সারা বৎসর মা শিকার নিষিদ্ব করে মৎস অধিদপ্তর । মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ব করা হয় । হালদা নদীর বালু মহল ইজারা বন্দ্ব করে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন । নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদীর মোহনা রাউজানের কচুখাইন, মোকামী পাড়া, সার্কদা, দেওয়াজী ঘাট, মইশকরম, উরকিরচর, খলিফ্রা ঘোনা, পশ্চিম আবুর খীল, আবুর খীল, মগদাই সুইস গোইট, মগদাই, আজিমের ঘাট, কাসেম নগর, গোলজার পাড়া, কাগতিয়া, সুইস গেইট, পশ্চিম বিনাজুরী, মোবারকখীল,সিপাহির ঘাট, জামতল, দক্ষিন গহিরা, পশ্চিম গহিরা, অংকুরী ঘোনা, মঘাশাস্ত্রি বড়ুয়া পাড়া, পশ্চিম গহিরা বদুর ঘোনা, কোতোয়ালী ঘোনা, কাজী পাড়া, ইন্দিরা ঘাট, পশ্চিম ফতেহ নগর, পশ্চিম নদীম পুর, হাটহাজারী উপজেলার মাদ্রাসা, বাড়ী ঘোনা, নাপিতের ঘাট, আমতোয়া, মাছুয়া ঘোনা, নয়া হাট, রামদাশ হাট, মদুনা ঘাট, ছিপাতলী , লাঙ্গলমোড়া, চট্টগ্রাম নগরীর মোহরা ও হালদা নদীর মোহনা কালুর ঘাট এলাকায় জাল বসিয়ে ও বড়শী দিয়ে মাছ শিকার করছে মাছ শিকারীরা । ঐ সব এলাকায় পাওয়ার পাম্প বসিয়ে ও নদীতে ডুব দিয়ে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করছে বালু খোকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা । নদী থেকে বালু উত্তোলন করার পর হালদা নদী দিয়ে যান্ত্রিক নৌযান ভর্তি করে বালু পরিবহন করছে । এছাড়া ও হালদা নদীর মোহনায় ও হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠা চর থেকে মাটি কেটে যান্ত্রিক নৌযান করে মাটি হালদা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা ইটের ভাটায় ইট তৈরীর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত । হালদা নদীতে মাছ শিকার, চর থেকে মাটি কাটা, বালু উত্তোলনের ফলে হালদা নদীর মা মাছ সহ জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে ।
একাধিক ডিম সংগ্রহকারী বলেন, ‘কোন ডিম সংগ্রহকারী অবৈধ জাল পেতে মা মাছ নিধন করবে না। আমরা ডিম সংগ্রহ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। মা মাছ নিধন হলেই ডিমের পরিমাণ কমে যাবে। মাছ শিকারের সাথে জড়িতদের এলাকা ভিত্তিক আলাদা আলাদা চক্র রয়েছে।’
হালদা নদীর রাউজান অংশে পাড় কেটে তিনটি ইটভাটায় মাটি যোগান দেওয়া হচ্ছে, কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামীপাড়া গ্রামে হালদার পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলাএ.আলী নামে একটি অবৈধ ইটভাটার চিমনি গুড়িয়ে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। সেসময় ইটভাটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিলেও পুনরায় ইটভাটা কার্যক্রম চালানো চালু করে।
হালদা নদীতে জাল বসিয়ে ও বড়শী দিয়ে মাছ শিকার, বালু উত্তোলন, চর থেকে মাটি কাটায় মা মাছ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে । গত কয়েক বৎসরে হালদা নদীতে অর্ধশত ডলফিন ও শতাধিক মা মাছ মৃত অবস্থায় উদ্বার করা হয়েছে ।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীর মা মাছ সহ জীববৈচিত্র রক্ষায় রাউজান উপজেলা প্রশাসন, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, মৎস অধিদপপ্তর নৌপুলিশ অভিযান চালিয়ে ব্পিুল পরিমান জাল উদ্বার করে । উদ্বার করা জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধংস করা হয়েছে । মৎস বিভাগের জনবল না থাকায় হালদা নদীতে অভিযান চালানো কষ্টকর তারপর ও মৎস বিভাগ হালদা নদীর মা মাছ সহ জীব বৈচিত্র রক্ষায় তৎপর রয়েছে ।

হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যন্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদা নদীর মা মাছ সহ জীববৈচিত্র রক্ষায় নদী থেকে অবৈধভাবে মাছ শিকার ও হালদা নদীর পানি দুষন বন্দ্ব করতে ব্যর্থ হলে হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন চরম হুমকির মুখে পড়বে ।

উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ) মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হালদা নদীর মা মাছের ছাড়া ডিম সংগ্রহ করে নদীর পাড়ে খনন করা কুয়া ও হ্যাচারীতৈ ডিম রেখে ডিম থেকে রুনু ফুটানো হয় । রাউজান হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদীর তীরে বসবাসকারী ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীর ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু মৎস খামারী, মৎস প্রকল্পের মালিক, মৎস হ্যচারীর মালকেদের কাছে বিক্রয় করেন । মাছ চাষী ও মৎস প্রকল্পের মালিকরা হালদা নদীর রেনু ক্রয় করে নিয়ে পুকুর, দিঘি, জলামশ, মৎস প্রকল্পে, হাচারীতে অবমুক্ত করে প্রতি বৎসর হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করেন।