চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম বেড়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বড়চর পাহাড়ে দুই ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের ছাড়াতে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। না দিলে দুজনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
এর আগেও কাঞ্চননগর পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকজন কৃষককে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী গ্রামবাসী, কৃষক এবং পেয়ারা ও লেবু চাষের সাথে সংশ্লিষ্টরা এখন আতঙ্কে রয়েছেন।
বিষয়টি স্থানীয়রা নিশ্চিত করলেও চন্দনাইশ থানার পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ থানার ওসি ইমরান আল হোসাইন এ বিষয়ে জানান, অপহরণের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আমাদেরকে কেউ জানায়নি। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি। ফলে এ বিষয়ে আমরা অবগত নই।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটার দিকে চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বড়চর পাহাড়ে অপহৃত দুজন। এরা হলেন উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের রাহাত আলী তালুকদার বাড়ি মৃত ফজল আহমেদের ছেলে মো. আহাম্মেদ হোসেন (৫০) ও উত্তর জোয়ারা ৭নং ওয়ার্ডের সেলিম মেম্বারের বাড়ির মৃত সিরাজের ছেলে আলী মনসুর (৩৫)।
জানা গেছে, শনিবার সকালে পাহাড়ের বাগান থেকে লেবু আনতে গেলে আহাম্মেদ হোসেন ও আলী মনসুরকে অপহরণ করে নিয়ে যায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। পরে তাদেরকে ছাড়াতে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করছে দুর্বৃত্তরা। না দিলে দুজনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আবদুল আলীম জানান, গত ৩ মাসে তার ওয়ার্ড থেকে ৫-৬টি অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। প্রতিবারই মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃতরা ফিরে এসেছেন। গত সপ্তাহেও ৬নং ওয়ার্ড থেকে চারজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে কাঞ্চননগর এলাকায় পেয়ারা তুলতে গেলে খরনা খাল থেকে একসাথে ১৪ জন কৃষককে অপহরণ করা হয়। অপহৃতদের নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের পরিবারকে জনপ্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। মুক্তিপণ না দিলে তাদের হত্যা করে গভীর পাহাড়ে পুঁতে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
অপহৃতদের কিছু আত্মীয় ধারদেনা করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও সন্ত্রাসীরা ৫০ হাজার টাকার নিচে কাউকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি। পরে দেড়শ থেকে দুইশ গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা অপহৃতদের রেখে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা অপহৃতদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় পেয়ারা ও লেবু চাষিরা। তারা জানান, অপহরণের ভয়ে এখন বাগানে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। দেশের খ্যাতনামা কাঞ্চন পেয়ারার অধিকাংশ বাগানই এই পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে উৎপাদিত পেয়ারা ও লেবু চন্দনাইশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিবছর এই অঞ্চলের পেয়ারা ও লেবুর বিক্রি থেকে শত কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে বর্তমানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উপদ্রব বৃদ্ধির ফলে চাষিরা বাগানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় পেয়ারা ও লেবু বাগানিরা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে যৌথবাহিনীর অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।