ইটভাটার কারনে হালদার জীববৈচিত্র হুমকির মুখে

শফিউল আলম, রাউজানঃ দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পরিবেশ ধ্বংস করেছে হালদা পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ তিন ইটভাটা। এই তিনটি ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে নদীর পাড়ে মাটি ও যান্ত্রিক নৌযানের আঘাতে মরছে মা মাছ, ডলফিনসহ জীববৈচিত্র।সরেজমিনে পরিদর্শন কালে দেখা যায়, রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামিপাড়া এলাকার অংশে হালদা নদীর পাড় ঘেঁষে এ.আলী নামে একটি ইট ভাটায় ভেকু দিয়ে নদীর পাড় কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। একইভাবে উরকিরচর ইউনিয়নের আবুরখীল গ্রামে শান্তি ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটায় হালদা নদীর জেগে উঠা চর কেটে নৌকায় পরিবহন করে ইট তৈরি জন্য মাটি স্তূপ করে রাখার দৃশ্যও চোখে পড়ে। উরকিরচর ইউনিয়নের সার্কদা এলাকায় হালদা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা আজমীর ব্রীকস ইট ভাটায় ইট তৈয়ারী কাজে ব্যবহৃত মাটি যান্ত্রিক নৌযানে করে ইট ভাটায় এনে স্তুপ করছে। হালদার পাড়ে গড়ে উঠা তিনটি ইটভাটা ধ্বংস করছে হালদার পরিবেশ। গত ২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর এ. আলী ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দেন। বছরপার হতে না হতে পুনরায় এ. আলী ইটভাটা চালু করা হয়। হালদা পড়ের ইট তৈয়ারীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর পাড় কাটা, বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি আনা এবং প্রস্তুতকৃত ইট সরবরাহ কাজে যান্ত্রিক নৌযানের ব্যবহার, ইটভাটা শ্রমিকদের জন্য নদীর পাড়ে স্থাপনকৃত খোলা শৌচাগারসহ নানান কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হালদা নদীর মা মাছ তথা জীববৈচিত্র। হালদা নদীর মা মাছ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় হালদা পাড়ের ইট ভাটা বন্দ্ব করার জন্য দাবী জানিয়ে আসছে নদী বিশেষজ্ঞরা। এ. আলী ব্রিকস ও শান্তি ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটার মালিকরা রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন গ্রামের অংশে হালদার চর, ছায়ার চর,উরকিরচর ইউনিয়নের পশ্চিম আবুরখীল এলাকায় পুরাতন হালদা নদীন চর থেকে মাটি কেটে যান্ত্রিক নৌযানে পরিবহন করে ইট ভটায় স্তুূপ করা হচ্ছে ইট তৈরির জন্য। এছাড়াও ভেকু দিয়েও কাটা হচ্ছে হালদার পাড়ের মাটি। মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও হালদার পাড়ে গড়ে উঠা ইটভাটা মালিকেরা তা অমান্য করে চরের মাটি কেটে যান্ত্রিক নৌযানে পরিবহন করছে প্রতিনিয়ত।ফলে হালদার মা মাছ, ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইট ভাটার কারণে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিপন্ন হচ্ছে নদীর পরিবেশ। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংস করা হলেও দেখার কেউ নেই। হালদা পাড়ের ইট ভাটা মালিকরা দাবী করছেন ইটভাটা নদীর পাড়ে হলে ও ইটভাটার জমি আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি ।চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক এবং হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদার পাড়ে গড়ে উঠা ইট ভাটাগুলো অবৈধ। এসব ইটভাটাগুলোর কারণে দূষণ হচ্ছে নদীর পরিবেশ। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি রিদুয়ানুল ইসলামকে ফোন করে জানতে চাইলে, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন, হালদা নদীর মা মাছ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় অভিযান চালিয়ে নদী থেকে মাছ ধরার জাল উদ্বার করে ধংস করা হয়েছে । ইটভাটা গুলোতে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় । আমি বদলী হয়ে চলে যাব তাই সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি ।