চবিতে “আন্ডারট্যাকিং এন্ড স্টিয়ারিং রিসার্চ” সেমিনার অনুষ্ঠিত
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। “আন্ডারট্যাকিং এন্ড স্টিয়ারিং রিসার্চ” শীর্ষক গবেষণা বিষয়ক বিশেষ সেমিনারে এ আহ্বান জানান চবি উপাচার্য। এ সময় গবেষণার মাধ্যমে সমাজ ও পৃথিবীর সমস্যাগুলোর সৃজনশীল সমাধান সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন চবি উপাচার্য।
গবেষণা বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। চবি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারে সহযোগিতায় ছিল চিটাগং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি এবং কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম রিসার্চ এসোসিয়েশন, চবি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আইন অনুষদের এ.কে. খান অডিটোরিয়ামে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন চবি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
সেমিনারে স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. আব্দুল আজীজ। তিনি ‘পাবলিশিং ইউর রিসার্চ’ শীর্ষক আলোচনা করেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশন এন্ড নিউ মিডিয়া বিভাগের পিএইচডি ক্যান্ডিডেড মোহাম্মদ তারেক হোসাইন ‘আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ এন্ড ক্যারিয়ার ইন রিসার্চ’ শীর্ষক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা প্রথমে মানুষ ছিলাম, পরে শিক্ষক হয়েছি। আমাদের প্রধান ও অন্যতম কাজ হচ্ছে আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তোলা। মাননীয় উপাচার্য বলেন, গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে জ্ঞান বিনিময় এবং নতুন গবেষণার ক্ষেত্র আবিষ্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশি গবেষকরা নতুন নতুন পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে আসেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, এ ধরণের সেমিনারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের গবেষকদের থেকে জ্ঞান অর্জনে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় এবং ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করে। মাননীয় উপাচার্য ‘স্থানীয় ও বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে গবেষণার মাধ্যমে সমাজ ও পৃথিবীর সমস্যাগুলোর সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কী কাজ করছেন এবং কী গবেষণা করছেন তা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখুন। সেখানে শিক্ষকদের গবেষণাপত্র এবং কাজের বিবরণ রয়েছে, যা আপনাদের উদ্বুদ্ধ করবে। এজন্য আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করেছি, তাদের বায়োতে ছবি থাকুক বা না থাকুক, অবশ্যই গবেষণাকর্মের তথ্য সংযুক্ত করতে। এটি শিক্ষকদের গবেষণা স্কোর বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ড. আব্দুল আজীজ রিসার্চ আইডিয়া সংগ্রহ, পাবলিশ, হাই কোয়ালিটি জার্নাল পেপার, হায়ার স্টাডিজ সম্পর্কে আলোচনা করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ফেসবুক শুধু সোস্যাল মিডিয়া নয়, রিসার্চেরও বড় প্ল্যাটফর্ম। আপনারা রিসার্চে যত রেফারেন্স দিতে পারবেন, রিসার্চটি তত বেশি শক্তিশালী হবে। রিসার্চ পেপারটা এমনভাবে তৈরি করুন যেন রিভিউরা আপনার পেপার দেখে কনভিন্স হয়।
মোহাম্মদ তারেক হোসেন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনা, সিভি আপডেট এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, রিসার্চ শুধু পাবলিকেশনের জন্য নয়; এটি একটি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটায়। রিসার্চের মাধ্যমে আমরা সমাজে পরিবর্তন আনতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারি।
শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের উত্তরে তারেক হোসেন টিউশন করার চেয়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রজেক্টে কাজ করার প্রতি বেশি উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি বলেন, গবেষণা প্রজেক্টে কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং সিভিতে প্রাসঙ্গিক দক্ষতা ও পরিচিতি যোগ করতে পারে। এটি তাদের ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন এবং কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম রিসার্চ এসোসিয়েশন, চবি’র সভাপতি ড. মো. শহীদুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চবি আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. শাহাদাত হোছাইন।
কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম রিসার্চ এসোসিয়েশন, চবির সভাপতি ড. মো. শহীদুল হক বক্তব্যে রিসার্চের ক্ষেত্রে রিসার্চ মেথডোলজির উপরে পড়াশোনা করার উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, নিজেকে নিজে মোটিভেট করতে হবে, কখনো নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালো রিসার্চার হওয়ার সুযোগ নেই। হাল ছাড়া যাবে না। কখনোই থিসিস বা রিসার্চের ক্ষেত্রে থামা যাবে না, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
সেমিনারে উন্মুক্ত সেশনে প্রশ্নপর্ব অনুষ্ঠানে স্পিকার ও আলোচকবৃন্দ শিক্ষক-গবেষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিবর্গ এতে উপস্থিত ছিলেন।