শালগ্রাম শিলাচক্র, শড়খ ও তুলসীর আবির্ভাব প্রসঙ্গে আলোচনা

অধ্যাপক ডাঃ চিত্ত রঞ্জন শর্মা
শালগ্রাম ও তুলসী দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে বিভিন্ন পুরানে আলোচনা করা হয়েছে। পুরানে উল্লেখিত শ্রীমতি তুলসী দেবীর আবির্ভাব সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে। তুলসী দেবীর আবির্ভাব বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে হয়েছে। প্রথমে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে প্রকৃতি খন্ডে নারায়ন নারদ সংবাদ প্রসঙ্গে যে উপাখ্যান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করব।

গোলকে বাসিনী শ্রীমতি তুলসীদেবী শ্রীকৃষ্ণের প্রাণ প্রেয়সী। শ্রী কৃষ্ণভক্তি জননী। শ্রীকৃষ্ণ প্রেম প্রদায়িনী, সর্ব দুঃখ হারিণী। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মায়াবদ্ধ জীবের মিলনকারিনী। ব”হৎ ধর্ম পুরানে লিখিত আছে শ্রীমতি তুলসী দেবী দ্বিভুজা, চারুবদনী, শ্যামাঙ্গিনী শ্বেতবাসনা, শড়খ-পদ্ম হন্তযুক্তা। বিভিন্ন প্রকার অলংকারে বিভূষিতা। তুলসী দেবী ভক্তদের সর্বার্থ সিদ্ধি প্রদান করে থাকেন।

ব”রূপে তুলসী বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকেন। কৃষ্ণবর্ণ, সবুজ বর্ণ, হরিৎ বর্ণ এবং মিশ্রিত বর্ণের ও দ”ষ্ট হয়। ব”রূপে অব¯ি’ত প্রতিটি পত্রে দ্বাদশার মহামন্ত্র বিরাজমান। প্রতিটি অরে ভগবান বিষ্ণুর সহ¯্র নাম বিরাজমান। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই মর্ত্য জগতে তুলসী দেবী কখনো শড়খচূড়ের প্রত্নীরূপে, কখনো জলন্ধরের পত্নীরূপে, কখনো ধর্ম দেবের পত্নীরূপে আবার কখনো বা ভগবান বিষ্ণুর নয়নের জল থেকে আবিভূতা হয়েছেন। তিনি সর্বদা কৃষ্ণ পরায়না ছিলেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে বর্ণনা করা হয়েছে- “পুষ্পেষু তুলনাপ্যস্যা নাসীদ্ দেবীষু বা মুনে পবিত্র রূপা সর্বসু তুলসী সা চ কীর্ত্তিতা” সমস্ত পুষ্প ও সমস্ত দেবীগণের মধ্যে যার তুলনা নেই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তুলসী ব্যতীত কোন ভোগবস্ত গ্রহণ করেন না। তাই উল্লেখ আছে “ছাপ্পান্ন ভোগ ছত্রিশ ব্যঞ্জন বিনা তুলসী প্রভু একোনাহিমানি। তুলসী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রাণপ্রিয়া অন্তরঙ্গা শক্তি।

ব্রহ্মবৈব্রর্ত্ত পুরানে প্রকৃত খন্ডে ত্রয়োদশ অধ্যায়ে মহর্ষি নারদ মুনি নারায়নকে বিনয়ের প্রশ্ন করেন সতী সাধবী তুলসীদেবী কিভাবে ভগবান নারায়নকে পতিরূপে লাভ করেন। তিনি কেন অসুর কর্তৃক গ্রš’া হন। তিনি কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেন, কে তার পিতা, মাতা, কোথায় তার জন্ম¯’ান। নারায়ণ বললেন- হে নারদমুনি দ সাবর্ণি নামে এক মনু ছিলেন। তাঁর পুত্র ধর্ম্ম সাবর্ণি, ধর্ম্ম সাবর্ণি পুত্র দেব সাবর্ণি, তাঁর পুত্র ব”ষধ্বজ। ব”ষধ্বজ শিব ভক্ত ছিলেন। তিনি বিষ্ণুকে মানতেন না। শিবের ভয়ে কেহ তাকে অভিশাপ দিতেন না। কিš’ সূর্যদেব রাজা ব”ষধ্বজকে “ভ্রষ্টশ্রীভব ভূপতি” তুমি শ্রীভষ্ট হও। এইভাবে অভিশাপ দেন। বৈকুণ্ঠে অর্ধ ঘটিকা সময়ে বিংশতি যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার কালে তাঁর ম”ত্যু হয়। ব”ষধ্বজ পুত্র ধর্ম্মধব। ধর্ম্মধব পত্নী মাধবী দেব পরিমাণ এক বছর কাল গর্ভধারণ করেন। মাধবী শুভণে, শুভলগ্নে, শুভদিনে, কার্তিক মাসে পূর্ণিমার তিথিতে শুক্রবার লক্ষ্মীর অংশরূপা এক সুমনোহর পদ্মিনী কন্যা প্রসব করেন।

তুলসী দেবী ভূমিষ্ঠ হয়ে উপযুক্ত স্ত্রীমত তপস্যার জন্য বদরে বনে গমন করে “মম নারায়ন স্বামী ভবেতেতি” নারায়ণ আমার স্বামী হোন। নিশ্চয় করে দৈবি পরিমাণে ল বৎসর কঠোর তপস্যা করেন। চল্লিশ হাজার বৎসর বায়ুভণ করে, দশ হাজার বৎসর অনাহারে থেকে তপস্যা করেন। তিনি গ্রীষ্মকালে পঞ্চতপা, শীতকালে আকণ্ঠ জলের মধ্যে এবং বর্ষাকালে বর্ষাধারা সহ্য করে এক পায়ে দ-ায়মান হয়ে তপস্যা করেন। ব্র্র্রহ্মা এসে তুলসীকে নিজের অভিলাষিত প্রার্থনা করতে বলেন। আমি শ্রীকৃষ্ণের গোপ ছিলাম। শ্রী রাধিকার অভিশাপে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করেছি। শ্রীকৃষ্ণের আদেশ অনুযায়ী আমি নারায়নকে স্বামীরূপে পেতে চাই। তাছাড়া আমি আপনার কৃপা প্রসাদে শ্রীকৃষ্ণকে অবশ্যই লাভ করবো। আপনি শ্রীমতি রাধিকার অভিশাপ হতে মুক্ত করে দেন। ব্রহ্মা রাধিকার ষোড়শারা মন্ত্র প্রদান করেন এবং রাধিকার স্ত্রোত্র, কবচ, পূজার বিধান পালন করেন। দ্বাদশ বৎসর ব্রতের অনুষ্ঠান করে সিদ্ধি লাভ করেন। ফলে রাধিকা ও শ্রীকৃষ্ণে প্রিয়া হন। ব্র্রহ্মা আরো বললেন শ্রীকৃষ্ণ হতে উৎপন্ন সুদামা নামে এক গোপ গোলক ধামে ছিল। সুদামা শ্রীকৃষ্ণের অংশস্বরূপ ও তেজস্বী। সেই সুদামা শ্রী রাধিকার অভিশাপে ভারতবর্ষে দানব বংশে “শড়খচুড়” নামে জন্মগ্রহণ করেছে। শড়খচূড় তপস্যা করে তোমাকে লাভ করবে। তুমি শড়খচূড়কে গ্রহণ কর। পরে তুমি নারায়নকে প্রতিরূপে গ্রহণ করবে। তুমি নারায়ণের অভিশাপ বসত: ব”রূপা তুলসী ব” হবে, বিষ্ণুর প্রিয়া হবে। কালক্রমে তোমার অভিশাপ বসত: নারায়ণ স্বে”ছায় পর্বত স”ষ্টি হবেন। এদিকে মহাযোগী পুরুষ শড়খচূড় মুনিবর জৈগিষব্যের নিকট কৃষ্ণমন্ত্র প্রাপ্ত হন এবং পুষ্করে সিদ্ধি লাভ করেন।

তুলসী ও শড়খচূড়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। তুলসীদেবী শড়খচূড়কে পরীা করার জন্য বলেন, কামিনী হরিভক্তি বিঘœ কারিণী, সংসারে বেঁধে রাখার রুজ্জু স্বরূপ। শড়খচূড় বললেন, হে দেবী- তুমি যে সব কথা বললে তার কিছু অংশ সত্য এবং কিছু অংশ সত্য নয়। স্বয়ং বিধাতা সকলেরই মহান স্বরূপ দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।

১। কৃত্যা রূপ, ২। বাস্তব রূপ। বাস্তব স্ত্রীরূপ প্রশংসনীয়, কৃত্যা স্ত্রীরূপ নিন্দনীয়। তুলসী বললেন, এরূপ বিদ্বান ব্যক্তি বিশ্ব মধ্যে প্রশংসার পাত্র। কামিনী নিজের কামনা অনুসারে এরূপ প্রিয় ব্যক্তিকে কান্ত করতে ই”ছা করে। সে সময় ব্রহ্মা শড়খচূড়কে গান্ধর্ব বিধানে তুলসীকে বিবাহ করতে আদেশ দিলেন। উভয়ের গান্ধর্ব বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর তাদের এক মন্বন্তরকাল অতিবাহিত হলো। সেই সময়ের মধ্যে শড়খচূড় দেব-গান্ধর্বাদী সকলকে শান্তি দান করতেন। শড়খচূড় দেবগনের পূূজা হোমাদি বিষয়, রাজ্য আশ্রয়াদ্দি কেড়ে নেন। শড়খচূড়ের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রথমে ব্রহ্মার কাছে গেলেন। তারপর শিবের কাছে গেলেন। শেষে ব্রহ্মা, শিব ও দেবগন বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুর নিকট উপ¯ি’ত হলেন। শ্রী হরিকে বিনয় সহকারে জগতের ব”ত্তান্ত জানালেন। তাঁহাদের কষ্টের কথা শ্রবণ করে ত্রিশূলসহ শিবকে ভারতে পাঠালেন। তিনি দেবতাগণকে বললেন, ত্রিশূূল দিয়ে শিব শড়খচূড়কে বধ করবে। আমি নিজে ব্রাহ্মণের বেশ ধরে শড়খচূড় যে কবজ দ্বারা প””থিবী জয় করেছে আমি তার কবজ হরণ করব। শড়খচূড়ের অবশ্যই ম”ত্যু হবে। ব্রহ্মা দানব শড়খচূড়কে বধ করার নির্দেশ দেন। শিব গান্ধব্ররাজ পুষ্পদন্তকে দূত করে শড়খচূড় নিকটে পাঠালেন। দূত গিয়ে শড়খচূড়কে বললেন, দেবতাদের রাজ্য ফিরাইয়া দিতে, অন্যথায় যুদ্ধ করতে বাধ্য হবেন। শড়খচূড় তুলসীকে সব কথা জানিয়ে উপদেশের ছলে বললেন- চন্দ্র, সূূর্য, গ্রহ, তারা প”থিবীসহ সবকিছু ণ¯’ায়ী। কিš’ একমাত্র সতত শ্রীকৃষ্ণের নাম এরূপ গুণ লীলা কীর্তন করো। সেই ব্যক্তি কালকে ও ম”ত্যুকেও জয় করতে পারে। তারপর শড়খচূড় ও তুলসী উভয়ই রত্ন মন্দিরে রাত যাপন করে শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করে স্নান করার পর তিলক আহ্নিকাদি করে শ্রীকৃষ্ণের বন্দনা প্রার্থনা সমাপ্ত করলেন। অনন্তর মঙ্গলময় দধি, ঘ”””ত, মধু ও খই দর্শন করলেন।

সুচন্দ্র পুত্রকে রাজন্দ্র পদে অভিষিক্ত করে রাজ্য, প্রজাগন ও সম্পদাদি সমর্পণ করে যুদ্ধ বিশারদ মহাবলকে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এক পে শিব, কালী, স্কন্দ ও অসংখ্য দেব সেনা অপরপে শড়খচূড় ও অসংখ্য দানব সেনাদল এর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হল। শড়খচূড় নিজেই অস্ত্র ব্যবহার না করে অন্যদের অস্ত্রে বাধাঁ দিতে ছিলেন। কালী প্রায় সমস্ত দানব গ্রাস করলেন। অবশেষে বিষ্ণু ব্রাহ্মণ বেশে শড়খচূড়ের গলার কবজ হরণ করেন। বিষ্ণু তুলসীকে শড়খচূড় বেশে যুদ্ধের অসত্য বিবরণ প্রদান করেন। তুলসী বিষ্ণুর সন্নিধানে আচরণের ব্যতিক্রম দেখে মনে মনে তর্ক-বিতর্ক করতে লাগলেন। অপরদিকে শড়খচূড় শিবের ত্রিশুলের আঘাতে ম”ত্যুবরণ করেন।

রাজা শড়খচূড় যখন শ্রীকৃষ্ণের চরণ কমলের ধ্যান মগ্ন ছিলেন। তখন শিব নিতি সেই শুল ঘুরতে ঘুরতে শড়খচূড়ের উপর পতিত হয়ে ম”ত্যুবরণ করেন। তারপর শড়খচূড় দ্বিভুজ, মুরলী-হস্ত, দিব্য গোপাল বেশ ধারণ করে গোলক হতে আগত রথে আরোহন করে গোলকে গমন করেন। শিব শুলের দ্বারা শড়খচূড়ের অ¯ি’ সমূূহ সাগরে নিপে করলেন। অ¯ি’ দ্বারা শড়খ জাতির স”ষ্টি হল। নানা প্রকার আকৃতি বিশিষ্ট শড়খ সদাই পবিত্র। শড়েখর জল দেব তার জন্য অতি প্রয়োজন। যেখানে শড়খ ধ্বনি হয় সেখানে লক্ষ্মী দেবী বিরাজ করেন। শড়খ¯œান দ্বারা বিধি অনুসারে যিনি স্নান করেন তিনি সর্বদা সমস্ত তীর্থই স্নান করেন।

সেই তুলসী তখন শারদীয় কমলতুল্য নয়নশোভিত নব নব শ্যাম সুন্দর দেবাদীদেব সনাতন পুরুষ নারায়ণকে দর্পণ করলেন। ভগবান নারায়নকে দর্শন করলেন। তুলসী নারায়ণকে দর্শন করে তুলসী দেবী কামবেসে মুর্জিত হয়ে পুনরায় চেতনা লাভ করে শ্রী হরিকে বললেন।

তুলস্যবাচ!-
হে নাথ। তে দয়া নান্তি পাষাণ সদ”শস্য চ।
ছলেন ধর্ম ভঙ্গেন মম স্বামী ত্বয়া হতঃ।।
পাষাণ সদ”শত্ত্বঞ্চ দয়াহীনো যতঃ প্রভো।
তস্মাৎ পাষাণরূপস্তুং ভুবি দেব ভবাধুনা।।

ব্রঃ বৈঃ পুঃ প্রকৃতি খ–২/২৩-২৪
অনুবাদঃ- তুলসী বললেন হে নাথ! আপনার দয়া নাই, আপনি পাষাণ-সদ”শ। আপনি ছলে আমার ধর্মভঙ্গ করে আমার স্বামীকে অন্যের দ্বারা বধ করিয়েছেন। প্রভো! যেহেতু আপনি পাষাণ-সদ”শ দয়াহীন, সেই হেতু হে দেব! আপনি ভূতলে পাষাণ হোন। যারা আপনাকে দয়ার সাগর বলে তারা ভ্রান্ত। যিনি আপনার ভক্ত, তাকে আপনি বিনা অপরাধে অপরের জন্য কেন বধ করলেন? আপনি সর্বত্মা ও সর্বজ্ঞ হয়েও পরের ব্যথা বুঝেন না। আপনি এক জন্মে আত্ম বিস্ম”ত হবেন (তুলসীর শাপে রাম অবতারে ভগবান আত্ম বিস্ম”ত হয়)। এ কথা বলে তুলসী বিষ্ণুর চরণতলে পরে রোদন করতে লাগলেন। তুলসীকে বিলাপ করতে দেখে ভগবান বিষ্ণু বললেন, সাধ্বি! তুমি ভারতবর্ষে আমাকে প্রতিরূপে লাভ করার জন্য দীর্ঘকাল তপস্যা করেছ এবং শড়খচূড়ও তোমাকে প্রাপ্ত হবার জন্য বহুকাল তপস্যা করেছে এবং পত্নীরূপে তোমাকে লাভ করে দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেছে। এখন তোমার তপস্যার ফল তোমাকে আমার দেওয়া উচিৎ। তুমি এই দেহ ত্যাগ করে দিব্য দেহ ধারণ করতঃ রাস মন্ডলে আমার সহিত বিহার করবে।

“শ্রীভগবানুবাচ-
ইয়ং তর্নুনদীরূপা গ-কীতি চ বিশ্রুতা।
পূতা সুপুণ্যদা নূনাং পুণ্যা ভবতু ভারতে।।
তব কেশ সমূহাশ্চ পুণ্যব”া ভবন্তি¡তি।
তুলসী কেশ সম্ভূতা তুলসীতি চ বিশ্রুতা।।”

ব্রঃ বৈঃ পুঃ প্রকৃতি খ-
অনুবাদঃ- ভগবান বললেন- তোমার এই দেহ নদীরূপ ধারণ করতঃ এই ভারতে গ-কী এই নামে মনুষ্যগণের পবিত্র পুণ্য দায়িনী নদী হোক। আর তোমার এই কেশ সমূহ পূণ্য তুলসী ব” রূপ ধারণ করে খ্যাতি লাভ করুক। তোমার পুষ্পা ও পত্র সমূহ পূজায় প্রশস্ত বলে পরিগণিত হবে। গোলোকে বিরজা নদী তীরে, রাসা মন্ডলে, ব”ন্দাবনের ভূমিতে তথা বিভিন্ন পবিত্র ¯’ানে পুণ্যদায়ক তুলসী ব” সকল উৎপন্ন হোক। পুণ্যদায়ক ও পুণ্য দেশে তুলসী তরুমূলে সমস্ত তীর্থ সমূহের অধিষ্ঠান হবে। শাস্ত্র প্রমাণে-প”থিবীতে সারে তিন কোটি তীর্থ আছে। তুলসী তরু মূলে সমস্ত তীর্থ বিরাজ করে। যে ব্যক্তি তুলসী পত্রের জলে অভিষিক্ত হবে সেই ব্যক্তি সমস্ত তীর্থে স্নান ও সমস্ত যজ্ঞে দীা গ্রহণের ফললাভ করবে। শ্রীহরিকে একটি মাত্র তুলসী পত্র দানে তাঁর যে সন্তোষ লাভ হয় সহ¯্র কলসী অম”ত দানে শ্রীহরির সে রূপ প্রীতি লাভ করেন না। ম”ত্যুকালে তুলসী জলপান সম্পর্কে বলা হয়েছে-

“তুলসী পত্র তোয়ঞ্চ ম”ত্যুকালে চ যো লভেৎ।
স মুচ্যতে সর্বপাপাদ বিষ্ণুলোকং স গ”ছতি।।
নিত্যং তুলসী তোয়ং ভুঙক্তে ভক্ত্ষা চ মানবঃ।
স এব জীবন্মুক্তশ্চ গঙ্গাস্নানং ফলং লভেৎ।।

তুলসী পত্র মিশ্রিত জল ম”ত্যুকালে পান করলে সমস্ত পাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করে। যিনি ভক্তি সহকারে নিত্য তুলসী মিশ্রিত জল পান করে সে গঙ্গা স্নান ফল লাভ করে ও সে ব্যক্তি জীবন্মুক্ত। যিনি দেহে তুলসী ধারণ করে তুলসী তীর্থে প্রাণত্যাগ করেন তিনি বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন। যে মানবতুলসী ধারণ করে মিথ্যা সপথ করে বা স্বীকার রণ করে না সে মানব চন্দ্র সূর্যের ¯ি’তি কাল পর্যন্ত নরক ভোগ করে। তুলসী পত্র চয়ন সম্পর্কে বলা যায় যে,

পূর্ণিমায়ামমায়াঞ্চ দ্বাদশ্যাং রবিসংক্রমে।
তৈল ভ্যঙ্গে চ স্নানে চ মধ্যাহ্নে নিশি সন্ধ্যয়োঃ।।
অশৌচেহ শুচিকালে বা রাত্রি বাসাহেন্বিতে নরাঃ।
তুলসীং যে চ বিচিম্ব তে ছিন্দন্তি হরেঃ শিরঃ।।

পূর্নিমা, অমাবস্যা, দ্বাদশী, রবিবার, সংক্রান্তী, স্নানের পূর্বে, তৈলমেখে, মধ্যাহ্ন। কালে, রাত্রি, উভয় সন্ধ্যায় অশৌচ কালে, অশুচি অব¯’ায়, রাত্রিবাস বস্ত্রযুক্ত হয়ে যিনি তুলসী পত্র চয়ন করেন তিনি শ্রী হরির মস্তক ছেদন করেন সতি তুলসী! তোমার পত্র বাসি হলেও সেই পত্র শ্রাদ্ধ, দান, ব্রতে শুদ্ধ বলে গণ্য হবে। তুলসী! তুমি স্বয়ং মহাসাধ্বী। তুমি আমার সন্নিধানে গোলোকে রাস ম-লে বিহার করবে।

আবার ভগবান বিষ্ণু বললেন- তুলসী! আমি স্বয়ং গ-কী নদীর তীরে তোমার অভিশাপে পর্বত রূপী হয়ে অব¯’ান করব। সেই ¯’ানে বজ্রকীট নামক কীট সকল বজ্র তুল্য দন্ত্য দ্বারা সেই শিলার অভ্যন্তরে আমার চক্র রচনা করবে। যে শিলায় একটি মাত্র দ্বারে চারটি চক্র ও একটি বনমালা অঙ্কিত থাকবে, সেই নবমেঘ তুল্য কৃষ্ণবর্ণ শালগ্রাম শিলার নাম লক্ষ্মী- নারায়ণ। যে শিলার একদ্বারে চারি চক্র, নবীন মেঘ সদ”শ কৃষ্ণ-বর্ণ এবং বনমালা রহিত, সেই শিলার নাম লক্ষ্মী- জনার্দ্দন। যে শালগ্রামে দুটি দ্বার চার চক্র, গোষ্পদ- চিহ্ন যুক্ত এবং বনমালা রহিত সেই শিলার নাম রঘুনাথ। যে শিলা আকারে অতি ুদ্র দুটি চক্র চিহ্ন যুক্ত এবং নুতন জলাধারের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ তার নাম দধি বামন। এই শিলা গ”হ¯’ গণের সুখপ্রদ। অতি ুদ্র্র দ্বিচক্র যুক্ত ও বনমালা ভূষিত শালগ্রাম শ্রীধর নামে খ্যাত। ব”হাদাকার দ্বিচক্র বিশিষ্ট গোলাকার শিলা দামোদর নামে খ্যাত। মধ্যমা কৃতি সপ্তচক্র যুক্ত, ছত্র ও তৃণচিহ্ন যুক্ত শাল গ্রাম রাজরাজেশ্বর নামে খ্যাত। ইহা রাজ্য সম্পদ দান করে। চৌদ্দচক্র যুক্ত ব”হদাকার কৃষ্ণবর্ণ শালগ্রাম অনন্ত নামে খ্যাত। ইহা চর্তৃবর্গ ফলযুক্ত। চক্রাকার, দ্বিচক্র বিশিষ্ট, শ্রীযুক্ত, মেঘবর্ণ ও গোষ্পদ চিহ্নিত মধ্যমাকৃতি শিলার নাম মধুসূদন। সুদর্শন চিহ্নসহ যে শিলা মাত্র একটি চক্রযুক্ত এবং গুপ্ত চক্র বিশিষ্ট তাঁর নাম গদাধর। অতি বিস্তৃত বদন, দ্বিচক্র যুক্ত ও বিকট দর্শন শিলার নাম নরসিংহ। এর পূজনে গ”হীগণের সুখ প্রদান করে। যার দ্বারদেশে দুটি চক্র এবং শ্রীচিহ্ন সমান ও পরিস্ফুট, সেই চক্রের নাম বাসুদেব। ইনি কামনানুসারে সর্ববিধ ফল প্রদান করেন। নবমেঘ তুল্য বর্ণ, সূক্ষ্মচক্র যুক্ত এবং শিলার দ্বারদেশে বহু ছিদ্রযুক্ত চক্রের নাম প্রদ্যুম। যে শিলায় পরস্পর সংলগ্ন দুটি চক্র এবং প”ষ্ঠদেশ অতি প্রশস্ত তার নাম সঙ্কর্ষণ। যে শিলা অতি ব্রত, দান, প্রতিষ্ঠা, শ্রাদ্ধ, দেবপপূজা – এই সমস্ত কার্য শালগ্রাম শিলার অধিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হলে অতি মঙ্গল জনক ফল লাভ হয়। চারিবেদ পাঠে এবং সকল তপস্যায় অনুষ্ঠানে যে পুণ্য লাভ হয়, কেবল শালগ্রাম শিলা পূজা করলে সে পূণ্য লাভ হয়ে থাকে। যিনি শালগ্রাম শিলা স্নানজল নিত্য পান করেন সেই মানব মহা পবিত্র ও জীবন্মুক্ত ম”ত্যুর পর হরি পদে গমন করেন। ম”ত্যুকালে যে ব্যক্তি এক শালগ্রাম শিলা জল প্রাপ্ত হন তিনি পাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করেন। শালগ্রাম শিলা স্পর্শ করে যিনি মিথ্যালাপ করেন বা আজ্ঞাপালনে অস্বীকার করেন তিনি গভীর নরকে প্রবেশ করেন। যে ব্যক্তি শালগ্রাম হতে তুলসীপত্র বিযুক্ত করেন পরজন্মে তার স্ত্রী বি”েছদ হয়। তুলসী, শালগ্রাম এবং শড়খ যিনি একত্রে ¯’াপন করেন, তিনি শ্রীহরির প্রিয় হন। ভগবান বিষ্ণু একথা তুলসীকে বলে বিরত হন। তুলসী তখন নিজের দেহ ত্যাগ করে দিব্যরূপ ধারণ করলেন এবং বিষ্ণুর সহিত বৈকুণ্ঠে গমন করলেন। এদিকে তুলসীর সেই পরিত্যাক্ত দেহ হতে তৎণাৎ “গ-কী” নামে এক নদী উৎপন্না হলো। এই গ-কী নদীর তীরে শ্রীহরির অংশে মনুষ্যগণের পুণ্যজনক এক পর্বত উদ্ভূত হলো। তখন হতেই উক্ত পর্বতে বজ্রকীটগণ বহুবিধ শালগ্রাম শিলা রচনা করছে। তার মধ্যে যে শিলা সমূহ গ-কী নদী জলে পতিত হয় সে সব শিলা মেঘের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ হয়। আর সে সমস্ত শিলা ¯’লেই থাকে সে সব শিলা সূর্যের তাপে পিঙ্গল বর্ণ হয়।
দেবর্ষি নারদ নারায়ণের কাছে তুলসীর ধ্যান, পূজা মন্ত্র ও স্তোত্র জানতে চাইলে নারায়ণ তা বর্ণনা করেন-

।। পাপ নাশন ধ্যান।।
“তুলসীং পুষ্পসারাঞ্চ সতীং পূজ্যাং মনোহরাম্।
কৃৎস্ন পাপেদ্ধদাহায় জ্বলদগ্নি শিখোপমাম্।।
পুষ্পেষু তুলনাপ্যস্যা নাসীদ্ দেবীষু বা মুনে।
পবিত্র রূপা সর্বাসু তুলসী সা চ কীর্ত্তিতা।।
শিরোধার্যাঞ্চ সর্বেসামীপ্সিতাং বিশ্বপাবনীম্।
জীবন্মুক্তাং মুক্তিদাঞ্চ ভজে তাং হরিভক্তিদাম্।।”

-ব্রঃ বৈঃ পুঃ প্রকৃতি খ- ২২/৪২-৪৪
অনুবাদঃ- পুষ্প সারা, পূজনীয়া, মনোহরা, সতীসাধ্বী তুলসীদেবী সমস্ত পাপ সমূহরূপ কাষ্ঠ দাহের জন্য জ্বলন্ত অগ্নিশিখাতুল্যা। হে মুনে। সমস্ত পুষ্প সমূহের মধ্যে এবং সমন্ত দেবীগণের মধ্যে এর কোন তুলনা নেই। সমস্ত দেবীগণের মধ্যে পবিত্র রূপা এই দেবীকে সেই কারণে তুলসী বলে বর্ণনা করা হয়। যিনি সকলের শিরোধার্যা ও প্রার্থনীয়া, জীবনমুক্তা, মুক্তদায়িনী এবং হরিভক্তি প্রদায়িনী আমি সেই বিশ্বপাবনী তুলসী দেবীকে ভজনা করি।

এক সময়ে সরস্বতী দেবী শ্রীমতী তুলসীর সাথে কলহ করলে শ্রীবিষ্ণুর সম্মুখেই তুলসী অন্তর্হিতা হন। বিষ্ণু তখন স্নান পূর্বক তুলসী বনে গমন করে উপরোক্ত তুলসীর ধ্যান করত তুলসী পত্রদ্বারা সতী তুলসীর পূজা করলেন। ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুষ্প, চন্দন, সিদুর, ঘ”ত ও অন্যান্য উপাচার দ্বারা তুলসী পূজার বিধান। পূজামন্ত্রঃ-

“লক্ষ্মী-মায়া-কাম-বাণীবীজ পূর্বং দশারম্।
ব”ন্দাবনীতি ভেস্তঞ্চ বহ্নিজায়ান্তমেব চ।।”

অনুবাদঃ- “লক্ষ্মী-মায়া-কাম-বাণী” এর বীজ চতুষ্টয়ের সাথে “ব”ন্দাবন্যে স্বাহা”
কৃষ্ণভক্তগণকে অভিষিক্ত কর; তোমার শ্রীচরণারবিন্দে নমস্কার করি।। ১ ।।

হে ব”ন্দে! তোমার বিম্ব-সদ”শ রক্তবর্ণ অধরোদগত ম”দু-মধুর হাস্য ও নাসিকাগ্রবর্তী মুক্তা-কান্তি দ্বারা ত্বদীয় বদন-ম-ল পরিশোভিত হয়েছে এবং তুমি বিচিত্র রত্নাভরণে সৌন্দর্য্যন্বিতা হয়েছ; তোমার শ্রীচরণ-পদ্মে নমস্কার করি ।। ২।।

হে ব”ন্দে! ব”ষভানুরাজ-নন্দিনী শ্রীরাধিকা নিখিল-বৈকুন্ঠ-সমূহের শিরোমণি ও অশেষ-গুণ-সমন্বিত পরম পবিত্র শ্রীকৃষ্ণ-ধাম শ্রীব”ন্দাবনে তোমাকে অধিকার- প্রদান করেছেন; তোমার শ্রীপাদপদ্মে নমস্কার করি।। ৩।।

হে ব”ন্দে! তোমারই আদেশে শ্রীব”ন্দাবনে পত্র, পুষ্প, ভ্রমর, ম”গ, ময়ুর শুক-সারী প্রভৃতি পশু-পীগণে ও চির- বসন্তে শ্রীকৃষ্ণের কেলিকুঞ্জ- সমূূহ বিভূষিত হয়ে পরম শোভা পেতেছে; তোমার শ্রীপদারবিন্দে প্রণাম করি।। ৪।।

হে ব”ন্দে! তোমার দূতীত্বের চাতুর্য্য- প্রভাবেই বিলাস-বাসনাময়ী শ্রীরাধা কৃষ্ণের কেলি- বিলাস সম্পন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ তুমিই দূতীরূপে শ্রীরাধা গোবিন্দের সুদুর্ঘট মিলন সম্পাদন করিয়ে তাদের লীলা- বিলাসের সহায়তা করে থাক; অতএব এ সংসারে তোমার সৌভাগ্যের সীমা বর্ণনা করতে কে সম হবে? তোমার শ্রীপাদপদ্মে নমস্কার করি।। ৫।।

হে ব”ন্দে! কৃষ্ণভক্তগণ তোমারই কৃপায় শ্রীরাসলীলা-দর্শনাভিলাষ শ্রীব”ন্দাবনে বাস ও ত্বদীয় প্রাণবল্লভ শ্রীরাধা-মাধবের চরণ-সেবা লাভ করে থাকেন; তোমার শ্রীপদ- কমলে নমস্কার করি।। ৬।।

হে ব”ন্দে! শ্রীনারদাদি-ভক্তগণ-বিরচিত তন্ত্র-সমূহে সুনিপুণ প-িতগণ তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের লীলা- শক্তি বলে বর্ণনা করেছেন এবং এই নরলোকে সুপ্রসিদ্ধ ব”- রূপিনী শ্রীতুলসীদেবী হলেন তোমারই মূর্তি; তোমার শ্রীচরণ- পঙ্কজে অভিবাদন করি।। ৭।।
শ্রীশ্রীব”ন্দা-তুলসীমহিমাম”ত।
হে কৃপাময়ি দেবি। আমরা ভক্তিহীন বলে শত শত অপরাধ প্রযুক্ত ‘ভব-সমুদ্রের কাম- ক্রোধাদি-রূপ ভীষণ তরঙ্গ-মধ্যে নিপ্তি হয়েছি; অতএব তোমার শরণাগত হলাম, তুমি কৃপা করে আমাদের এই সুদুস্তর ভব-জলধি হতে উদ্ধার কর; তোমার শ্রীচরণ-সরোজে নমস্কার করি।। ৮।।

যে ব্যক্তি বৃন্দাবনাধিপতি রাধা গোবিন্দের চরণ কমলের ভূঙ্গ স্বরূপ হয়ে শ্রীব”ন্দাদেবীর এই অষ্টক পাঠ বা শ্রবণ করেন, তিনি ব”ন্দাবনে নিত্য বাস প্রাপ্ত হয়ে শ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রেম সেবা লাভ করে কৃতার্থ হন।। ৯।।

“ব”ন্দাদেবী কবে মোরে বান্ধিয়া করুণা ডোরে, আকর্ষিয়া লবে ব্রজপুরে।।”

ক) তুলসীবন পূজা মাহাত্ম্যঃ-
শ্রীশ্রীহরিভক্তি বিলাসের নবম বিলাসে তুলসীবন পূজা মাহাত্ম্য সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। হরিভক্তিবিলাস ধ”ত অগস্ত্য সংহিতায় বলা হয়েছে- তুলসী রোপণ, সেবন, দর্শন ও স্পর্শ দ্বারা পবিত্রতা লাভ হয় এবং সযতেœ উপাসনা করলে যাবতীয় অভীষ্ট সিদ্ধ হয়। প্রতিদিন তুলসী প্রদণি করে প্রণাম করলে সকল পাপ ধ্বংস হয়। যে গ”হে প্রত্যহ তুলসী অর্চনা হয় তথায় যাবতীয় মঙ্গল পরিবর্ধিত হয়। কলিকালে শ্রীহরি তীর্থত্রে ও নিখিল ভূধর ত্যাগ করে একমাত্র তুলসী কাননেই নিত্য অধিষ্ঠান করেন। যিনি যথা বিধি তুলসীবন রোপণ করেন তিনি পরম পদ লাভ করেন। বিশেষতঃ শ্রবণা নত্র যোগে তুলসী রোপণ করা কর্তব্য, শ্রবণায় তুলসী রোপণ করলে রোপণ কর্তার সহ¯্র অপরাধ মা করেন। যে সমস্ত দেব মন্দির বা পুণ্য ভূমিতে তুলসী ব” রোপিত হয় সে সমস্ত ¯’ান শ্রীহরির তীর্থ স্বরূপ। চৈন্তা সংক্রান্তি হতে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত তুলসীতে জলধারা দান ও ছায়া দান করলে পরম গতিলাভ হয়।

একাদশী মাহাত্ম্যে বলা হয়েছে, যিনি যথা বিধি তুলসীবন রোপণ করেন, তার বংশে যারা ম”ত হয়েছেন, যারা বর্তমান আছেন এবং যারা ভবিষ্যতে জন্মগ্রহণ করবেন তারা সকলেই কল্পান্ত কাল পর্যন্ত শ্রীহরি গ”হে বাস করেন। যে ¯’লে বায়ু তুলসী গন্ধ বহন পূর্বক প্রবাহিত হয় তার চতুর্দিগন্ত সমস্ত জীবই শুদ্ধি লাভ করে। যে তুলসী বনে তুলসী বীজ পতিত হয় সেখানে পিতৃগণের উদ্দেশ্যে পি- দিলে সে পি- অয় হয়ে থাকে। প্রত্যহ তুলসী দর্শন, স্পর্শ, চিন্তন, কীর্তন, প্রণাম, গুণ শ্রবণ রোপণ, অর্চন ও সেবা করলে সকল পাপ ভস্মীভূত হয় এবং অন্তে শ্রীহরির ধামে বসতি লাভ হয়। বৈশাখ মাহাত্ম্যে বলা হয়েছে পুষ্করাদি তীর্থ, গঙ্গাদি নদী এবং ভগবান বিষ্ণু তুলসীদলে অধিষ্ঠিত থাকেন। যে গৃহে তুলসী সলিল দ্বারা সকলে অভিষিক্ত হয় যমদূতেরা সেই গ”হ সমীপ যেতে পারে না। হরিতকী ফল যেরূপ রোগশান্তি করে সেরূপ তুলসী বহুল দারিদ্র দুঃখ হারিণী। তুলসী সন্নিধানে দেহ বিসর্জন করলে তার হরি ধামে গতি হয়। প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে অপর দ্রব্য দর্শন না করে, প্রথমেই তুলসী দর্শন করলে তৎণাৎ তার দিবারাত্র কৃতপাপ বিনষ্ট হয়। যিনি তুলসী ব” রোপণ করেন তার পিতৃ মাতৃকূলের সপ্তকোটি পুরুষ হরিসন্নিধানে অব¯’ান করেন। তুলসীব”ে গ-ুষ পরিমানে জল প্রতিদিন সেচন করলে হরিসন্নিধানে বসতি লাভ হয়। কাষ্ঠ দ্বারা তুলসীর বনের চারিদিকে আবরণ দিলে আবরণ দাতা ত্রিকুল সহ ভগবৎ ধামে অব¯’ান করেন। প্রলয় কালীন অগ্নি যেমন নিখিল দ্রব্য ভস্মীভূত করে তদ্রূপ তুলসী মহিমা শ্রবণ, দর্শন, রোপণ, জল সেচন, প্রণাম দ্বারা অখিল পাপ দ” হয়। বুধবার ও শ্রবণা নত্রযুক্ত শুকা তৃতীয়াতে তুলসী রোপণ করলে তুলসীদেবী অতি পুণ্যদায়িনী হন।

খ) তুলসী দ্বারা অর্চন মাহাত্ম্যঃ-
শ্রীহরিভক্তিবিলাসের সপ্তম বিলাসে তুলসী দ্বারা অর্চনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হরিভক্তিবিলাস ধ””ত ব”হন্নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে- তুলসী বিহীন অর্চনা অর্চন নয়, তুলসী রহিত স্নান স্নান বলে গণ্য নয়, তুলসী হীন ভোজন ভোজন নয়, তুলসী রহিত পান পান বলে গণনীয় নয়। বায়ু পুরাণে লিখিত আছে জনার্দ্দন কদাচ তুলসী ব্যতীত অর্চন গ্রহণ করেন না। তুলসী পত্রের অভাব হলে তুলসী কাষ্ঠ ভগবানের অঙ্গে স্পর্শ করান উচিৎ। যদি তারও অভাব হয় তবে তুলসী নাম উ”চারণ করে জনার্দ্দনের অর্চনা করা কর্তব্য। যে ব্যক্তি তুলসী পত্র দ্বারা বিষ্ণু ব্যতীত অন্য দেবতার পূজা করে সে ব্যক্তি গোঘাতী, ব্রহ্মঘাতী, গুরুপত্নী গামীর তুল্য পাপী হয়।

বিষ্ণু রহস্যে লিখিত আছে- মনোরম মঞ্জরী বিশিষ্ট, অখ- হরিৎ বর্ণ তুলসী পত্র জনার্দ্দনকে অর্পণ করা কর্তব্য। কি কৃষ্ণ বর্ণ কি হরিৎ বর্ণ সমস্ত তুলসীই গোবিন্দের পছন্দ।

শ্রীকৃষ্ণস্যাপি লব্ধর্থং তুলসী সেবনং মতম্।।
দৃষ্টা স্পষ্টাথ বা ধ্যাতা কীর্ত্তিতা নামভিঃ স্তুতা।
রোপিতা সিঞ্চিতা নিত্যং পূজিতা প্রতি পালিতা।।
নবধা তুলসী ভক্তিং যে কুব্বন্তি দিনে দিনে।
যুগকোটি সহস্রাণি তে যান্তি সুকৃতং শুভে।।”

সখী চন্দ্রাননা বললেন- হে শ্রীমতী রাধে। শ্রীকৃষ্ণ লাভের জন্য আমার মতে, পরম সৌভাগ্য ও বরপ্রদ মহাপুণ্য তুলসী সেবা করা কর্তব্য। তুলসীর স্তুতি, রোপণ, সেচন, পালন, দর্শন, স্পর্শ, ধ্যান, কীর্তন, নিত্যপূজা- এই নয় প্রকার তুলসী- সেবা যে সকল মানব প্রতিদিন করেন তারা হরি ধামে সহ¯্র কোটি যুগ পর্যন্ত সুখভোগ করেন। যাদের রোপিত তুলসী ব”রে যত শাখা-প্রশাখা, বীজ- পুষ্প, পত্র বর্দ্ধিত হবে, ধরা তলে তাঁদের বংশে যাঁরা জন্মেছেন, যারা জন্মাবেন এবং যারা জন্মিয়া ম”ত হয়েছেন, কল্পান্ত সহ¯্র যুগ তাদের হরিগ”হে বাস হয়।

হে শ্রীমতী রাধিকে! সর্ববিধ পত্র পুষ্পে যে ফল লাভ হয় একটি মাত্র তুলসী দলে সর্বদা সেই ফল লাভ হয়। যে মানব তুলসী পত্র দ্বারা শ্রীহরির পূজা করেন। তিনি পদ্ম পত্রের জলেন ন্যায় পাপলিপ্ত হন না। হে রাধে। যার গ”হে তুলসীবন বিদ্যমান তার গ”হ তীর্থ স্বরূপ, সেখানে যমদূতগণ প্রবেশ করে না। যারা তুলসীবন রোপন করেন, তাদের যম দর্শন হয় না। তুলসী রোপণ, পালন, সেচন, দর্শন, স্পর্শ মানব গণের বাক্য, মন-কায় কৃত সমস্ত কলুষ তুলসী দেবী নাশ করেন। পুষ্করাদিতীর্থ, গঙ্গাদি নদী, ভগবান বাসুদেব তুলসীদলে বাস করেন। তুলসী যুক্ত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করলে শত পাযুক্ত ব্যক্তিও যমলোক দর্শন করে না। তুলসী তলে পিতৃ শ্রাদ্ধ করলে শ্রাদ্ধ দত্ত দ্রব্য অয় হয়। হে সখি! বিষ্ণুর অনন্ত মহিমার মত তুলসীর মহিমাও অনন্ত। তুমি নিত্য তুলসী সেবা কর, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ তোমার বশীভূত থাকবেন। শ্রীমতী রাধারাণী সখী চন্দ্রাননার কথা শুনে হরি সন্তোষ কারক তুলসী সেবন ব্রত আরম্ভ করলেন। কেতকী বন মধ্যে শত হস্ত সুবর্ভুল সুবর্ণ খচিত উ”চ ভিত্তির উপর তুলসী মন্দির নির্মিত হলো। পদ্মরাগ মণি দ্বারা মন্দির সোপান, হরিৎ বর্ণ হীরক দ্বারা ও মুক্তা দ্বারা প্রাচীর এবং মন্দিরের চতুর্দিকে চিন্তামণি মণিমন্ডিত তোরণ প্রস্তুত হলো। উ”চ তোরণের উপর সুবর্ণ ধ্বজ উত্তোলিত ও তা সুবর্ণ পতাকা যুক্ত হওয়ায় বৈজয়ন্তী মালার ন্যায় প্রতিভাত হতে লাগল।

শ্রীমতী রাধারাণী গর্গাচার্যকে আহ্বান করে তারই কথিত বিধানে অভিজিৎ নত্রে তুলসী মন্দির মধ্যে হরিৎ বর্ণ পল্লব শোভিত তুলসীব” ¯’াপিত করে তুলসী মহারাণীর সেবা করতে লাগলেন। শ্রীমতী রাধারাণী পরমভক্তি ভরে শ্রীকৃষ্ণ তোষণের জন্য আশ্বিন পূর্নিমা হতে আরম্ভ করে চৈত্র পূর্নিমা পর্যন্ত এই ব্রত পালন করলেন। দু”- ইু- দ্রাা- আ¤্ররস, শর্র্করা, মিশ্রি ও পঞ্চাম”ত দ্বারা মাসে মাসে প”থক প”থক স্নান করালেন। বৈশাখ মাসে শুকা প্রতিপদে উদযাপনের উদ্যোগ করলেন। রাধারাণী ছাপ্পান্ন প্রকার ভোজ্য এবং বসন ভূষণ দ্বারা দ্বিল ব্রাহ্মণের তৃপ্তি সাধন করে তাদের দনিা দান করলেন। লভার ¯’ল মুক্তা ও কোটিভার স্বর্ণ গর্গাচার্য্যকে দান করলেন। শতভার স্বর্ণ ও মুক্তা ভক্তিভরে প্রত্যেক বিপ্রকে দান করলেন। স্বর্গে দুন্দুভি বাদিত হলো, দেবগণ শ্রীমতী রাধারাণীর মন্দিরের উপর পুষ্প ব”ষ্টি করলেন। তখনই শ্রীমতী তুলসী দেবীর আবির্ভাব হলো। তিনি গরুড় প”ষ্ঠে উত্তম আসনে সমাসীনা, পদ্ম নেত্রা, শ্যাম বর্ণা, উজ্জ্বল মুকুট ও কুন্ডলে শোভিতা, পীত বসন ও বৈজয়ন্তী মাল্য ধারিণী। তুলসীদেবী গরুড় হতে অবতরণ করে শ্রীমতী রাধারাণীকে আলিঙ্গন করলেন।

শ্রীমতী তুলসীদেবী রাধারাণীকে বললেন- হে কলাবতী তনয়ে! তোমার ভক্তিতে আমি প্রসন্না হয়েছি এবং নিরন্তর তোমার বশীভূত আছি। তুমি লোক ব্যবহার সংগ্রহ করে সর্বসৌখ্য জনক এই ব্রত করেছ। তোমার মনোরথ সফল হোক। তুলসী মহারাণী যখন এরূপ বললেন তখন শ্রীমতী রাধারাণী প্রণাম পূর্বক তাঁর কাছে প্রার্থনা করলেন- “আমাকে এই বর প্রদান করুন যেন গোবিন্দ চরণে অহৈতুকী ভক্তি হয়।” তুলসী মহারাণী বললেন, তোমার এ প্রকার অভীষ্ট পূর্ণ হোক। এরূপ বর প্রদান করে তুলসী মহারাণী অন্তর্হিতা হলেন। আর শ্রীমতী রাধারাণীও প্রসন্ন হৃদয়ে স্বভবনে গমন করলেন। এ প্রকার আখ্যান থেকে আমরা জানতে পারি- কেহ যদি ঐকান্তিক ভাবে শ্রীমতী তুলসী মহারাণীর সেবা পূজাদি করেন তা হলে তুলসী মহারাণী তার সর্বাভীষ্ট পূর্ণ করেন।

লেখক: চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক।