‘সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জনগণ যেন সরিয়ে দিতে পারে সে সুযোগ রাখতে হবে’

সকল ক্ষমতার উৎস নয়, মালিক জনগণ। সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে দেশের মালিক জনগণ যেন তাকে সরিয়ে দিতে পারে, এমন সুযোগ রাখতে হবে। রাষ্ট্রচিন্তা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ‘আবুল মনসুর আহমদের রাষ্ট্রচিন্তা : প্রেক্ষাপট গণঅভ্যুথান’ বিষয়ে সোমবার (২ ডিসেম্বর, ২০২৪) দুপুর ২:৩০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক জনাব সলিমুল্লাহ খান এ কথা বলেন।

জনাব সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অজ্ঞান অবস্থায় আছে। যেটিতে বলা হয়েছে, সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। এখানে হওয়া উচিত ছিল জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। আর এটি না হওয়ার কারণেই প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি হচ্ছে। সরকার হয়েছে পাওয়ার অব এটর্নি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে আবুল মনসুর আহমেদ কিছু আপত্তি তুলে ধরেছিলেন তার বইয়ে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সেগুলো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠৈছে। শেখ মুজিব আবুল মনসুরকে সংবিধান সংশোধনের জন্য আহ্বান করেছিলেন। শেখ মুজিব কথা দিতেন কিন্ত কথা রাখতেন না। সংবিধান সংশোধনের কথাও তিনি শতভাগ প্রত্যাখান করেন। শেখ হাসিনার নৈতিক মৃত্যুদণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানের সাত নং ধারায় আওয়ামীলীগ সরকার একটি সংশোধন এনেছে যে, কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চাইলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ শাস্তি হাসিনারই প্রাপ্য। সে যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন, তার নৈতিক মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, মাননীয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আরিফ খান ও আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি সংসদের আহবায়ক কবি ইমরান মাহফুজ। অনুাষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও রাষ্ট্রচিন্তা এর উপদেষ্টা জনাব খ.আলী আর রাজী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য তানভীন কায়েস।

চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দীন খান ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও সময় নষ্ট না করে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পালন করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের ফলে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা ও রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ফিরিয়ে আনতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।

মাননীয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, আবুল মনসুর আহমদ রাষ্ট্র নির্মাণ করার জন্য যে পথ দেখিয়েছেন, তা আমরা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ’২৪ এর আন্দোলনেও ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন। তাই গণঅভ্যুথানের ফলে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ গঠন এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষ সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে আমরা কখনো বেঈমানী করতে পারবো না। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রত্যককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।

এ্যাডভোকেট আরিফ খান বলেন, দেশে অনেকগুলো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কথা বলতে চাই। ৭১ ও ২৪’র গণঅভ্যুত্থান দুটোই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলো। দুটোই গণসম্মতিতে হয়েছিলো। যেকোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গণসম্মতি প্রয়োজন হয়। গণসম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদের রাষ্ট্র বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দখল হয়ে গিয়েছিল। আমাদের তরুণরা সেখান থেকে দখলমুক্ত করেছে।

আবুল মনসুর আহমেদকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় সকলের ধর্মের স্বাধীনতা থাকতে হবে বলেছেন। ৭১ ও ২৪ এ আমাদের সংগ্রাম ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আবুল মনসুর আহমেদও সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব। বাঙালি মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময় কাজ করে গেছেন এ রাজনীতিবিজ্ঞানী।

কবি ইমরান মাহফুজ বলেন, আবুল মনসুরের লেখায় উঠে এসেছে। গণতন্ত্রে আমাদের শিক্ষকরা ফেইল করেছে বলেই আমাদের গণতন্ত্র ফেইল করছে। আবুল মনসুর বলেছেন, গণতান্ত্রিক সরকার সঠিক পথে চলতে পারে যদি তার নাগরিক সোচ্চার হয়। আমরা যদি সোচ্চার না হই, তাহলে শুধুমাত্র গণজাগরণ বা ২৪ আবু সাঈদের জীবন দেয়া পরিবর্তন এনে দিতে পারবে না।