জসিম উদ্দিন মনছুরি
প্রতিটি জনসংখ্যা নিয়েই দেশের জনসমষ্টি গণনা করা হয়। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় আঠারো কোটি কিবা তার কিছু বেশি। জনসংখ্যার চারটি মান নির্ধারণ করা হয়। ধনী বা উচ্চ আয়ের মানুষ, মধ্যম আয়ের মানুষ, নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি
১. অন্ন ২.বস্ত্র ৩.বাসস্থান ৪. শিক্ষা ও চিকিৎসা। ক্ষুধার জ্বালা মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয়। খাদ্য পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে। ক্ষুধার জ্বালা মানুষ বা প্রাণি কেউ সহ্য করতে পারেনা। যার জীনন আছে তার বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। মূলত খাদ্যই মৌলিক অধিকারের মধ্যে প্রথম স্থান। অন্যদিকে বস্ত্র ও বাসস্থান বিনে মানুষ চলতে পারেনা। সতর ঢ়েকে রাখা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। বাসস্থান বিনে কোন প্রাণীর অস্তিত্ব অকল্পণীয়। কবি জীবানন্দের ভাষায়
সব পাখী ঘরে আসে হারায় এ জীবনের লেনদেন থাকে শুধু অন্ধকার মুখামুখি বসিবার বনলতাসেন।।
মানুষ বা প্রাণি যেখানে যাক না কেনো সন্ধ্যায় নীড়ে ফিরে আসে। আপন ঠিকানায় ফিরে আসতে মানুষ বা প্রাণি অস্থির হয়ে উঠে। আপন ঠিকানা বা তার নীড়ই মূলত তার অস্তিত্বের জানান দেয়া।
শিক্ষা বিনে মানুষ পশুতুল্য। মানব কূলে জন্ম নিলে পরিচয়ের দিক দিয়ে মানুষ হওয়া যায়। কিন্ত মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায়না। শিক্ষা মানুষকে বিবেকবোধ জাগ্রত করে আলোর দিশা দেয়। আলোকিত সমাজ গঠনে আলোকিত মানুষের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ গঠন করা অসম্ভব। চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকার সব মানুষেরই রয়েছে। এই জন্য জন্মের পর পরই শিশুদের সাতটি টিকা দিয়ে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। যাতে কেউ চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত না হয়।
এবার আসা যাক ছিন্নমূল মানুষ বা পথ মানুষের কথা। রাস্তারধারে সাজ সকালে এই সব ছিন্নমানুষদের সারি সারি লাইনে দেখা যায়। এদের মধ্যে বানভাসি মানুষ, নদীভাঙা মানুষ,সহায় সম্বলহীন মানুষ। তাদের নেই বাসস্থান, খাদ্য ও চিকিৎসা। তাই তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে পেটের দায় সারে । শিক্ষার অভাবে তারা যে কোন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। পকেটমার, ছিনতাই, রাহাজানিসহ নেশাগ্রস্ত হয়ে নিন্দনীয় কাজে জড়িয়ে পড়ে। অনেককে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। শিশু-কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্করাও সহজ অবলম্বন হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেঁচে নেয়। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তির হার ও বেড়ে চলেছে। গ্রাম থেকে নগর প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্র অসংখ্য ভিক্ষুকের দেখা মেলে। তাদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই। রাস্তার ধারে ধারে মাচা বেঁধে পড়ে থাকে। নারী-পুরুষ একত্রে থাকার কারণে তাদের মধ্যে অনৈতিক চিন্তা চেতনাও বেড়ে যায়। পিতৃপরিচয়হীন অনেক শিশুরও জন্ম হয়ে থাকে। এসব মানুষেরা নিরুপায় হয়েই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।
ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূলে ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে করণীয় :
১. এসব অসহায় মানুষকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়।
৩. রাস্তার ধারের ফুটপাত একেবারে উচ্ছেদ করে রাস্তার প্রশস্ততা ফরিয়ে দিতে হবে।
৪. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে সুযোগ সুবিধা দিয়ে সুষম বন্টন ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. তাদেরকে শিক্ষার প্রতি আত্মসম্মানবোধে সচেতন করতে করে।
৬. ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. প্রয়োজনে কঠিন আইন প্রয়োগ করতে হবে।
৮. তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এককালীন সহায়তা কিংবা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. ভাসমান শিশুকে শিক্ষার প্রতি উদ্যোগী করতে ভ্রাম্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।
১১. সর্বোপরি সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদেরকে দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ। এদেশে এত ছিন্নমূল মানুষ থাকার কথা নয়। একটি সমৃদ্ধশালী ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গঠণে মৌলিক অধিকারের সফল বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ক্ষুধা নির্মূলকরণের মাধ্যমে বিশ্ব দরাবারে বাংলাদেশে মান উজ্জ্বল করতে হবে। যদি নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলেই কেবল সুখি ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠণে সহায়ক হবে।